গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা কায়েম থাকায় গণতন্ত্র শব্দটিই গুম হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, দেশের সংবিধান ক্ষতবিক্ষত করে, গণতন্ত্র তিরোহিত করে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে কেবল নির্যাতন করে গেছে। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক বিপ্লবে কবিতা ও কবিদের কবিতা পাঠ’ শিরোনামের আয়োজনে প্রধান বক্তার ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে গণতন্ত্র শব্দটিকে অর্থহীন করে দিয়েছে। গণতন্ত্র শব্দটির মর্মকথাই ফ্যাসিবাদ গুম করে দিয়েছে। যে শাসনব্যবস্থা দিনের পর দিন মানুষের অধিকার খর্ব করে, মানুষকে গুম করে রাখে, সেটি কি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ছিল? অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সেসব সমালোচকের প্রসঙ্গে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, অনেকে বলছেন, এটি তো রাজনৈতিক সরকার নয়। এটি সংবিধানসম্মত সরকারও নয়। তাদের বলছি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানই এই সরকারের বৈধতা দিয়েছে। আর যে সংবিধানের কথা বলা হচ্ছে, সেটিও নিজেই নিজেকে বিলুপ্ত করেছে। সংবিধানের মূল কথা ছিল, মানুষে মানুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সবাই তার প্রতিভা অনুসারে ফলাফল পাবে। সেটি কী হয়েছে? ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে অনেকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও এনেছেন আন্দোলনের সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে সলিমুল্লাহ খান বলেন, এই আন্দোলন-সংগ্রামের হোতাদের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের দুষ্কৃতকারী, জঙ্গি বলা হয়েছে। কিন্তু যারা ক্ষমতা ধরে রেখে দীর্ঘদিন জনগণের ওপর অত্যাচার করেছে তারাই তো আসলে জঙ্গি। জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে জাতীয় কবিতা পরিষদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে আন্দোলনে জাতীয় কবিতা পরিষদের ভূমিকা কী ছিল?
তারা মানুষের মনের আকাক্সক্ষা বুঝতে পারেননি। তারা তো আসলে কবি নন, হয়ে গেছেন আমলা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্য সচিব কবি রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন। বক্তা হিসেবে ছিলেন গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরাজী ও মনিরুল ইসলাম মনি।
কবি মোহন রায়হান বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহযোগী কবিরা আজকে পালিয়ে গেছে। অথচ কবিদের পালিয়ে যাওয়ার কথা না। কবিরা তো জাতির বিবেকের প্রতীক। তারা সততা, প্রেম ও দ্রোহের প্রতীক। কবিরা এ দেশে স্বৈরাচারের পুনর্বাসন দেখতে চান না।