৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কৃতিত্ব কাউকে দাবি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, এর সব কৃতিত্ব আল্লাহর। আমরা কেউ যেন ক্রেডিট দাবি না করি যে এটা ওলামায়ে কেরাম করেছে, এটা ছাত্রশিবির, এটা জামায়াতে ইসলামী, এটা বিএনপি বা অমুক দল করেছে; এ ধরনের কথা বলা সংগত হবে না। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় মুফাসসির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ অনুরোধ জানান তিনি। এর আগে মুফাসসিরদের অনেকে ৫ আগস্টের পরিবর্তনে আলেম সমাজের অবদানের কথা উল্লেখ করে বক্তব্য দেন। জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, আমি যদি জিজ্ঞাসা করি, আগস্ট মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত কেউ কি চিন্তা করেছিলেন, এমন একটা ঘটনা ৫ তারিখে ঘটবে? দুনিয়ার কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানী চিন্তা করেছিলেন? যারা আমাদের দেশে ষড়যন্ত্রের জাল সৃষ্টি করেছিল, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবস্থান নিয়েছিল, তারাও কি টের পেয়েছিল- পায়নি। আল্লাহ তাঁর কল্পনা এবং বিপরীত সব অপচেষ্টা-অপকৌশলকে একদিকে রেখে তাঁরই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করেছেন। অতএব আমরা যেন কেউ ক্রেডিট দাবি না করি। সব কৃতিত্ব আল্লাহর। আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ মজলিসুল মুফাসসিরিনের সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম খান, সাইফুল আলম খান, নুরুল ইসলাম বুলবুল, খলিলুর রহমান মাদানি প্রমুখ। শেখ হাসিনা সরকারের ষড়যন্ত্র এবং জুলুম ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছিল বলে দাবি করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আপনারা বলবেন, তখন তো তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায়ই ছিল না। হ্যাঁ, তারা ছিল না, কিন্তু তারাই লগি-বইঠার তাণ্ডব চালানোর প্রকাশ্য আহ্বান জানানোর মাধ্যমে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। তারই ফল বাংলাদেশের জনগণ পরবর্তীকালে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। হয়তো কেউ কেউ তখন ভেবেছিলেন যে ঝড়-বাতাস যা যায়, জামায়াতের ওপর দিয়ে চলে যাবে। কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে জামায়াতের আমির ওই সময়ের ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম, এই ঝড় শুধু জামায়াতের জন্য আসেনি। এই ঝড় গোটা জাতির জন্য এসেছে। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা যদি এই ঝড়ের সামনে না যাই, তাহলে কেউ এসব হায়েনার হাত থেকে রক্ষা পাব না।
সাড়ে ১৩ বছর আমরা অফিসে ঢুকতে পারিনি : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রায় সাড়ে ১৩ বছর আমরা আমাদের অফিসে ঢুকতে পারিনি, আপনারা তার সাক্ষী। শুধু কেন্দ্রীয় অফিস নয়, সারা বাংলাদেশে জামায়াতের অফিস সিলগালা করে রেখেছিল তারা। গতকাল সকালে মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান রাষ্ট্রদূত আমাদের অফিস ভিজিট করতে এসেছেন, আমাদের বৈঠকটি খুবই হৃদ্যতাপূর্ণ এবং সফল একটি বৈঠক ছিল। জামায়াত আমির ডা. শফিকুর জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বিপ্লবে যারা চোখ, হাত, পা-সহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়েছে তাদের সুচিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের ও মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, মোবারক হোসাইনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।