রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার তৃতীয় দফায় সংলাপে বসবে আগামীকাল। দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি দিয়েই শুরু হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের এ পর্বের আলোচনা। এদিন বেলা আড়াইটায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। সরকারের অন্য উপদেষ্টারাও উপস্থিত থাকবেন। বিএনপি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রতিনিধি দলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ও সিনিয়র নেতা থাকবেন। তাদের নাম আজকের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কাল বেলা আড়াইটায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠক শুরু হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই দফা আলোচনা করেছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির তৃতীয় দফা সংলাপ।
বিএনপি ছাড়াও কাল অন্যান্য দলের সঙ্গে সংলাপ করবেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদেরও এদিন সংলাপের জন্য পৃথকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গতকাল সকালে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সকে এ বৈঠকের কথা জানিয়েছেন। শনিবার বিকাল ৪টায় বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সিপিবিকে। এ ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আজকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাঁরা প্রধানত রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করবেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বুধবার সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, প্রধান উপদেষ্টা শনিবার থেকে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। সেখানে সরকারের অন্য উপদেষ্টারাও উপস্থিত থাকবেন। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ইতোমধ্যে দুই দফায় উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সভা হয়েছে। তারই চলমান প্রক্রিয়ায় কাল থেকে আবারও নতুন দফায় আলোচনা শুরু হবে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ আলোচনা হবে। এ আলোচনার মুখ্য বিষয় হবে ছয় সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে দলগুলোকে অবহিত করা। এ ছাড়া দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ নেওয়া হবে। খুব শিগগিরই সংস্কার কমিশন গঠিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছিলেন। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। আর সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে ইতোমধ্যেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।