ইরানের বিরুদ্ধে যে কোনো পাল্টা হামলা চালালে পরিণতি হিসেবে ইসরায়েল ও তার মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অপ্রচলিত অস্ত্রের’ মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। ইরান বলেছে, আঘাত হানার জবাব হিসেবে এবার তাদের জন্য ‘অপ্রচলিত প্রতিক্রিয়া’ ডেকে আনবে। বৃহস্পতিবার কাতারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে এ হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, অপ্রচলিত অস্ত্র বলতে পারমাণবিক, রাসায়নিকসহ বিভিন্ন অস্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। সূত্র : আল জাজিরা, পার্স টুডে, রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি।
ইরানি এক কর্মকর্তা বলেছেন, ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নতুন উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রকে এ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তেহরান বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে যে, একতরফা সংযমের সময় শেষ হয়েছে এবং তা আমাদের (ইরানের) জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে বার্তায় এও উল্লেখ করা হয়, ইরান কোনো আঞ্চলিক যুদ্ধ চায় না। ইরানি কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তায় ইরান বলেছে, ইসরায়েলের অবাধ উন্মত্ততা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ইসরায়েল বর্তমানে দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান পরিচালনা করছে এবং বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। এই হামলায় এরই মধ্যে সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইরান আঞ্চলিক যুদ্ধ চায় না। তবে ইসরায়েল তাদের ধৈর্য পরীক্ষা করে যাচ্ছে। কোনো যুদ্ধ চায় না বললেও, ইরান যুদ্ধের ভয়ও পাচ্ছে না। ইরানের ধৈর্যেরও একটা সীমা রয়েছে এবং ইসরায়েল আরেকটি হামলা করলে এর ফলাফল হবে কঠোর। ইরান এখন আর চুপ করে বসে থাকবে না, কারণ তাদের ধৈর্য শেষের পথে। এ বিষয়ে সামরিক বিশ্লেষক এলিয়াহ ম্যাগনিয়ার বলেন, ইরানের সামনে এখন দুটি পথ খোলা- হয় তাদের মিত্রদের পরাজিত হওয়ার অপেক্ষা করা, নয়তো এখনই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। ইসরায়েলের আর কোনো হামলা সহ্য করবে না ইরান। কারণ তারা মনে করে ইসরায়েল দুবার হামলা করেছে, এখন ইরানও দুবার প্রতিশোধ নিয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। ইরানের বার্তা স্পষ্ট : ইসরায়েল নতুন কোনো হামলা করলে তার প্রতিক্রিয়া হবে অপ্রচলিত। এতে পুরো অঞ্চলে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
লেবাননে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা : লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। গতকাল ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ২৪ ঘণ্টায় তারা প্রায় ১০০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলি বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের সময় সংঘর্ষে এসব যোদ্ধারা প্রাণ হারিয়েছেন। দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন গ্রামে পরিচালিত অভিযানে হিজবুল্লাহর ফেলে যাওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার এবং গোলাবারুদসহ অস্ত্রের মজুতও পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি ১৮৮তম আর্মার্ড ব্রিগেডের সেনারা একটি গ্রাম থেকে এগুলো উদ্ধার করে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তাদের বিমান দক্ষিণ লেবাননে এবং অস্ত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও নজরদারি পোস্টসহ ২০০টি হিজবুল্লাহ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। বিনতে জবিলের পৌরসভা ভবনে হানা আঘাতে প্রায় ১৫ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। পরে বিমান ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত যৌথ অভিযানের সময় তিন হিজবুল্লাহ কমান্ডারের একটি আবাসন কাঠামো ধ্বংস করা হয়। অপর দিকে ইরানপন্থি হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী বলেছে, তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই দিনে ইসরায়েলের ২০ সেনা আহত বা নিহত হয়েছে। যোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে নতুন করে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ইসরায়েলের দখলদার সেনারা। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের গোলানি সামরিক ব্রিগেডকে লক্ষ্য করে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা বড় রকমের হামলা চালায় এবং সেখানে বহু সেনা হতাহত হয়েছে। এসব সেনাকে হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেয় ইসরায়েল।
হিজবুল্লাহ বিবৃতিতে বলেছে, গতকালও ভোর থেকে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধারা দক্ষিণ লেবাননের একাধিক ফ্রন্টে অগ্রসর হওয়ার জন্য ইসরায়েলি এলিট বাহিনীর প্রতিটি প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করেছে। এ সময় ইসরায়েলি সেনাদের সামরিক সরঞ্জাম এবং কর্মীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাইফাতে ২০টি রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ জানায়, তারা এদিন দিনের বেলায় কিছু সীমান্তবর্তী গ্রামে অগ্রসর হওয়ার জন্য ইসরায়েলি কমান্ডোদের প্রচেষ্টা প্রতিহত করেছে। তারা সীমান্তের অন্য দিকে ‘শত্রু জমায়েত’ এবং বাড়িগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে এবং উত্তর ইসরায়েলের ভিতরে রকেট নিক্ষেপ করে যাচ্ছে। গতকাল সারা দিনে ইসরায়েলি ভূখন্ডে ২৩০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।