পাড়ার মোড়ে মুদি দোকান দিয়ে চলত সংসার। হঠাৎ বদলে যেতে থাকল সবকিছু। মুদি দোকান থেকে দালানবাড়ি, গাড়ি। চালচলনে আভিজাত্য। যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে গেছেন রাজশাহীর কাশিয়াডাঙ্গার মোখলেসুর রহমান মুকুল। দেশে ও বাইরে গড়েছেন বিপুল সম্পদ। ৫ আগস্টের পর থেকে আত্মগোপনে অপসারিত মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের ঘনিষ্ঠ এ মুকুল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুকুলের রাজশাহী এবং ঢাকায় চারটি বাড়ি আছে। এ ছাড়া কাশিয়াডাঙ্গায় শত কোটি টাকা মূল্যের সাত তলা আবাসিক ভবন আছে। আছে দুটি দামি গাড়ি এবং অন্তত ৪০ বিঘা জমি। এর মধ্যে রাজশাহী শহরেই আছে অন্তত ২০ বিঘা। যার আনুমানিক মূল্য ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজশাহী সিটি বাইপাস গরুর হাটেও আছে মুকুলের বড় অঙ্কের শেয়ার। শুধু দেশেই নয়, বাইরে সৌদি আরবেও আছে মুকুলের হোটেল ব্যবসা। সেখানে দুটি আবাসিক হোটেল কিনেছেন। একটি মক্কায়, অন্যটি মদিনায়। সৌদি আরবে হোটেল কেনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। তবে মাস তিনেক পর আবারও এলাকায় ফিরে আসেন। এরপর নাম লেখান ঠিকাদারি ব্যবসায়। সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুকুল রাজশাহী সিটি করপোরেশনে অন্তত ৪০০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়েছেন গত তিন বছরে। এর মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহীর বন্ধগেট-সিটি বাইপাস রোডের কাজটি করেছেন তিনি। রাহাত আলী নামে এক ঠিকাদার জানান, যে টাকায় কাজটি করেছে মুকুলের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, তাতে অন্তত ২০ কোটি টাকা লোকসান হবে। কিন্তু অবৈধ টাকা সাদা করতেই মুকুল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজ বেশি দামে কিনে করতে থাকেন। গত তিন বছরে এমন অন্তত ৪০০ কোটি টাকার কাজ করেছে সিটি করপোরেশন। দেশের অন্য জেলাগুলোতেও আছে তাঁর নেটওয়ার্ক। শুধু সিটি মেয়র নন, মাস চারেক আগে মুকুল রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাবেক এমপি আসাদুজ্জামান আসাদকে একটি গাড়ি দেন। অভিযোগ আছে, পবা ও গোদাগাড়ীর দুটি বালুঘাট কম মূল্যে পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওই গাড়িটি উপহার দিয়েছিলেন এমপি আসাদকে। যদিও আসাদের দাবি, গাড়িটি তিনি কিনেছিলেন। ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের স্পেশাল ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট শাখা রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে গড়ে ওঠা হুন্ডি ও মাদক কারবারিদের একটি তালিকা করে। ওই তালিকায় থাকা চোরাকারবারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুকুল। তাঁর সঙ্গে ভারতের অন্যতম চোরাকারবারি এনামুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এনামুলের ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে মুকুলের বিরুদ্ধে। কয়েক দফায় ভারতীয় নাগরিক এনামুলের লোকজন মুকুলকে খুঁজতে রাজশাহী আসেন। ভারত সরকার একসময় নগদ টাকা ধরপাকড় শুরু করলে এনামুল ১ হাজার কোটি রুপি পাঠিয়েছিলেন মুকুলের কাছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অর্ধেক এনামুলকে ফেরত দেন। বাকিটা নিজের কাছে রেখে দেন মুকুল। সেই পুঁজিতে মুকুল এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। ২০১৮ সালে করা দেশের হুন্ডি ব্যবসায়ীদের তালিকায় দ্বিতীয় নামটি ছিল মুকুলের। আমদানি-রপ্তানির জন্য মুন এন্টারপ্রাইজের নামে মুকুল বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মুকুলের তেমন কিছুই ছিল না। এখন তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কয়েক দফা মোখলেসুর রহমান মুকুলকে কল করা হলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকটি প্রশ্ন লিখে মেসেজ করা হলেও রেসপন্স করেননি।