দেশের বর্ষীয়ান রাজনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সংসদ উপনেতা, সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ মতিয়া চৌধুরী সপ্তাহখানেক আগে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছিলেন। গতকাল সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে আনা হয়। পরে বেলা ১২টার ৫৭ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে জানাজা নামাজ শেষে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মতিয়া চৌধুরী ছয়বার এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে গেছেন। নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলা নিয়ে গঠিত শেরপুর-২ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মতিয়া চৌধুরী ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৩ সালে তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে শোকবার্তা দেওয়া হয়েছে। দলের বিভিন্ন নেতা শোক জানিয়েছেন। ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে মতিয়া চৌধুরীর জন্ম। তাঁর বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাতি পাওয়া মতিয়া চৌধুরী ইডেন কলেজে পড়ার সময় বাম ধারার ছাত্ররাজনীতিতে জড়ান। ১৯৬১-৬২ মেয়াদে তিনি ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের ভিপি। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নিবার্চিত হন। ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হন। ১৯৬৪ সালে সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে মতিয়ার বিয়ে হয়। ১৯৬৬ সালে ছয় দফার আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা ছিল মতিয়া চৌধুরীর। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১-এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রুষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ষাটের দশকে আইউববিরোধী আন্দোলন অংশ নিতে গিয়ে তিনি চারবার কারারুদ্ধ হন। ১৯৭৯ সালে ন্যাপ ছেড়ে মতিয়া যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৮৬ সালে দলের কৃষিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এক সময় তাঁকে দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম ‘প্রেসিডিয়াম’ সদস্য ছিলেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহুবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে মতিয়া চৌধুরীকে। জেলজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘দেয়াল দিয়ে ঘেরা’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে সারা জীবনই সাধারণ বেশভূষা আর সাদামাটা জীবনযাপনের জন্য পরিচিত ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। মতিয়া চৌধুরীর ভাই মাসুদুল ইসলাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, লাশ এভারকেয়ার হাসপাতালে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার গুলশানের আজাদ মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাঁকে দাফনের জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নতুন জায়গা চাওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনের কাছে। জায়গা পেলে সেখানে দাফন করা হবে। না পেলে তাঁর স্বামী বজলুর রহমানের কবরে দাফন হবে। মতিয়া চৌধুরীর মামা মোস্তাফা জামাল হায়দার জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে উনার আসনের জনগণ দাবি করছেন, একবারের জন্য হলেও তাঁকে যেন নিজ এলাকায় আনা হয়। কিন্তু পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর স্বামীর কবরের পাশে দাফন করা হবে। মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি শোক জানিয়েছেন।