জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, মতলববাজরা মালিক-শ্রমিকের মাঝে সংঘর্ষ বাধিয়ে রাখে। যদি উদ্যোক্তা, মালিক না থাকে, আমাদের শ্রমিকরা কোথায় কাজ করবে। শিল্প যদি না বাঁচে, আমার কর্মসংস্থান কোথায় হবে। যারা সমাজের দুশমন, তারাই শিল্প ধ্বংস করতে চায়। তারা শ্রমিকদের আবেগ উসকে দিয়ে রাস্তায় নামায়। মরে শ্রমিকরা, ঘরে বসে বেনিফিট নেয় তারা। কিছু মালিক আছেন তারা চান শ্রমিকদের শুধু ঘাম নয়, পারলে রক্তটাই নিয়ে নেয়- এটা অন্যায়। মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন- শিল্প তারা বাঁচাবে, আপনি তাদের বাঁচতে দিন। আপনি তাদের সম্মান করবেন, তারা সব শক্তি উজাড় করে আপনাকে সবকিছু বিলিয়ে দেবে। শিল্পের উন্নতি হবে, তাদেরও উন্নতি হবে। আমরা ওই রকম বৈষম্যহীন একটা সমাজ চাই।
ডা. শফিকুর রহমান গতকাল সকালে ঐতিহাসিক রাজবাড়ি মাঠে গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহত পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যকালে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন সরকারি-কর্মকর্তা-কর্মচারী রাষ্ট্রের সেবক। তিনি দল, গোষ্ঠী কিংবা ব্যক্তির সেবক নন। আমরা এমন কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী আগামীতে দেখতে চাই না, যাদের বাধ্য করা হবে রাষ্ট্র জনগণ বাদ দিয়ে গোষ্ঠীর পূজা করার জন্য। এমন একটি দেশ আমাদের সবার কামনা। সেই দেশটা আমাদেরই গড়তে হবে, ইনশাআল্লাহ। সাড়ে ১৫ বছর ইতিহাসের বর্বরতম নির্যাতন চালানো হয়েছে জামায়াতে ইসলামের ওপর। এক দুই করে ১১ জন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। জুলুম করে বিচারিক হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। অধ্যাপক গোলাম আযম থেকে শুরু করে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সবশেষ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী- যাদের হত্যা করা হয়েছে, আমরা দেখতে চাই এই জগতে সেই হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। হত্যার পরিকল্পনাকারী, মাস্টারমাইন্ড, হত্যা বাস্তবায়নকারী, আদালতে বসে যারা ‘দুষ্ট রায়’ দিয়েছে তারা, যারা মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছে তারা, ইনভেস্টিগেশন করতে গিয়ে যারা নাটক বানিয়েছে তারা, এদের কেউ যেন সেই অপরাধ থেকে রেহাই না পায়।’ তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবার থেকে কমপক্ষে একজনকে যেন এই সরকার সম্মানজনক চাকরি তাদের হাতে তুলে দেয়। লড়াই করে যারা আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে তাদেরও যেন সম্মানজনক চাকরি দেওয়া হয়। তারা যেন আজীবন কারও করুণার পাত্র হয়ে না থাকে। তার যোগ্যতার বলেই যেন সে পরিবারকে আল্লাহর সাহায্য নিয়ে সামলাতে পারে। আশা করব সরকার আমাদের এই দাবির প্রতি তারা সম্মান প্রদর্শন করবে। তিনি বলেন, এরা পরিবারে চাকরি পাওয়ার জন্য অথবা কারও একটু সহযোগিতার জন্য লড়াই করেনি। এরা নিঃস্বার্থ লড়াই করেছে জাতিকে সম্মানিত করার জন্য। জাতির দায়িত্ব এখন এই পরিবার এবং ব্যক্তিদের সম্মানিত করা।’ জাতির সেবক হয়ে গাদ্দারি করলে কী পরিণতি হয় তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতির সঙ্গে গাদ্দারি করলে, জাতির সেবক হয়ে আসার ঘোষণা দিয়ে মালিক বনে গেলে কী পরিণতি বরণ করতে হয়- এ থেকে আমি, আমরা এবং সারা দেশবাসী যেন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। যদি আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি, আমরা বিশ্বাস করি, আগামীতে আর কোনো নব্য স্বৈরাচারের জন্ম হবে না। যারা ক্ষমতায় থাকাবস্থায় জনগণের অর্থে কেনা অস্ত্র আর বুলেট জনগণের বুকে ছোড়ার দুঃসাহস করবে, এমন কারও জন্ম হবে না। এমন কোনো সন্ত্রাসী সরকার দেখতে চাই না।’ কোনো দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে আর দেখতে চাই না- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কোনো দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে আর দেখতে চাই না। যারা বিবেকের আমানত রক্ষা করতে পারবে, তাদেরই আমরা বিচারকের সম্মানিত আসনে দেখতে চাই। আমরা ন্যায় বিচার চাই। যারা যেখান থেকে এই জাতির ওপর জুলুম করেছেন, তাদের সবার বিচার এই জাতি দেখতে চায়।’
তিনি শহীদদের স্বজনদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আমাদের অহংকারের পাত্র, আমাদের মর্যাদার পাত্র, আমাদের সম্মানের পাত্র। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাব- তাদের সঠিক স্বীকৃতি যেন দেওয়া হয়। পাঠ্যপুস্তক কারিকুলামে আগামী দিনের নাগরিকরা যেন জানে যে, তাদেরও আবু সাঈদ, মুগ্ধ, রিয়ারা ছিল। এই গাজীপুরের শহীদরা ছিল, সারা বাংলার শহীদরা ছিল। এটা যেন তারা জানে।’
গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক মুহা. জালাল উদ্দীনের আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান, জামায়াতের অঞ্চল টিম সদস্য (ঢাকা অঞ্চল উত্তর) আবুল হাসেম খান, গাজীপুর জেলা আমির ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর নায়েবে আমির মুহাম্মদ খায়রুল হাসান, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি হোসাইন আলী ও আফজাল হোসাইন, গাজীপুর মহানগর সেক্রেটারি আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক, গাজীপুর মহানগর প্রচার সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন আইউবী, ছাত্রশিবির নেতা আবু হানিফ প্রমুখ। মতবিনিময় সভার শুরুতে জামায়াতের আমির শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। অনুষ্ঠানে জামায়াত শিবিরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।