শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
পাহাড়ি ঝরনা - চন্দ্রনাথ মন্দির - ইকোপার্ক

সীতাকুণ্ডের পাহাড়-ঝরনা

ঘুরে বেড়াই

সীতাকুণ্ডের পাহাড়-ঝরনা

সীতাকুণ্ড প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম একটি তীর্থস্থান। পূর্বদিকে সুবিশাল সমুদ্র, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে প্রাচীন মন্দির আর পাহাড়ি ঝরনা। মেঘ-পাহাড়ের সীতাকুণ্ডে সারা বছরই মেঘের খেলা করে। চারদিকে চিরহরিৎ সবুজের বাগান, ছোট-বড় পাহাড়-টিলা সব মিলিয়ে অপরূপ-

 

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের নাম আসলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পাহাড় ও সমুদ্রের মিলনে এক অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সাগরের রুপালি জলরাশির পাশে শুধু সবুজ আর সবুজ। পাহাড়গুলো নান্দনিকতায় পূর্ণ। সীতাকুণ্ডের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেকোনো ভ্রমণকারীকে খুব সহজেই আপন করে নেয়। সীতাকুণ্ডের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম চন্দ্রনাথ পাহাড়। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক, একমাত্র গরম পানির ঝরনা ছাড়াও আশপাশের এলাকা অসাধারণ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর।

 

► কিভাবে যাবেন : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার পথেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার সিটি গেট থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব। ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামে প্রবেশের আগেই পড়বে সীতাকুণ্ড শহর। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের যে কোনো বাসে করেই সীতাকুণ্ড যেতে পারেন। এরপর ফকিরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি কিংবা অটোরিকশা দিয়ে সীতাকুণ্ড যেতে পারবেন।

 

► কোথায় থাকবেন : সীতাকুণ্ডে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। সারা দিন ঘোরাঘুরি করে রাতে চলে আসতে হবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম শহরের যে কোনো মানের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন। থাকা-খাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন মান ও দামের আবাসিক হোটেল-মোটেলের সুব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড অথবা ভাটিয়ারীতে থাকার জন্য আবাসিক সুব্যবস্থা রয়েছে।

► দর্শনীয় স্থানসমূহ : সীতাকুণ্ডের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র হলো চন্দ্রনাথ পাহাড়। দেশের একমাত্র গরম পানির ঝরনাও এই চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত। এ ছাড়া ইকো পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেনও রয়েছে এখানে।

সীতাকুণ্ড বাজার থেকে পূর্ব দিকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই চন্দ্রনাথ পাহাড়। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়-চূড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান

 

 

হিসেবে খ্যাত। এটি পর্যটক আকর্ষণেও অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে সীতাকুণ্ডের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবার নজর কাড়ে। সীতাকুণ্ডের প্রবেশদ্বার পেরুলেই ডানপাশে দেখা মিলবে কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি ভাস্কর্য। পাহাড়-সমুদ্র ও ঝরনার মাখামাখির দৃশ্য দেখে কবি মুগ্ধ হয়ে যান। সবুজে সমারোহ এই সীতাকুণ্ডে সারা বছরই মেঘে ছেয়ে থাকে। পাশেই বিশাল সমুদ্র আর পাহাড়-সবুজের মাখামাখিতে এখানে মেঘের খেলা চলে হরহামেশাই। বর্ষার সময় তো আরও বেশি থাকে।

চারদিকে চিরহরিৎ সবুজের সমারোহ, ছোট-বড় পাহাড়-টিলা আর সামনে একটু নিচু এক পাহাড়ের চূড়ায় একটি মন্দির দেখতে একবারে খেলনা বিন্দুর মতো। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরের একটি প্রাচীন ও বিখ্যাত মন্দির।

সীতাকুণ্ড অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভ‚মি। এলাকাটিকে হিন্দু এলাকাই বলা চলে। সীতাকুণ্ড বাজার দিয়ে ছোট্ট মেঠোপথ গিয়ে ঠেকেছে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। মাত্র ২ কিলোমিটার দূরত্বে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২০০ ফুট উঁচু কাঁচা মাটির পথ পেরিয়ে মন্দিরে যেতে হয়। চন্দ্রনাথ মন্দির হিন্দুদের জন্য এক পবিত্র স্থান। যার পুরো নাম ছিল সীতার কুণ্ড মন্দির। দক্ষিণে বিস্তীর্ণ সাগর আর পাহাড়ের সৌন্দর্যে আবৃত এই মন্দির। মন্দিরের পথ ধরে প্রথমেই পড়বে ভবানী মন্দির। তারপর শয়মভুনাথ, এরপরই দুর্গম এলাকার পাহাড় কেটে বানানো উঁচু সিঁড়ি। পথে পড়বে বটগাছের প্রাচীন দুটি মন্দির। পুরো দৃশ্যটিই যে শিল্পীর নিখুঁত কারুকাজ।

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক। ৯৯৬ একর উঁচু-নিচু পাহাড় বেষ্টিত এই পার্কে রয়েছে অসংখ্য প্রজাতির গাছ-গাছালি ও পশুপাখি। মায়া হরিণ, ভাল্লুক, শূকর, শিয়াল, হনুমান, বন্য কুকুরের চলাফেরার দৃশ্য আপনার মনে বিশালতার এক অনুভ‚তির জম্ম দেবে! স্মৃতিবিজড়িত এ পাহাড় ঘেরা বন-বনানীতে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদও। পাহাড় বেয়ে চলা মাঝে মাঝে পিচঢালা পথের পাশে মোটেলে বিশ্রাম হয়তো আপনাকে দেবে অনাবিল আনন্দ।

সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের ভেতর দিয়ে ঝিরি পথ ধরে হাঁটতে একটু কষ্টই হবে। জায়গাটা বেশ নির্জন। এ পথে প্রায় ১৫ মিনিট হাঁটার পর ঝরনাধারার শব্দ কানে ভেসে আসবে। একটু সামনে এগুলেই নিজের চোখকে হয়তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। পাহাড়ের আড়ালে লুকানো এত সুন্দর ঝরনা! পুরো ঝরনাটিই হরম পানির ঝরনা হিসেবে পরিচিত। এক পাশ থেকে সুপ্তধারার উপরেও ওঠা যায়। তবে সেটা খুবই বিপজ্জনক। কারণ এখানকার পুরো জায়গাই পাথুরে। অনবরত পানি পড়ার কারণে সেখানে পাথরের উপরে শেওলা জমে থাকে। আরও একটু উপরে উঠে আবার নিচে নেমে সহস্রধারা ঝরনা। এরও নামের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। স্থানীয়দের কাছে এটির নাম বড় ঝরনা। একটি মাত্র ধারা পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবাহমান এখানে। এ ঝরনায় যেতে হলেও পাহাড়ের নিচে নামতে হয়। আর পথটাও বেশ দুর্গম।

 

► সতর্কতা : সীতাকুণ্ড ইকোপার্কটি বেশ নির্জন জায়গা। আশপাশের এলাকা জনবহুল হলেও এখানটি বেশ নির্জন। তবে পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে সবুজ-পাহাড়ের সীতাকুণ্ডে। এখানে ঝরনাগুলোর আশপাশ ও ঝিরি পথ বেশ শ্যাওলাযুক্ত। জায়গাগুলোতে তাই সাবধানে চলতে হবে। বর্ষাকালে যে কোনো সময় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর