দলের ভাবমূর্তি নষ্ট ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। এ শৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে দলটি। দলের নাম ভাঙিয়ে দখল, চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকি, মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অনিয়ম, দুর্র্নীতি থেকে শুরু করে যে কোনো ধরনের অপকর্মের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিদিনই তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং এ বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের তালিকাও তৈরি হচ্ছে। যত বড় নেতাই হোন না কেন কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিনের একজন কর্মীকে তো সহজেই কেউ দল থেকে বহিষ্কার বা তাঁর সদস্য পদ স্থগিত করতে চায় না। যখন একজন নেতা বা কর্মীর বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ প্রদান করা হয়- তখন সবকিছু দেখে-শোনে এবং জেনে-বুঝে যৌক্তিকভাবেই সেটা দেওয়া হয়। যা অন্যদের জন্য একটা সতর্ক সংকেত। এতে আশা করি অন্যরা সাবধান হবেন।
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে কোনো অভিযোগ এলে আমরা সেটি আমলে নিয়ে যাচাই-বাছাই করছি। ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা পেলেই তাঁর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে। প্রমাণিত হলে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হচ্ছে। পদ- পদবি স্থগিত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। যত বড় নেতাই হোন না কেন- সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এমনকি আমাদের দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। দলের এই মুখপাত্র বলেন, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ কেউ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে প্রশাসন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খবরদারি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত খবরদারি সম্পর্কে সচেতন থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে সচেতন থাকার অনুরোধ করছি। কারণ এ সব ব্যক্তিরা কেউ বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করে না। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। যে-ই শৃঙ্খলা ভঙের চেষ্টা করবেন তাঁর বিরুদ্ধেই সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কাউকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কারও পদ স্থগিত করা হয়েছে। আবার অনেককে শোকজ লেটার দেওয়া হয়েছে। তবে দলের বাইরে থেকেও অনেকে ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা মহানগর থেকে শুরু করে সারা দেশের সর্বত্র কঠোর দৃষ্টি রাখছেন বিএনপি হাইকমান্ড তারেক রহমান। শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই র্যাপিড অ্যাকশনে যাচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর। প্রমাণ পাওয়া মাত্রই হয় বহিষ্কার, না হয় শোকজ লেটার পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ থেকে বাদ যাচ্ছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কিংবা জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারাও। কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন স্তরের সাড়ে ছয় শ’রও বেশি নেতাকে বহিষ্কারাদেশ প্রদান করা হয়েছে। এসব তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে দলের কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপু জানান, এ পর্যন্ত কয়েক শ’ নেতাকে দলীয় পদে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রায় সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দলের হাইকমান্ড তারেক রহমান চান না- দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ তুলে কেউ কোনো রকমের ফায়দা নিক। তাছাড়া দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হোক। অথচ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন হাউস দখল, চাঁদাবাজি এবং সরকারদলীয় নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের যোগসাজশের কারণে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে তিনি বাধ্য হয়েই এখন আর কোনো দিকে না তাকিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, দলের শৃঙ্খলা ফেরাতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এতটাই কঠোর হয়েছেন যে, কে কত বড় নেতা বা তাঁর কতটা ঘনিষ্ঠ, সে বিষয়টি আমলেই নিচ্ছেন না তিনি। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কেন্দ্রীয় নেতাদেরও শোকজ করার মধ্য দিয়ে তিনি এ কঠোর বার্তা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এইচএম সাইফ আলী খান বলেন, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট ও শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে বিএনপি। সবচেয়ে বেশি কঠোর অবস্থান নিয়েছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছে আমাদের দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর শাখা। কাউকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। আশা করি এরপর থেকে আর কেউ এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়. কিংবা শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়। জানা গেছে, দলে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে এবং শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমানের নির্দেশে নতুন প্রেক্ষাপটের শুরু থেকেই গঠনমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বিএনপি। এ ছাড়াও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতা-কর্মীদের দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন তারেক রহমান।