জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, বাড়েনি সাধারণ মানুষের আয়। প্রতিদিন রান্নাঘরে যেসব উপকরণ দরকার, তার প্রায় সবকিছুরই দাম বেড়েছে। ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। রাজধানীর বাজারে ১০০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি। সরকার নির্ধারিত তিন পণ্যের দাম বাজারে বাস্তবায়ন নেই। আর এতে নাভিশ্বাস উঠেছে সীমিত আয়ের মানুষের। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের বসতে হবে। বিনা কারণে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সবার সহযোগিতা নিয়ে বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়তি। ১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ী সংগঠনকে নিয়ে বসা। আমরা ইতোপূর্বে এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং বাণিজ্য সচিবকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসার জন্য বলেছি। বাজার নিয়ে বসা দরকার। ব্যবসায়ীরাও যেন বাজার নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেন। সব ডকুমেন্ট ঠিক থাকলে যেন ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়টি দেখতে হবে। এ ছাড়া আমাদের সাপ্লাই চেইন যেন ব্যাঘাত না হয় সে বিষয়ে দেখতে হবে। বাজারে বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি এসব বলে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসব অজুহাত বন্ধ করতে হবে।
গতকাল রাজধানীর খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম ২০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখির কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, পটোল ১০০-১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ১০০-১২০ টাকা, বরবটি ১৪০-১৫০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দল ১২০ টাকা, চিচিঙ্গা ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙ্গা ১২০ টাকা এবং শসার কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১২০ টাকা, চালকুমড়া ৮০ টাকা এবং মিষ্টিকুমড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলার হালি ৬০-৮০ টাকা আর লেবুর হালি রাখা হচ্ছে আকারভেদে ৩০ থেকে ৬০ টাকা।
কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহ কম থাকায় কাঁচা মরিচের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। বাজারে শীতকালীন সবজি শিম ৪৮০ টাকা কেজি, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা। শাকের আঁটি মিলছে না ২০ টাকার নিচে। বাজারে লালশাক ২৫ টাকা আঁটি, লাউশাক ৫০-৬০ টাকা, মুলা শাক ২৫ টাকা, কলমি শাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ৫০ টাকা এবং ডাঁটা শাকের আঁটি ৩০ টাকা বিক্রি করতে দেখা গেছে। ধনে পাতার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। দেশি পিঁয়াজ ১২০ টাকা, আদা ৩২০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা এবং পুরান আলু কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রতি ডজন ডিম ১৪২ টাকা ও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৯ টাকা কেজি দরে নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু রাজধানীর বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগি। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম আছে কেবল কাগজে-কলমে। গত সপ্তাহের মতোই ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে সোনালি মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার লাল মুরগি ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে ফার্মের মুরগির এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। এসব বাজারে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি ১১০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ। এসব বাজারে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা এবং ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ১ কেজি চাষের শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১৪০০ টাকায়, বোয়াল মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, পোয়া মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কই মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচমিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১২০০ টাকা, বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় মাছ ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা এবং কাকিলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুলতানা আক্তার বলেন, আমি বনানী বাজারে মনিটরিংয়ে দেখছিলাম অভিযানের সময় কম দামে বিক্রি করছে। রসিদ দেখিয়ে এর থেকেও কমে বিক্রি করছে। অথচ এর আগে তারা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেছে। খুচরা বাজার থেকে আমাদের পাইকারি বাজারে নজর দেওয়া উচিত। পণ্য উৎপাদন থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে কয়েক ধাপ হয়ে আসে। গ্রাম থেকে উপজেলা, জেলা তারপর রাজধানীতে আসে। এসব ধাপেও নজর দেওয়া প্রয়োজন।