প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, ‘মাইনাস টু’ কী জিনিস জানে না সরকার। এ নিয়ে সরকারের কোনো উদ্বেগ নেই। এ মুহূর্তে জুলাই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। শুরুতেই উপ প্রেস সচিব জানান, সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপ শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার (১৯ অক্টোবর) থেকে। আলোচনায় বসবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টা পরিষদ। এবারে সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।
এ দফায় সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়া দলগুলো হলো, গণফোরাম, এলডিপি, লেবার পার্টি, বারো দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (আন্দালিব রহমান পার্থ), জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণতান্ত্রিক মুক্তি কাউন্সিল। তবে এবারও সংলাপে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
জাতীয় পার্টিকে সংলাপে ডাকা হবে কি না, এমন প্রশ্নে আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি চলমান প্রক্রিয়া, পরে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হলে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন, তারা ‘মাইনাস টু’ মেনে নেবেন না-এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটা বিএনপির বক্তব্য; সবচেয়ে ভালো হয়, যদি বিএনপির কাছে উত্তর চান। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো বিষয় সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এ নিয়ে সরকারের কোনো উদ্বেগ বা অন্য কোনো চিন্তা নেই। এ বিষয়ে উপ প্রেস সচিব আরও বলেন, আমাদের সরকার ‘মাইনাস টু’ কী জিনিস সেটা জানে না। এবং ‘মাইনাস টু’ নিয়ে আমাদের সরকারে কোনো ধরনের, কোনো পর্যায়ে আলোচনা অতীতে হয়নি, ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সহিংসতা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে; অথচ আগের দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়েছে গণ অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানি করা যাবে না। গণ অভ্যুত্থান নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের এই বিপরীতধর্মী অবস্থান- সরকারের সমন্বয়হীনতার প্রকাশ কি না জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে- সবচেয়ে ভালো হয়, ওই কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করা। আর বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের যে অবস্থান- সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার বক্তব্যে জানিয়ে দিয়েছে। উপ প্রেস সচিব বলেন, আমাদের সরকারের এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার হচ্ছে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা। গণ অভ্যুত্থানে জুলাই হত্যাকাণ্ডের যারা শিকার হয়েছেন, তারা যাতে ন্যায়বিচার পান সে লক্ষ্যে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনি বলেন, এটা শুধু আমাদের সরকারের অগ্রাধিকার নয়, এর আগে যতগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা হয়েছে- সেখানেও তারা সবাই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারটাকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ছাড়াও দ্রব্যমূল্য নিয়ে আলোচনা করা হবে বলেও জানান তিনি। উপ প্রেস সচিব বলেন, সমাজের সবার মধ্যে, সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আছে। বিশেষ করে ডিমের দাম এই মুহূর্তে ঊর্ধ্বমুখী। এ লক্ষ্যে আমদানি পর্যায়ে ডিমের শুল্ক ৩৩ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া আড়তদাররা সরাসরি খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করবে বলেও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান।
গার্মেন্ট সেক্টর ও পরিবহনে চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে উপ প্রেস সচিব বলেন, কেউ যদি কোনো ধরনের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকে, সে যেই হোন শক্ত হাতে দমন করা হবে। এটি শুধু দ্রব্যমূল্য নয়, পরিবহন এবং গার্মেন্ট সেক্টরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। তিনি আরও বলেন, চাঁদা যে কোনো পর্যায়ে চাওয়াটাই অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। যদি কেউ চাঁদা চায় পুলিশের কাছে যাবেন। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান।
গার্মেন্ট ইস্যুতে তিনি বলেন, বর্তমানে ৯৯ শতাংশ গার্মেন্ট খোলা রয়েছে। দু-একটি গার্মেন্ট বন্ধ রয়েছে। তবে সেখানে শ্রমিক অসন্তোষ নেই। শিগগিরই সেগুলো খোলা হবে।