চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের জাহাজভাঙা শিল্পের আলোচিত ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী প্রকাশ ডিসকো শওকতের মালিকানাধীন ‘এসএন করপোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ড-এর কার্যক্রম বন্ধ রাখার লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এ নোটিস পাঠিয়ে ৭ সেপ্টেম্বর জাহাজভাঙার সময়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১২ জন শ্রমিক দগ্ধ হওয়ার ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ, হতাহতদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা খরচ এবং পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, এসএন করপোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে এর আগে ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ১৩ বার। এসব ঘটনায় প্রাণ হারায় প্রশিক্ষণবিহীন ১২ জন শ্রমিক ও আহত হয় ১৩ জন। একই ইয়ার্ডে বারবার এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে, প্রচলিত আইন ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে জাহাজভাঙা অব্যাহত রয়েছে।
বেলার নোটিসে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (ডিজি), বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক, বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং এসএন করপোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের স্বত্বাধিকারী শওকত আলী চৌধুরীকে বিবাদী করা হয়েছে।
লিগ্যাল নোটিসে বলা হয়, অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজভাঙা কার্যক্রমের দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেলা উচ্চ আদালতে বেশ কয়েকটি জনস্বার্থমূলক মামলা করেছে। যা চলমান মামলা হিসেবে আদালতে বিবেচিত রয়েছে। আদালত মামলার রায় ও আদেশের মাধ্যমে শ্রমিকদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলো যাতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সে বিষয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়। আদালতের সুস্পষ্ট রায় ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ৭ সেপ্টেম্বর জাহাজভাঙার সময়ে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১২ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। আহতদের ১২ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আটজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। দগ্ধ শ্রমিকদের শ্বাসনালিসহ শরীরের ২৫ থেকে ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। এসএন করপোরেশন শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ১৩ বার। এসব ঘটনায় প্রাণ হারায় প্রশিক্ষণবিহীন ১২ জন শ্রমিক ও আহত হয় ১৩ জন। একই ইয়ার্ডে বারবার এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে, প্রচলিত আইন ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে জাহাজভাঙা অব্যাহত রয়েছে।
নোটিসে বলা হয়, শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতকরণে মালিকপক্ষ কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মারাত্মক এ ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনোরূপ তদারকির ব্যবস্থাও নেই। এ ধরনের ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্তের বিধান থাকা সত্ত্বেও কমিটি পরিদর্শন/পর্যবেক্ষণ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না স্বাক্ষরিত নোটিস অব ডিমান্ড ফর জাস্টিসে দাবি করা হয়- এসএন করপোরেশনের জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে বন্ধ করে আদালতের নির্দেশ এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা তদন্তসাপেক্ষে জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের সব ছাড়পত্র, লাইসেন্স ও অনুমোদন বাতিলের দাবি জানাচ্ছে।