ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্ররাজনীতি থাকবে কিনা এ প্রশ্নে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আলোচনায় ছাত্ররাজনীতির সংস্কার করে চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা। গতকাল উপাচার্যের লাউঞ্জে দুই দফায় এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে, ঢাবিতে ছাত্ররাজনীতি থাকবে কিনা, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে একটি আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান। গতকাল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি থাকবে কিনা সে বিষয়ে আমাদের একটি অফিসিয়াল বক্তব্য আমাদের উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়েমা হক বিদিশার মাধ্যমে যাবে। ডাকসুর বিষয়েও আলোচনা হয়েছিল। তবে আমাদের প্রধান চিন্তা এখন দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা; শ্রেণি কার্যক্রম চালু করা। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই সবাইকে ডেকে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রথম দফায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কাইয়ুম ও সাহিত্য সম্পাদক রেজাউল করিম শাকিল, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের আহ্বায়ক কমিটির সাজেদুল ইসলাম ও প্রজ্ঞা চৌধুরী, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আতিক চৌধুরী, নৃবিজ্ঞান বিভাগের নাইম উদ্দিন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আদনান আজিজ বৈঠকে অংশ নেন।
আলোচনা শেষে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, আমরা শুধু আলোচনা করেছি। এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে আমাদের প্রস্তাব ছিল আমরা রাজনীতি বন্ধ চাই না।
আমরা রাজনীতির সংস্কার চাই।
আমরা মেধার ভিত্তিতে ছাত্ররাজনীতি চাই। ছাত্ররা দেশ গড়বে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় আরেকটু স্থিতিশীল হলেই দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর পর দুপুর ২টায় দ্বিতীয় দফায় অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আলোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। রাজনীতি বন্ধের খবর ইচ্ছাকৃতভাবে মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছিল। তবে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে যে কীভাবে ছাত্ররাজনীতির সংস্কার করা যায়। বিগত বছরগুলোতে ছাত্রলীগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে ধরনের রাজনীতি দেখেছে সেটার কারণে তাদের মাথায় ছাত্ররাজনীতির একটি ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি হোক যেখানে গেস্টরুম প্রথা, হলের সিট দখল করা, চাঁদাবাজি থাকবে না। কীভাবে সব রাজনৈতিক দল সহাবস্থানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সুষ্ঠু রাজনীতির চর্চা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া শিগগিরই ডাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা হচ্ছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক খায়রুল আহসান মারজান বলেন, যেসব সিন্ডিকেট মেম্বার সাংবাদিকদের এই তথ্য দিয়েছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধ করা হচ্ছে তারা মূলত ফ্যাসিবাদের দোসর। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে এতে তারা সুবিধা লাভ করবে বিধায় তারা চেয়েছিলেন যেন ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করেনি। বিষয়টি নিয়ে কেবল সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা হয়েছিল। আমরা ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা করার ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে রাজনীতির সংস্কার করতে চাই যেখানে সব মতাদর্শের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারবে।