শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
নাসরিন আউয়াল মিন্টু

ফ্যাশনে সৌন্দর্য

ফ্যাশনে সৌন্দর্য

নাসরিন ফাতেমা আউয়াল মিন্টু। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ নারী উদ্যোক্তা তিনি। দেশের নারীদের নিয়ে কাজ করা ও তাদের স্বাবলম্বী করে তোলার চিন্তা থেকে ২০০০ সালে তার হাত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় নারী উদ্যোক্তাদের প্রথম কোনো অ্যাসোসিয়েশন- উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ওয়েব। তার আদ্যোপান্ত জানাচ্ছেন- সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

ছবি তুলেছেন- শিশির জাহাঙ্গীর

সত্যের প্রতি এক অন্যরকম টান ছিল ছোট্ট মেয়েটির। আর তাই বড় হয়ে চারপাশের সব মিথ্যা, ভুল আর অন্যায়কে সরিয়ে দিয়ে সত্যকে সবার সামনে বের করে আনার ইচ্ছা ছিল তার। খুব ছোটবেলা থেকেই আকর্ষণ ছিল ক্যামেরা আর আইনের চোখা যুক্তিগুলোর দিকে। হতে চেয়েছিল সাংবাদিক অথবা আইনজীবী। কিন্তু সে তো ছোটবেলার কথা। এখন? না! এখন সেই ছোট্ট মেয়েটি আর ছোট্ট নেই। ছোট্ট নেই তার ভালোবাসার জায়গাটাও। সেখানে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। হাজার হাজার নারী।

তিনি উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের [ওয়েব] চেয়ারপারসন নাসরিন ফাতেমা আউয়াল মিন্টু। নারীদের নিয়ে, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে এমন কিছু করার কোনো ইচ্ছা ছিল কি তার ছোটবেলায়?

‘ছোটবেলা থেকেই সবাইকে সাহায্য করতাম। কাউকে খাবার দেওয়া, কাপড় দেওয়া- এমনটা প্রায়ই করতাম। তবে নারীদের নিয়ে কাজ করব এটা কখনো ভাবিনি। হয়তো আমার অবচেতন মনের ভিতরে সেটা রোপিত ছিল কোথাও। নারীদের নিয়ে কিছু করার ইচ্ছাটা।’ বললেন তিনি। আর তার এই অবচেতন মনের ইচ্ছাটা তখনই সামনে আসে যখন সমাজের আরেকটা সত্যিকে দেখতে পান তিনি। ‘সমাজে নারীরা প্রচণ্ড অবহেলিত ছিল। তাদের অনেকে কাজ করার চেষ্টা করলেও পারত না কিছু সাহায্যের অভাবে। নারীদের নারী বলে আলাদাভাবেই অবহেলা করা হতো। তখন আমি ত্রাণ দেওয়ার কাজে কুড়িগ্রামসহ দেশের নানা স্থানে যেতাম। সে সময় খুব খেয়াল করতাম নারীদের। ওরা কাঁথা বানাচ্ছে, ঝুড়ি বানাচ্ছে, পাটি বানাচ্ছে। যেগুলোর অনেক মূল্য। কিন্তু সেটা তারা জানত না। তারা কেবল তৈরি করত আর তাদের স্বামীরা তা বাজারে বিক্রি করে টাকাটা নিয়ে হয় খরচ করত কিংবা ব্যাংকে জমা রেখে দিত। কিন্তু আমি চেয়েছি টাকাটা নারীদের হাতে থাকুক।’

 

 

২০০০ সালে সম্পূর্ণ আনকোরা একটা ধারণা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বর্তমানে অনেকটা সামনে চলে এসেছে নাসরিন আউয়াল মিন্টুর প্রতিষ্ঠান ওয়েব। নারী মুক্তির পথে বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশকে সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের রোল মডেল হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। তবে নিজের এই সাফল্যের পেছনে কেবল নিজেকে নয়, এই সফল নারী উদ্যোক্তা কৃতিত্ব দেন নিজের পরিবার আর বাংলাদেশের সব নারীকেও। পরিবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে সন্তুষ্টিমাখা কণ্ঠে জানান তিনি- ‘আমি আশীর্বাদপ্রাপ্ত। আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার স্বামী বা আমার বাচ্চারা কখনোই আমাকে বাধা দেয়নি। বরং আমার দরকারে তারা নিজেদের প্রয়োজনীয় কথা লুকিয়ে আমাকে কাজ করতে দিয়েছে। যাতে আমি চিন্তায় না পড়ি।’

তবে সবার আগে নিজের আজকের এ অবস্থানে আসার মূল প্রেরণা আর আদর্শের কথা জানান নাসরিন আউয়াল মিন্টু। আর সেই আদর্শের নাম মা। মাকে নিয়ে বলতে গিয়ে আনন্দ ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে। ‘মাকে সব সময় দেখতাম। আজকে যা কিছু আমি হয়েছি সেটা মাকে দেখেই শিখেছি।’

আর মায়ের হাতের রান্না? হাসেন নাসরিন আউয়াল মিন্টু।

 

 

‘মায়ের হাতের রান্না তো সবার কাছেই অনেক স্পেশাল। আমার মায়েরটাও তাই ছিল। খুব চমৎকার রাঁধতেন মা। বিশেষ করে করলা আর শুক্তোটা।’

মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ আজও ভুলতে পারেননি নাসরিন আউয়াল মিন্টু। মায়ের কাছ থেকে রান্না শেখা একজন অভিজ্ঞ বাবুর্চিই সব সময় রান্না করে তার জন্য। তবে বাসায় তিনি নিজেও টুকটাক রান্না করেন।

‘মুন্সীগঞ্জের মেয়েরা নাকি চামচ নাড়লেই রান্না ভালো হয়ে যায়- এমন একটা কথা আছে। তবে আমি খুব একটা রান্না করতে পারি না এখন। করলেও বাচ্চারা আমার হাতের রোস্টটা খেতে খুব ভালোবাসে। আর কাচ্চি বিরিয়ানিটা বেশ ভালো রাঁধতে পারি আমি।’ নিজের রান্না নিয়ে বলতে গিয়ে মুচকি হাসেন তিনি।

তবে খাবারের ক্ষেত্রে দেশি খাবার পছন্দ করেন নাসরিন। কোরিয়ান খাবারটাও ভালো লাগে তার। যদিও ভ্রমণের জন্য কোরিয়া নয়, মঙ্গোলিয়াকেই এগিয়ে রাখেন তিনি পছন্দের দেশ হিসেবে। আর নিজের দেশ?

বাংলাদেশের সিলেট আর দাগনভ‚ঞার মতো সৌন্দর্য আর কোথাও নেই বলে মনে করেন তিনি। আর ভ্রমণে ট্রেনটাকেই সবচেয়ে আরামদায়ক মাধ্যম হিসেবে মনে করেন তিনি। সাধারণত শাড়ি পরতে চেষ্টা করলেও আরাম আর কাজের সাহায্যের জন্য সালোয়ার-কামিজটাই ব্যবহার করেন নাসরিন আউয়াল মিন্টু। সেই সঙ্গে নিজের চশমা, ঘড়ি, সামান্য মেকআপ আর একটু সুগন্ধি। তবে পরিপাটি থাকতে ভালোবাসেন এই নারী।

‘যেটা পাই সেটাই ব্যবহার করি। তবে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করি।’ সাজগোজ নিয়ে বলেন নাসরিন।

তবে সাজগোজের ক্ষেত্রে খানিকটা অবহেলা থাকলেও লিখতে, গান গাইতে আর পড়তে খুব ভালোবাসেন নাসরিন আউয়াল মিন্টু। সময় পেলেই বই, বিশেষ করে ঐতিহাসিক ঘটনাসম্বলিত বই নিয়ে বসে পড়েন তিনি। কিংবা শুনতে চেষ্টা করেন কোনো ভালো একটা গান।

দেশকে আর দেশের নারীদের নিয়ে নিরন্তর কাজ করে যাওয়া এই নারী সামনে নারীদের জন্য আলাদা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে চান। চান আরও ভালো কিছু করতে।  নিজের ভাবনা নিয়ে বলতে গিয়ে আশাভরা কণ্ঠে জানান নাসরিন আউয়াল মিন্টু- ‘যে চিন্তার ওপর ভিত্তি করে ওয়েব প্রতিষ্ঠা করেছিলাম, যখন সেটা কেউ ভাবতে ও করতে পারেনি। আমাদের সেই চিন্তার পুরোটা যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলেই আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনটাকে হাতের নাগালে পাব।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর