দুর্গাপূজা মন্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবার সহযোগিতায় গৌরবপূর্ণ দুর্গাপূজা আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে করতে পেরেছি। একদম নির্বিঘ্নে সব জায়গায় পূজার অনুষ্ঠান হচ্ছে। তবে বিভিন্ন আনন্দ-উৎসব আয়োজনে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সহায়তা নেওয়া আমাদের সমাজের ব্যর্থতা। আমরা সমাজটাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে পারিনি যে, প্রতিটা আনন্দ-উৎসব কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সবাই মিলেমিশে করব। ভবিষ্যতে যাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াই উৎসব করা যায়, সেজন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। গতকাল বিকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজামন্ডপ পরিদর্শন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার দুর্গাপূজার আনন্দ বিশেষ আনন্দে পরিণত হয়েছে। দেশজুড়ে এটা সবাই উপভোগ করছে। এ আনন্দ আরেকটু বেড়ে গেল এজন্য যে, একদম নির্বিঘ্নে সব জায়গায় পূজার অনুষ্ঠান হচ্ছে। সবাই চেষ্টা করেছে, কোনোরকম দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, কোনোরকম আতঙ্কজনক পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়। এজন্য সরকার এবং সরকারের বাইরে সবাই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছে।
সবাই মিলে অত্যন্ত গৌরবপূর্ণ দুর্গাপূজা করতে পারার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর পেছনে আমাদের সহযোগিতা করেছে পুলিশ, সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবিসহ সরকারের কাছে যত রকমের শান্তিরক্ষা বাহিনী ছিল সবাই। সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করেছে। এটা কঠিন কাজ, সহজ নয়। এ কঠিন কাজটি অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সমাধান করেছে। সবাই মিলে কাজ করলে যে সফলতা পাওয়া যায়, সেটা তারা প্রমাণ করেছে। তারা কষ্ট করার কারণে আমরা ছুটি উপভোগ করতে পারছি। তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন উৎসব পালনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেওয়া প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেনাবাহিনী দিয়ে, পুলিশ দিয়ে, র্যাব দিয়ে আনন্দ-উৎসব করার আয়োজন করতে যাওয়াটা আমাদের ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতাকে আমরা গ্রহণ করেছি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমরা সমাজটাকে এমনভাবে গড়ে তুলতে পারিনি, কোনো জায়গায় একটা অংশ আনন্দ-উৎসব করবে, কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সবাইকে নিয়ে আনন্দ-উৎসব করবে। এরকম সমাজ নিয়ে আমরা কী করব? আমরা এরকম সমাজ চাই না। সমাজের যে কোনো অংশ উৎসব করবে, আমরা সবাই মিলে সেখানে শরিক হব, তারা যেন নির্বিঘ্নে, আনন্দসহকারে উৎসব করতে পারে, তারা নিজেরা এ আনন্দে অংশ নেবে, এটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা ওটা করতে পারছি না। এটা করতে পারছি না বলেই আমাদের ছাত্র-জনতা, শ্রমিক এরা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটা নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে আজকে আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে আপনাদের উৎসবের সুযোগ করে দিলাম। এটা যেন ভবিষ্যতে আর কখনো করতে না হয়, সেজন্য আমরা একযোগে কাজ করব। ড. ইউনূস বলেন, আমরা এমন এক বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই, যে বাংলাদেশে যারা এ দেশের নাগরিক তাদের সবার সমান অধিকার থাকবে।