মিয়ানমার নৌবাহিনীর সদস্যরা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বাংলাদেশি জেলেদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে। তারা ধাওয়া দিয়ে ছয়টি ট্রলারে থাকা ৪৭ জেলেকেও আটক করে নিয়ে যায়। বুধবার বাংলাদেশি সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে এ ঘটনা ঘটানো হয়। মিয়ানমার বাহিনীর গুলিতে একজন জেলে নিহত এবং আরও দুজন আহত হয়েছেন। গতকাল আটক করা জেলেদের ছেড়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন ট্রলারের জেলে মোহাম্মদ ওসমান (৬০) নিহত হয়েছেন। তিনি শাহপরীর দ্বীপ কোনারপাড়ার বাসিন্দা। অন্য দুই গুলিবিদ্ধ জেলে ফজল আহমদ রাজু ও মোহাম্মদ রফিক।
ট্রলার মালিকরা জানিয়েছেন, দুপুরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের মৌলভীর শিল নামে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এ ঘটনা ঘটে। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বাংলাদেশি ছয়টি ট্রলারে গুলি চালিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী। ধরে নিয়ে যাওয়া অন্য পাঁচটি ট্রলারের মালিক হলেন শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রীপাড়ার মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান (তাঁর ট্রলার দুটি), মৃত আলী হোছনের ছেলে আবদুল্লাহ, তাঁর ভাই আতা উল্লাহ, উত্তরপাড়ার ছৈয়দ মাঝির ছেলে মো. আছেম। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী জানিয়েছেন, দুপুর আড়াইটায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমারের মধ্যবর্তী বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের মাছ ধরার নৌকায় মিয়ানমার নৌবাহিনী গুলি করে এবং ছয়টি বোট জেলেসহ আটক করে। গুলির ঘটনায় একজন নিহত এবং দুজন আহত হয়েছেন। জেলেদের পরিবারের সদস্যরা গতকাল সকালে বিষয়টি জানান। পরে মিয়ানমার নৌবাহিনী বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে একটি ট্রলারসহ জেলেদের হস্তান্তর করে। আড়াইটার দিকে নিহত জেলের লাশ ও ১১ জন জেলে নিয়ে একটি ট্রলার শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে ফিরেছে। পরে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ছয়টি ট্রলারসহ ৪৭ জেলেকে আটকে রেখেছিল।
ট্রলার মালিক সাইফুল জানিয়েছেন, সাগরে মাছ ধরার সময় হঠাৎ মিয়ানমার নৌবাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া করে গুলিবর্ষণ করে। এরপর ছয়টি ট্রলারসহ মাঝিমাল্লাদের ধরে মিয়ানমারে নিয়ে যায়। যেখানে তার মালিকানাধীন ট্রলারে গুলিবিদ্ধ তিনজনের মধ্যে একজন মারা যান। গতকাল ওই ট্রলারটি ছেড়ে দিয়েছে। নিহত এবং আহত জেলেদের নিয়ে ট্রলারটি শাহপরীর দ্বীপে এসে পৌঁছে আড়াইটায়। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মিয়ানমার নৌবাহিনীর হাতে আটক পাঁচটি ট্রলার ফিরে এসেছে। এসব ট্রলারে কেউ হতাহত হয়নি। পরে তারা নিজ পরিবারে ফিরে যান। টেকনাফে দায়িত্বরত নৌপুলিশের উপপরিদর্শক আবুল কাসেম জানান, সাগরে গুলিতে নিহত জেলের লাশ কোস্টগার্ডের পক্ষে হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হচ্ছে।