শঙ্কা তৈরি হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার চারকোল রপ্তানি নিয়ে। এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ প্রায় সব বাণিজ্য সংগঠন থেকে আওয়ামী লীগপন্থিরা সরে গেলেও চারকোল রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনে (বিসিসিএমইএ) এখনো সেই স্বৈরশাসকের সিন্ডিকেটই বিদ্যমান। ব্যবসায়ীরা এ খাতকে বৈষম্যমুক্ত করতে ও রপ্তানি আয় বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে চারকোলের প্রধান আমদানিকারক দেশ চীন। এ ছাড়া তাইওয়ান, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্টেলিয়া, কানাডা, জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলোতে বাজার রয়েছে। চারকোল থেকে মূলত কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনপণ্য, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ইত্যাদি পণ্য তৈরিতে প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সম্ভাবনাময় রপ্তানিশিল্প হিসেবে দেশে বড় বাজার তৈরি করতে পারে পাটখড়ির ছাই বা চারকোল। গত বছর প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার রপ্তানি হয়েছে পণ্যটির। যা ভবিষ্যতে ৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা সম্ভব। কিন্তু চারকোল রপ্তানিতে নিয়োজিত ট্রেডবডি বাংলাদেশ চারকোল উৎপাদনকারী ও রপ্তারিকারক সমিতি (বিসিসিএমইএ) সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ছোট ভাই মির্জা জিল্লুর রহমান শিপন। সভাপতির অবৈধ নানান চুক্তি ও একনায়কতন্ত্রের কারণে রপ্তানি কার্যক্রম ঝুঁঁকিতে পড়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের আওয়ামীপন্থি ব্যবসায়ীরা ছাড়া কাউকেই শিপিং লাইনে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সিন্ডিকেট চক্রটি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কৌশলে যোগাযোগ করে আওয়ামী লীগপন্থির বাইরে কোনো ব্যবসায়ীকে পণ্য শিপিংয়ের ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। এতে করে অ্যাসোসিয়েশনে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। তবে জিল্লুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিসিসিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, মির্জা জিল্লুর রহমান শিপন এই সংগঠনের সভাপতি হওয়ায় পুরো অ্যাসোসিয়েশনকে এককভাবে নিয়ন্ত্রন করছেন। এই শিল্পের উন্নয়নে বাণিজ্যিক ট্রেডবডি হিসেবে সংগঠনের বেশির ভাগ সদস্য চরমভাবে বৈষম্যের শিকার। তিনি পণ্য রপ্তানির জন্য একটি শিপিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এখন সেই শিপিং ছাড়া অন্য কোনো শিপিংয়ে রপ্তানিকারকরা পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন না। আবার কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের রপ্তানিকারকদের কম দামে পণ্য রপ্তানি করতে বাধ্য করতেন সভাপতি। সভাপতি তার নিজস্ব কিছু লোক দিয়ে একচেটিয়া ফ্যাক্টরি ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এ ছাড়া চাইনিজ ফ্যাক্টরি মালিক ও বায়ারদের বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে নিজের পছন্দের ব্যবসায়ীদের দিয়ে সেসব ফ্যাক্টরির মালিকানা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরাতন ও অভিজ্ঞ বায়ারদের পাশ কাটিয়ে বাজার সিন্ডিকেট করার জন্য একটা নির্দিষ্ট বায়ারের হাতে চারকোল তুলে দেওয়ার নিমিত্তে নিজের পছন্দের ব্যবসায়ীদের দিয়ে ওই সিন্ডিকেট বায়ারের সঙ্গে চুক্তি করতে অ্যাসোসিয়েশনকে ব্যবহার করা হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর জুলাই মাস থেকে বাজারে পাটকাঠি ওঠা শুরু হয়। সে হিসেবে অক্টোবর মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত উৎপাদনে থাকে কারখানা। সে হিসেবে এখন মৌসুমের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু নানান জটিলতায় রপ্তানিকারকরা উদ্বেগে রয়েছেন। দেশে বছরে ৩২-৩৫ লাখ টন পাটখড়ি উৎপাদিত হয়। এসব পাটখড়ির মাত্র ৬০ শতাংশ যদি ছাইয়ে রূপান্তর করা সম্ভব হয় তাহলে বছরে ছাই উৎপাদন হবে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টন। এক টন ছাইয়ের দাম প্রায় ৯০০-১১০০ ডলার। ফলে চারকোল রপ্তানি করে বছরে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার বা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করা সম্ভব। এ ছাড়া ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করানো যাবে। কিন্তু চারকোল ব্যবসার সাধারণ সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন নিজের পছন্দের লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটি পছন্দমতো কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিসিসিএইএ সভাপতি মির্জা জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘অ্যাসোসিয়েশনের কমিটির অভ্যন্তরে কোনো কোন্দল নেই। আমার বিরুদ্ধে কোনো কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভুয়া।’