মাদারীপুরের চরমুগরিয়া এলাকার বাসিন্দা সারাফাত ইসলাম ডলার দীর্ঘ ১২ বছর ধরে থাকেন ইতালির মিলান শহরে। তার বাবা রাজা জমাদ্দার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। কয়েক বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। বাসা থেকে বের হতে পারেন না। অথচ তাদের নামে ঢাকার সিএমএম আদালতে হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলার বিবরণ মতে, তারা গুলিও ছুড়েছেন। সেই গুলিতেই মারা গেছেন এক যুবক। স্থানীয়দের দাবি, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে এ মামলা করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ সরদার বলেন, ডলার ১২ বছর ধরে ইতালি থাকেন আর তার বাবা অসুস্থ লোক। ঘর থেকে বের হতে পারেন না। মাদারীপুর জেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব অহিদুজ্জামান খান বলেন, ‘মাদারীপুরের একজন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কু-পরামর্শ দিয়ে এ মিথ্যা মামলা দেওয়াইছেন। সেই ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি মূলত আওয়ামী লীগের লোক। তার সঙ্গে যাদের দ্বন্দ্ব তাদের হয়রানি করার জন্য এ মামলা দায়ের করিয়েছেন। মামলার আসামি সারাফাত ইসলাম ডলার বিএনপি নেতা। ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় বিএনপি নেতা আসামি হওয়া দুঃখজনক।’ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সিএমএম আদালতে মনিরুজ্জামান মনির নামে এক যুবক নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় আসামি ২৬ জন। এদের মধ্যে ২১ জন মাদারীপুরের বাসিন্দা। অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। এ পাঁচজনের ঠিকানা ঢাকা হলেও ২১ জনের কেউ-ই ঢাকার বাসিন্দা নন। অভিযোগ উঠেছে, আসামির নাম বাদ দিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক এক ভাইস চেয়ারম্যান একাধিক আসামির কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর রাজধানীর ফুলবাড়িয়া মার্কেটের সামনে পুলিশের গুলিতে মনির নামে এক যুবক নিহত হন। নিহত মনির মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শাখারপাড় এলাকার নুরুল ইসলাম মোল্লার ছেলে। মনিরকে মামলার এজাহারে রিকশাচালক উল্লেখ করা হয়। তার বোন নিলুফার ইয়াছমিন গত ৩ অক্টোবর ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য শাহবাগ থানাকে নির্দেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আসাদুজ্জামান জুয়েল। মামলার বাদীর কাছে এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপাতত কিছু বলতে চাই না বলে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’ মামলার এজাহারে বলা হয়, ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভ-ুল করতে পুলিশে সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং ৬ থেকে ২৭ নম্বর আসামিরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি করে, র্যাব হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষের ওপর গুলি করে এবং ভিকটিম তার রিকশা নিয়ে জীবিকার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার বুকে গুলি করা হয়। ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টার দিকে মারা যায়। মামলা করার কয়েকদিন আগে নিহত মনিরের বাবা নুরুল ইসলাম মোল্লা গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, ৫ আগস্ট সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন মনিরুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু আলম। তারাও অন্যদের দেখাদেখি গণভবনে যান। দুজনই সন্ধ্যার আগে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। তারা ফুলবাড়িয়ায় মসজিদে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে দেখেন তাদের মোটরসাইকেলে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যেই পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে শুরু হয় গোলাগুলি। এ সময় মনির গুলিবিদ্ধ হন ও আলম মারধরের শিকার হন। গুরুতর অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাতেই সেখানে মারা যান।
নিহত মনিরের বন্ধু আলম কাজী বলেন, ফুলবাড়িয়ায় পুলিশের সঙ্গে লোকজনের সংঘর্ষের সময় আমরা মাঝখানে পড়ে যাই। কিছু লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। দুজন দুই দিকে সরে পড়ি। এরপর কিছু লোক আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে শুনি গুলিবিদ্ধ মনির আর বেঁচে নেই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, মামলার তদন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। নির্দোষ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।