আত্মগোপনে রয়েছেন বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অংশ নেওয়া ২৭ রাজনৈতিক দলের নেতারা। সবাই রয়েছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে। অনেক নেতার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনও বন্ধ দেখাচ্ছে। এ ছাড়া অধিকাংশ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ মাঠপর্যায়ের অফিসও বন্ধ হয়ে গেছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব রাজনৈতিক দলের নেতারা বিপাকে পড়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নেই।
সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেউ কেউ পালিয়ে গেছেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া আটক হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এর পর থেকেই জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলীয় জোটের নেতারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছেন। এ ছাড়া সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাসহ আরও অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিংস পার্টির নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁরাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। শমসের মবিন চৌধুরী যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় এখন কারাগারে রয়েছেন। তিনি একসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৫ সালে বিএনপির সব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর ২০১৮ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন। সবশেষ ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তৃণমূল বিএনপি নামে নতুন রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন হন তিনি। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আরেক নেতা তৈমূর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব হন। তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রয়াত নাজমুল হুদা। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এদিকে বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপিকে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবে কিংস পার্টি খ্যাত এসব দলের নেতারা কেউ এখন প্রকাশ্যে দলীয় কার্যক্রমে নেই। অনেকেরই প্রশ্ন-কিংস পার্টির নেতারা এখন কোথায়? বিগত নির্বাচনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম চালালেও এখন লাপাত্তা। যদিও এসব দলের নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। আপাতত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দিচ্ছেন না। ৫ আগস্টের পর থেকেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) দপ্তর সম্পাদক মো. ইব্রাহিম মিয়া। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরে যেহেতু দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে তাই আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি; কোন দিকে যাচ্ছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এ মুহূর্তে আমরা কোনো কর্মসূচি দিইনি।’ তিনি বলেন, ‘আতঙ্কে নেই; তবে বিব্রত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি।’ জেলা পর্যায়ের কার্যালয়গুলো বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘বন্ধ নয়, আমাদের লোকজন কম যাচ্ছেন।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে প্রার্থী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ (নৌকা) ২৬৫ জন; জাতীয় পার্টি (লাঙল) ২৬৪ জন। এ ছাড়া জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১, তৃণমূল বিএনপি (সোনালি আঁশ) ১৩৫, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (আম) ১২২, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ৯৬, জাসদ (মশাল) ৬৬, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) ৭৯, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৬৩, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ (টেলিভিশন) ৪৫, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নোঙর) ৫৬, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৩৮, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪২, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩০, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ২৬, গণফ্রন্ট (মাছ) ২১, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ১৩, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৬, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১১, বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১০, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ৫, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১০, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (চাকা) ৪, বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ৫, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাতপাঞ্জা) ৪, ও স্বতন্ত্র ৪৩৭ জন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পাশাপাশি তাদের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, জেপির ছয়জন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন।