শিরোনাম
শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মেঘ-পাহাড়ের মিতালি

ফ্রাইডে ডেস্ক

মেঘ-পাহাড়ের মিতালি

মেঘ পাহাড়ের দেশ সাজেক। পাহাড়ের কোলে ঘুমায় শুভ্র-সাদা মেঘ। যেখানে নয়নাভিরাম অরণ্যভূমি আর পাহাড়ের বন্ধনে মেঘের দল মেতে থাকে আপন প্রেমে। হাত বাড়ালেই মেঘ ছুঁয়ে যাওয়ার মনমুগ্ধতা আর দূরের মিজোরাম পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জেগে ওঠে ঘন সাদা কুয়াশা।

 

বাংলাদেশ ও ভারতের মিজোরাম সীমান্তঘেঁষা অপরূপ সাজেক ভ্যালি প্রকৃতির কোলে স্বর্গীয় পর্যটনস্থান। দার্জিলিংয়ের প্রতিচ্ছবিই বলা চলে সাজেককে। পাহাড়-মেঘ আর নীল আকাশের মিলনমেলা মন কেড়ে নেয় আগত পর্যটকদের। শীতের সময় তো সাজেকের রূপ-বৈচিত্র্য স্বপ্নরাজ্যে রূপ নেয়। দূরের পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঘন সাদা কুয়াশা আর পর্যটকদের ছুঁয়ে চলা মেঘ খুব সহজেই মন কেড়ে নেয় ভ্রমণপিপাসুদের। তাই এই শীতে ঘরে বসে না থেকে ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটির অপরূপ সৌন্দর্য সাজেক থেকে।

♦ কিভাবে যাবেন : সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায়। তবে রাঙামাটি থেকে সড়ক যোগাযোগ না থাকায় সাজেক যেতে হয় খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে। সাজেকের পথে দীর্ঘ ৬৭ কিলোমিটার পাহাড়ি সড়কের দুপাশের প্রকৃতি পর্যটককে মুগ্ধ করে। ঢাকা থেকে শ্যামলী, সৌদিয়া, ঈগল, এস. আলম কোচে করে সরাসরি খাগড়াছড়ি কিংবা দীঘিনালা  যাওয়া যায়। ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।

♦ সাজেকের পথে : খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা থেকে পেয়ে যাবেন ঐতিহ্যবাহী চাঁদের গাড়ি (জিপগাড়ি)। চাঁদের গাড়িতে সাজেক যাওয়ার আনন্দ সত্যিই অন্যরকম! কাচালং, আচালং নদী অতিক্রম করে দীর্ঘ এই ভ্রমণ মুহূর্তের জন্যও খারাপ লাগে না। ভাড়া নেবে ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা। সিএনজি কিংবা মোটরবাইকও পেয়ে যাবেন। সাজেক যাওয়ার পথে বাঘাইহাট জোনে নাম, ঠিকানা মোবাইল নম্বর এন্ট্রি করে যেতে হয়। সাজেক থেকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে কংলাক ঝরনা ও আচালং নদীতে।

♦ থাকা-খাওয়া : রাতে সাজেক থাকতে হবে। তবে সেখানে থাকার জায়গা অপ্রতুল। থাকার জন্য এখানে বিজিবি পরিচালিত রূনময় রিসোর্ট, সেনাবাহিনী পরিচালিত সাজেক রিসোর্ট, আলোর রিসোর্ট ও ক্লাব হাউস রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়     পাহাড়িরা তৈরি করে রেখেছেন কাঠের তৈরি বেশকিছু কটেজ। স্থানীয়রা স্বপ্নস্বর্গ সাজেক-কে কেন্দ্র করে অনেক খাবারের রেস্তোরাঁ তৈরি করে রেখেছে। লুসাই, পাংখোয়া এবং ত্রিপুরা আদিবাসীদের তৈরি এসব কটেজ ও খাবার দোকানে বছরজুড়েই থাকে ভিড়।

♦ দর্শনীয় স্থান : সাজেক আয়তনে ৬০৭ বর্গ মাইল। রুইলুই পাড়ায় এক অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি। এটাই সাজেক উপত্যকার মূল কেন্দ্র। দীঘিনালা থেকে সাজেক যেতে পথিমধ্যে চোখে পড়বে ঢেউ খেলানো অসংখ্য উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের বুক চিরে আপন মনে বয়ে চলেছে কাচালং ও মাচালংসহ নাম না-জানা অসংখ্য নদ-নদী। নদীতে ভাসছে বাঁশের চালি। রাস্তার দু-ধারে পাহাড়িদের বসত বাড়ি, মাচাং ঘর ও পাহাড়ি মানুষের বিচিত্র জীবনধারা। এখানে লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। পাড়ার সবগুলো বাড়ির রং লাল-সবুজ। সৌন্দর্যের টানে এখানে বহু পর্যটক বেড়াতে আসেন। হারিয়ে যেতে চান মেঘ-পাহাড়ের মিতালির মাঝে।  শহরের আদলে তৈরি ফুটপাথ একেবারে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি। পথের পাশে পাহাড়িদের বাড়িঘর নান্দনিকভাবে সাজানো। এখান থেকে উপত্যকা অঞ্চলে তুলার মতো ভাসমান মেঘ দেখার মজাই আলাদা। দূরের পাহাড়ে মেঘের গড়াগড়ি দেখলে মনে হয় এ যেন মেঘের রাজ্য। পাহাড়ের পাদদেশের ঝরনাটা প্রকৃতির উপহার। কংলাক ঝরনা দেখতে নামতে হবে পাহাড়ের ঢালে। পেরুতে হবে ঝিরির পানিতে ঢাকা পাথুরে পথ। রোমাঞ্চপ্রিয়দের ঘোরার জন্য হতে পারে আদর্শ জায়গা। পথজুড়ে কাশবনের সাদা মায়া। পাহাড়ের গায়ে কেবল সবুজ আর হলুদ জুম খেতের দৃশ্যপট। পুরোটা পথ ঘন জঙ্গল আর প্রাচীন বৃক্ষে ঢাকা। বড় বড় লতা দেখে মনে পড়ে যাবে টারজানের গল্প। উঁচু পাহাড়ে খাঁজ বেয়ে উপর থেকে দুভাগে পড়ছে ঝরনা। সুনসান নীরব পাহাড়ের মধ্যে একমাত্র শব্দ যেন এই জলের ধারা। উপরের দিকে তাকাতে ঝরনাটাকে বড়ই বিস্ময় মনে হবে। যেন সত্যিকারের আদিমতা ঘিরে রেখেছে পুরো প্রাকৃতিক রাজ্য! মেঘে ঢাকা এমন একটা বিস্তৃত ভ্যালির বুকে এমন ঝরনা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

♦ প্রয়োজনীয় তথ্য : সাজেক অনেক দুর্গম জায়গা। এখানে সৌরবিদ্যুৎ ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। উঁচু জায়গা বলে খাবার পানির সংকট রয়েছে। তাই খাবার পানি সঙ্গে নেওয়াটাই ভালো।

সাজেকের প্রকৃতি অপরূপ। তাই প্রকৃতি যাতে তার মতো করে সুন্দর থাকতে পারে সে দায়িত্বটাও আমাদের। সুন্দর হোক আপনার ভ্রমণ, সুন্দর থাকুক প্রকৃতি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর