শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

স্মার্টফোনে স্মার্টনেস

ফেরদৌস আরা

স্মার্টফোনে স্মার্টনেস

► ছবি : রনি রেজাউল ►মডেল : শ্রাবণী নিশাত ও জিহাদ হোসাইন ►পোশাক : ইজি ►মেকওভার : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড

স্মার্টফোন পাল্টে দিয়েছে তারুণ্যকে। আড্ডা বন্ধুত্ব থেকে শুরু করে অ্যাসাইনমেন্ট, ই-মেইল কিংবা মিটিং পর্যন্ত হচ্ছে স্মার্টফোনের সহায়তায়। পাল্টে যাওয়া জেনারেশন ও স্মার্টফোন ব্যবহারের নানা দিক নিয়েই এবারের মূল রচনা।

এ সময়ের মোবাইল ফোনগুলো কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়- বেশি রেজ্যুলেশনের ক্যামেরা, মিউজিক প্লেয়ার, ডিজিটাল ডায়েরি, রেডিওসহ অন্য আরও বহু যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে বিশেষ একটি স্মার্ট যন্ত্র। ফোনগুলোতে আরও অনেক ধরনের সুবিধা থাকে, যেগুলো দৈনন্দিন কাজগুলো আরও সহজ করে দেয়। স্মার্টফোন পাল্টে দিয়েছে তারুণ্যকে। আড্ডা বন্ধুত্ব থেকে শুরু করে অ্যাসাইনমেন্ট, ই-মেইল কিংবা মিটিং পর্যন্ত হচ্ছে স্মার্টফোনের সহায়তায়। পাল্টে যাওয়া জেনারেশন ও স্মার্টফোন ব্যবহারের নানা দিক নিয়েই এবারের মূল রচনা। লিখেছেন- ফেরদৌস আরা

 

 

একটা সময় ছিল যখন কথা বলা কিংবা এসএমএসই ছিল মোবাইল ফোনের একমাত্র ব্যবহার। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। এখন একেকটা মোবাইল ফোন যেন একেকটি কম্পিউটার। ছবি তোলা, গান শোনা, স্বাস্থ্যসেবা, শপিং, বিল দেওয়া, ডিজিটাল ডায়েরি মেনটেইন থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজই এখন সেরে নেওয়া যায় স্মার্টফোনে। অফিসের কাজ থেকে শুরু করে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী লাখ লাখ অ্যাপস এখন জীবনকে করে তুলেছে আরও আধুনিক, আরও সহজ। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো আমাদের দেশেও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন অনেক বেশি। তবে স্মার্টফোন হাতে থাকলেই স্মার্ট হওয়া যায় না। দরকার স্মার্টফোনের ব্যবহার জানা। নইলে স্মার্টফোন হাতে থাকা সত্ত্বেও আপনার কপালে জুটে যেতে পারে আনস্মার্ট তকমা।

মনে রাখতে হবে, স্মার্টফোন এখন আর কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং হাজারো কাজের কেন্দ্রবিন্দু। স্মার্টফোনে আপনি স্বাস্থ্যসেবা, সৌন্দর্যসেবা, শপিং, বই, নিজের অবস্থান লোকেশনসহ নানা ধরনের অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা বলার জন্য ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ট্যাঙ্গো, ইমোসহ বিভিন্ন অ্যাপস রয়েছে। এগুলো নামিয়ে নিতে পারেন। নতুন কোনো জায়গা খুঁজে বের করতে গ্লোবার পজিশনিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য গুগল ম্যাপ একটি কার্যকরী অ্যাপ। ভিজিটিং কার্ড এখন স্মার্টফোনেই সংরক্ষণ করতে পারেন। বিদেশে ভ্রমণের সময় যদি ওই দেশের ভাষায় কথা বলতে বা লিখতে না পারেন, তবে স্মার্টফোনে আগে থেকেই গুগল ট্রান্সলেটর বা অন্যান্য ট্রান্সরেশন অ্যাপ ব্যবহার করাতে পারেন।

স্মার্টফোন কিনতে চাইলে

 বর্তমানে বাজারে নানা ধরনের স্মার্টফোন পাওয়া যায়। একটি স্মার্টফোন কেনা সত্যি একটা ঝামেলার বিষয়। স্মার্টফোন কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কি কি ফিচার চান সেটা আগে ঠিক করুন। এরপর ব্র্যান্ড এবং বাজেট নির্ধারণ করুন। এটির কনফিগারেশন, অপারেটিং সিস্টেম এবং হার্ডওয়্যার উন্নত কি না যাচাই করা। হালনাগাদ অপারেটিং সিস্টেম ও ফোন কেনার পরবর্তী সাপোর্টের বিষয়গুলো জেনে নেওয়া জরুরি। সর্বপ্রথম প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিন বাজেটে স্মার্টফোন কিনতে গেলে স্মার্টফোনে ডিসপ্লের আকার দেখে ঘাবড়ে যাবেন না। ডিসপ্লে বড়, কিন্তু তার রেজ্যুলশন হয়তো ভালো নাও হতে পারে। আবার ইন্টার্নাল স্টোরেজ বেশি থাকলেও পুরোটা হয়তো ব্যবহারের উপযোগী হবে না। কাজেই স্মার্টফোনের নানা ধরনের ফিচারের মধ্যে ঠিক কোনগুলো আপনার প্রয়োজন, সেগুলো ঠিকঠাক রয়েছে কি না তা ভালোভাবে দেখে নিন।

অনলাইনে যাচাই করুন : অনলাইনে যাচাই করতে পারেন কোন স্মার্টফোন আপনি কিনবেন। যেটা পছন্দ করেন, সে স্মার্টফোনের যত সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করুন। মোবাইলে কি প্রসেসর, র‌্যাম ও ইন্টারনাল মেমোরির ক্ষমতা? বিবেচনা করে স্মার্টফোন কেনা উচিত। বিভিন্ন দোকানে স্মার্টফোনের বিভিন্ন ছাড় থাকে। সে দাম এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জেনে নিন এবং সব ঠিক থাকলে সরাসরি দোকানে গিয়ে পণ্যটি কিনে ফেলুন।

 

 

স্মার্টফোনের যত্ন

বাজার ঘুরে স্মার্টফোন না হয় কিনলেন, তবে যত্ন না নিলে স্মার্টফোনটি খুব দ্রুতই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। স্মার্টফোনের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য এর ডিসপ্লে। তাই ডিসপ্লের যত্নে ভালোমানের একটি স্ক্রিন প্রোটেক্টর লাগিয়ে নিন। স্মার্টফোনটি ভালো রাখতে কাভার ব্যবহার করতে পারেন। এতে ডিসপ্লে তো বটেই, হঠাৎ হাত থেকে পড়ে গেলেও সুরক্ষিত থাকবে স্মার্টফোনটি। মোবাইলের পর্দার আলো কমিয়ে রাখলে আপনার মোবাইলের ব্যাটারি অনেকদিন ভালো থাকবে। অপ্রয়োজনের সময় ফোনের জিপিএস, ব্লু-টুথ, এনএফসিও ওয়াইফাই বন্ধ রাখুন। অ্যাপসের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। ভিডিও দেখা কিংবা মাল্টিপ্লেয়ার গেমগুলো বেশি খেললে ফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। স্মার্টফোন কখনোই গরম কিংবা ঠাণ্ডায় রাখবেন না। তাহলে ব্যাটারির ওপর এর প্রভাব পড়বে।

স্মার্টফোন নিরাপদ রাখুন

আগেই বলা হয়েছে কিছু ক্ষেত্রে স্মার্টফোন আপনার কম্পিউটারের কাজ করে। এতে থাকে অনেক সংবেদনশীল তথ্য ও পাসওয়ার্ড। কিন্তু আমরা বেশির ভাগ মানুষই আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইসটি রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই না। অনেকেই আবার চার অঙ্কের একটি পাসওয়ার্ড দিতেও বিরক্ত বোধ করি। তাই স্মার্টফোন নিরাপদ রাখার কতগুলো দিক জানা দরকার।

সফটওয়্যার আপডেট করুন : আপনার স্মার্টফোনের অপারেটিং সিস্টেম সবসময় আপডেট করুন। এই আপডেটের ফলে আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোনটি আপনার কাছে পৌঁছেও যেতে পারে। যদিও এটা একটু কঠিন ব্যাপার কিন্তু অসম্ভব কিছু না। এ ছাড়াও মোবাইল সফটওয়্যার আপডেটেভ থাকলে আপনার ফোন সিকিউরিটি কোড ব্যবহারের মাধ্যমে বন্ধও করে দিতে পারেন। ফলে আপনার কোনো তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

স্ক্রিন লক ব্যবহার করুন : প্রতিটি স্মার্টফোনে নিরাপত্তা হিসেবে স্ক্রিন লক করার সুবিধা রয়েছে। পিন, পাসওয়ার্ড কিংবা প্যাটার্ন লক পদ্ধতির মাধ্যমে আপনার পণ্যটিকে লক করে রাখতে পারেন। স্মার্টফোন সিকিউরিটি সেটিংসে গিয়ে লক সক্রিয় করা যায়। স্বয়ংক্রিয় বা নির্দিষ্ট সময় পর পর লক করা বিষয়টিও সেট করা যায়। এটি আপনার তথ্যসমূহকে সংরক্ষণ করবে।

অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করুন : তথ্য ফাঁস হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে ভাইরাস। এটি ফাঁস করে দিতে পারে, আবার আপনার মোবাইল ডিভাইসকেও ধ্বংস করে দিতে পারে। ভাইরাস স্মার্টফোনের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই স্মার্টফোনের নিরাপত্তার জন্য অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করুন।

ডিভাইস এনক্রিপ্ট করুন : স্মার্টফোন আপনার পণ্যের সব ডাটা এনক্রিপ্ট করার সুবিধা দেয়। স্মার্টফোন এর সিকিউরিটি সেটিংস থেকে ডাটা এনক্রিপ্ট করা যায়। এতে মোবাইল বা ট্যাব প্রতিবার চালু করার সময় ডাটা বা তথ্যে ঢুকতে আলাদা করে পাসওয়ার্ড ও পিন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এনক্রিপশন করা থাকলে ফোন যদি দুর্বৃত্তের হাতে পড়ে এবং একবার বন্ধ করে তা আবার চালু করে তবে পিন বা পাসওয়ার্ড ছাড়া তথ্য চুরি করতে পারবে না।

অ্যান্ডয়েড ডিভাইস ম্যানেজার সচল করুন : আপনার মোবাইল ফোন যদি বেহাত হয়ে যায় তখন অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ম্যানেজার ফিচারটির কল্যাণে আপনার পণ্যটিকে গুগল ম্যাপে ট্র্যাক করতে পারবেন।

 

 

অ্যাপসের জন্য পাসওয়ার্ড ব্যাবহার করুন : আপনার স্মার্টফোন বা ট্যাবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অ্যাপস লক ব্যবহার করতে পারেন। গ্যালারি কিংবা মেসেজিংয়ের সুরক্ষা হিসেবে গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপ লক ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করলে আপনাকে আলাদা করে পাসওয়ার্ড বা পিন কোড সেট করে দিতে হবে যাতে কোনো নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন চালু করতে গেলে আগে পাসওয়ার্ড খুলে তারপর ঢুকতে হয়।

সেলফিকাহন

স্মার্টফোনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফিচার সম্ভবত ফ্রন্ট ক্যামেরায় সেলফি। ইদানীং অনেকে স্মার্টফোনের মান যাচাই করেন এর সেলফি কোয়ালিটি দেখে। এটা অবশ্য ঠিক নয়। তবে সেলফি নিয়ে অনেকের নেগেটিভ চিন্তা থাকলেও বিশ্বজুড়ে সেলফি সংস্কৃতিকে অস্বীকারের কোনো জো নেই। তাই ভালো সেলফি তোলার জন্য কিছু জিনিস জেনে নেওয়া দরকার। ভুলে গেলে চলবে না ভালো সেলফি তোলাও কিন্তু হাল আমলের ফ্যাশন।

সেলফিকে একটা কিছুর উপলক্ষ বানান। যেমন- নতুন লিপস্টিক বা হেয়ার কাট দেখাতে সেলফি তুলতে পারেন। সারাক্ষণ সেলফি তোলার চেয়ে এমন বিশেষ উপলক্ষে সেলফি তুললে নিশ্চয় ভালো লাগবে। সেলফিকে ডাল-ভাত করে ফেললে বিশেষ কোনো উপলক্ষকে সেলিব্রেট করতে ভুলে যাবেন।

সেলফির জন্য প্রাকৃতিক আলো সবচেয়ে ভালো। যদি ঘরের মধ্যে থাকেন তবে জানালার সামনে বা পাশে গিয়ে দাঁড়ান- যেভাবে আলো অ্যাডজাস্ট হয় আরকি! এ ছাড়া বেড়াতে গেলে তো সেলফি হতেই পারে।

দাঁড়ানোর ভঙ্গি কেমন হবে? সেটা আপনিই পরখ করে দেখুন। বেশির ভাগ সেলফিতে ফিশবোল ইফেক্ট থাকে। এর কারণ হলো ক্যামেরা যত সম্ভব নিজের থেকে বেশি দূরে সরানো। ছবিটি কাছ থেকে নিন। দেখবেন এমনটি হচ্ছে না। আবার মুখ একদম সোজা করে রাখা কেমন যেন। মাথার অ্যাঙ্গেল ৩-৪ হলে ভালো।

এ ভঙ্গিটি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। সেলফিতে সতেজ ভাব বজায় রাখুন। ক্লান্ত, বিরক্ত অবস্থায় সেলফি তুললে পরে নিজের মেজাজই খারাপ হয়ে যাবে। তাই ওই সময় সেলফির চিন্তা মাথায় এলেও হাত যেন না চলে। তবে নিজেকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইলে আলাদা কথা।

মন ফুরফুর থাকলে সেলফির মজা। আর যদি চেহারায় রহস্যময় রহস্যময় আনা যায়, তবে তো কথা নেই। মূল কথা হলো ফুর্তির আমেজে সেলফি তুলতে পারেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর