সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিম কেনাবেচা করতে না পারায় দেশের বেশির ভাগ ডিমের আড়তে নিজেরাই তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে পাইকারি পর্যায়ে ডিম বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য অনেক স্থানেই ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা জানায় রাজধানীতে ডিম বিক্রির অন্যতম বড় পাইকারি বাজার তেজগাঁও আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন স্থানের খামার থেকে ট্রাকে এখানে ডিম আসে। এরপর সেখান থেকে ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লায় ডিম সরবরাহ হয়। রবিবার রাত থেকে তেজগাঁও আড়তে ডিমের কোনো ট্রাক আসেনি। তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিতের চেয়ে বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। অপরদিকে, সরকার নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। তাই ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান ও জরিমানার ভয়ে তারা ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। ফলে গতকাল রাতে তেজগাঁও আড়তে ডিমের কোনো গাড়ি আসেনি এবং ডিম বিক্রিও হয়নি।
রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম ১৮০ ও সাদাগুলো ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের সরবরাহ তুলনামূলক কম বলেও জানান বিক্রেতারা। নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানায়, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিম কেনাবেচা করতে না পারায় চট্টগ্রামের বৃহৎ কাঁচাপণ্যের পাইকারি বাজার পাহাড়তলীর ডিমের আড়তে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকাল থেকে বাজারের ১৫টি আড়তে একযোগে তালা লাগিয়ে দেন মালিকরা। পাহাড়তলী ডিম আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কর লিটন জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ডিমের দাম খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়। সে হিসাবে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৪২ টাকা। তবে এই নির্দেশনা পাত্তা না দিয়ে ডিমের সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটি ডিম সরবরাহ করছে ১২ টাকা ৮০ পয়সায়। ফলে বাড়তি দামে ডিম বিক্রি না করে ব্যবসায়ীদের উপায় নেই। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি না করলে জরিমানা করছে প্রশাসন। তাই বাধ্য হয়ে ডিম বিক্রি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আড়ত বন্ধ থাকলে খুচরা পর্যায়ে দামে প্রভাব পড়বে। প্রশাসন, খুচরা-পাইকারি, মধ্যস্বত্বভোগী ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে বসে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা দরকার।’ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ জানিয়েছেন, আড়তদারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। পাবনা প্রতিনিধি জানান, হঠাৎ করে পাবনার বাজারে ডিম নেই। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রিতে বাধ্য করতে ভোক্তা অধিদপ্তর জরিমানা করায় ডিম বেচাকেনা বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা। খুঁজে অতিরিক্ত মূল্যেও মিলছে না ডিম। রবিবার পাবনার বাজারগুলোতে ঘুরে কোথাও ডিমের দেখা মেলেনি। সরেজমিনে দেখা যায়, পাবনার বড় বাজার ও লাইব্রেরি বাজারসহ বেশির ভাগ বাজারেই ডিমের দোকান বন্ধ। প্রতিদিন ভোর থেকে খাচি খাচি ডিম সাজিয়ে যে ব্যবসায়ীরা বসে থাকতেন, দেখা মেলেনি তাদের। দু-একজন আশপাশে থাকলেও দোকান বন্ধ রেখে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছেন। ক্রেতারা ডিম কিনতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। বাজারের সব জায়গায় ঘুরেও মিলছে না ডিম। সকালের দিকে এ চিত্র দেখা গেলেও সকাল সাড়ে ১১টার পর হাতেগোনা দু-একজন দোকানি লুকিয়ে দোকান খুলে দু-চারজনের কাছে বিক্রি করে আবার দোকান বন্ধ রাখছেন। বেশির ভাগ ক্রেতাই ডিম কিনতে পারছে না। ব্যবসায়ীদের দাবি, ফার্ম থেকে কেনা দামের চেয়ে কমে বিক্রি না করলেই জরিমানা করা হচ্ছে। এজন্য তারা নতুন করে ডিম কিনছেন না, যা মজুত আছে লুকিয়ে বিক্রি করে শেষ করে আর ডিম আনবেন না। আগামীকাল ডিম বেচাবিক্রি সব বন্ধ বলেও জানান তারা।