লেবাননে ব্যাপক হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এসব হামলায় নারী ও শিশুসহ ৩২০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ১ হাজার ২০০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রায় ৮০০ অবস্থান লক্ষ্য করে চালানো হামলায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিএনএনকে জানিয়েছেন, গতকাল ইসরায়েলি হামলায় লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাস আবিয়াদ বলেছেন, ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২১ শিশু ও ৩৯ নারী নিহত হয়েছে। এ অবস্থায় তুরস্ক গতকাল সতর্ক করেছে, লেবাননে ইসরায়েলের হামলা মধ্যপ্রাচ্যকে ‘বিশৃঙ্খলার’ গভীরে ঠেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। দক্ষিণ ও পূর্ব লেবাননে হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটিতে ইসরায়েলি হামলার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘লেবাননে ইসরায়েলের হামলা সমগ্র অঞ্চলকে বিশৃঙ্খলার দিকে টেনে নিচ্ছে।’
এদিকে এ সময় লেবানিজদের নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে হিজবুল্লাহর অবস্থান থেকে দূরে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রয়টার্স জানায়, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দাদের ফোনে এ-সংক্রান্ত সতর্কবার্তাও পাঠানো হয়। বার্তায় বলা হয়, হিজবুল্লাহ অস্ত্র লুকিয়ে রাখার জন্য যেসব আবাসিক ভবন ব্যবহার করেছে সেসব ভবন থেকে বাসিন্দাদের দূরে সরে যেতে বলা হচ্ছে। লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারি এটাকে মানসিক যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে লেবাননের টেলিকম কোম্পানি ওজেরোর প্রধান ইমাদ ক্রেইদিয়েহ রয়টার্সকে বলেছেন, সোমবার ৮০ হাজারের বেশি স্বয়ংক্রিয় ফোনকল ধরা পড়েছে। এগুলোকে মানুষের মনের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। এসব হামলার পরপরই লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি গতকাল পূর্ব ও দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি হামলাকে ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা বলে নিন্দা করেছেন। মিকাতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছিলেন, লেবাননে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসন একটা ধ্বংসের যুদ্ধ এবং লেবাননের গ্রাম ও শহরগুলোকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে একটি ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা। এ সময় তিনি ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে চুপ করে বসে নেই হিজবুল্লাহ। পালটা হিসেবে ইহুদি দেশটিতে ১০০টির ওপর রকেট ছুড়েছে শিয়া গোষ্ঠীটি। এ উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দুই দিনের জন্য সব স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে লেবাননের প্রশাসন। পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে কড়া বার্তাও। হিজবুল্লাহর ডেপুটি চিফ নাইম কাসেমের হুঁশিয়ারি, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াইয়ে নতুন ধাপে পৌঁছেছে আমাদের সংগঠন। ইসরায়েলকে এর দাম চোকাতে হবে।’ এ নতুন সংঘাতের জেরে লেবাননের সীমান্ত এলাকা থেকে ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘আর একটি গাজা হওয়ার পথে এগোচ্ছে লেবানন।’ একদিকে হামাসবিরোধী অভিযানের নামে গাজায় হত্যাযজ্ঞ জারি রেখেছে ইসরায়েল। এবার হিজবুল্লাহ ইস্যু নিয়ে লেবাননের ওপর চড়াও হয়েছে ইহুদি রাষ্ট্রটি।
ইসরায়েল এর আগে ১৯৮২ সালে লেবানন আক্রমণ করে। সে সময় লেবাননের প্রায় অর্ধেক ভূখ দখল করে নেয়। এর মধ্যে বৈরুত অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী, ডানপন্থি ইসরায়েল-মিত্র খ্রিস্টান লেবানিজ মিলিশিয়াদের সঙ্গে তাড়ানোর জন্য রাজধানীর পশ্চিম অংশ অবরোধ করে। এ সময়ে ইসরায়েলের হামলায় ১৭,০০০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। এটি এ অঞ্চলের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ঘটনাগুলোর একটি।