শুক্রবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

লেদার জ্যাকেটে বাজিমাত

আবদুল কাদের

লেদার জ্যাকেটে বাজিমাত

► মডেল : সামী ও জান্নাত জেনি ► পোশাক : ডিমান্ড ► মেকওভার : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড ► ছবি : আলিফ ও অরণ্য জিয়া

শীত মানেই ফ্যাশনের আদর্শ সময়। আর লেদার বিনা শীত ফ্যাশনে পূর্ণতা আসে না। হাল ফ্যাশনে নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছুতেই লেদারের ছোঁয়া না লাগলেও নিজস্ব ফ্যাশন স্টেটমেন্টে তো থাকা চাই-ই চাই। তেমনি শীত অনুষঙ্গ লেদার জ্যাকেট। লেদার জ্যাকেট শুধু ফ্যাশনই নয়, ব্যক্তিত্ব ও আভিজাত্যের প্রতীকও। নিজস্ব লুকসে আনে রক অ্যান্ড রোল। এ কারণে শীতের হাল ফ্যাশনে লেদারের জ্যাকেট সবার পছন্দের।

 

প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ চামড়া ব্যবহার করত। কালের বিবর্তনে সেই চামড়ার ব্যবসা আধুনিকতার ছোঁয়ায় রূপ নিয়েছে লেদার শিল্পে। রাতারাতি ভোল পাল্টে হয়ে উঠেছে ব্যবহারযোগ্য স্টাইলিশ স্টেটমেন্ট। লেদার জ্যাকেট সেই শিল্পের অন্যতম ফ্যাশনেবল অনুষঙ্গ।  লেদার জ্যাকেট দেখতে যেমন ফ্যাশনেবল তেমনি শীত নিবারণের পাশাপাশি এনে দেয় আভিজাত্যের ছোঁয়া।

 

শীতে সব তরুণ-তরুণীর কাছেই লেদারের জ্যাকেট বেশ জনপ্রিয়। তাই তো শীতের অন্যতম অনুষঙ্গ চামড়ার তৈরি এসব ফ্যাশনেবল লেদার জ্যাকেটে আনা হয়েছে নতুনত্ব। বাজারে পাতলা ও মোটা দুই ধরনের লেদারের জ্যাকেটই পাওয়া যায়। যা কিনা পিওর সিনথেটিক এবং মিক্সড লেদার নামেই বেশি পরিচিত। লেদারের জ্যাকেটের প্যাটার্নেও রয়েছে ভিন্নতা। যেমন— ভেলেন্ট লেদার রাইডিং জ্যাকেট, ইলাস্টিক, বোম্বার স্টাইল, মোটরবাইক, পুলিশ জ্যাকেট, পাঙ্ক, রকস্টার, লেদারের জ্যাকেট ইত্যাদি।

 

মূলত গরুর চামড়ার তৈরি লেদারের জ্যাকেট সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তবে, ভেড়ার চামড়ার জ্যাকেট বেশ আরামদায়ক এবং দামেও বেশ চওড়া। বাজারে র্যাকসিনের জ্যাকেটও রয়েছে। দামে সহজলভ্য হলেও খুব একটা টেকসই হয় না রেক্সিনের তৈরি এসব জ্যাকেট। বাজারে সিনথেটিক বা আর্টিফিশিয়াল লেদার দেখতে অবিকল হলেও অরিজিনাল পাওয়াটা মুশকিল। আসল চামড়ার জ্যাকেটের দাম কিছুটা বেশি।

 

লেদারের জ্যাকেট সম্পর্কে ডিমান্ড ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনার ও কর্ণধার রাসেল বলেন, ‘তারুণ্য এখন ফ্যাশনে চায় ভিন্ন আমেজ। স্টাইলিশ প্যাটার্নের পাশাপাশি এলিট লুক, তাই এখন কফি, মেরুনের মতো ডার্ক এবং ডিফারেন্ট কালারগুলো বেশি চলছে। এ ছাড়াও কালো, সবুজ, ধূসর, রঙের লেদারের জ্যাকেট তো আছেই। হাল ফ্যাশনে চেক, স্ট্রাইপসহ ফেব্রিকে বিভিন্ন ধরনের নকশা বেশ চলছে।’

 

ছেলেদের লেদারের জ্যাকেটে জিপার, ওয়েল্টেট পকেট, বাটনে এসেছে ভিন্নতা। দুই কিংবা চার বোতামের এসব জ্যাকেট তারুণ্যের ফ্যাশনে এনে দেয় এলিট লুকস। একরঙা জ্যাকেটের চাহিদা বেশি হলেও অনেক জ্যাকেটে আবার এম্ব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক ও মেটাল, বাকলসহ নানা কিছু যোগ হচ্ছে। বোতাম ও পকেটের নান্দনিকতায় বাহারি কাটিংয়ের জ্যাকেটগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে চমৎকার লাইনিং।

রয়েছে হুডি লেদারের জ্যাকেটও। প্রচণ্ড শীতে ঝটপট হুডি তুলে নেওয়া যাবে যখন তখন। তাছাড়া স্লিভলেস লেদারের জ্যাকেটও অনেক তারুণ্যের পছন্দ। ডেনিমের সঙ্গে টি-শার্ট কিংবা ফুলস্লিভ টি-শার্টের ওপর জড়িয়ে নিতে পারেন স্লিভলেস লেদারের জ্যাকেট। সেক্ষেত্রে দৃষ্টিনন্দন বোতাম আপনার জ্যাকেটের শোভা বাড়িয়ে দেবে।

 

ক্যাজুয়াল কিংবা ফরমাল

ক্যাজুয়াল লুকসে লেদারের জ্যাকেট পার্টি-গেট টুগেদারে তো বটেই, অফিসিয়াল ফরমাল গেট আপেও বেশ মানিয়ে যায়। আভিজাত্য প্রকাশ করে আপনাকে স্টাইলিশ করে তোলে এই লেদার জ্যাকেট। অফিসিয়াল পরিবেশে ফরমাল শার্ট ও প্যান্টের সঙ্গে লেদারের জ্যাকেট ভালো মানায়। আবার ক্যাজুয়াল জিন্স, টি-শার্ট কিংবা শার্টের সঙ্গেও অনায়াসে চাপিয়ে নিতে পারেন লেদারের জ্যাকেট। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের জন্যও রয়েছে রকমফের লেদার জ্যাকেট। ওয়েস্টার্ন আউটফিট লুকসের জন্য অবশ্যই ট্রাই করতে পারেন এসব জ্যাকেট। লেদারের জ্যাকেটগুলো জিন্স, টপসের পাশাপাশি সালোয়ার-কামিজেও বেশ মানিয়ে যায়। আবার জিন্স, জেগিংস, টপস, টি-শার্ট, স্কার্টসহ ওয়েস্টার্ন পোশাকের সঙ্গে বেছে নিতে পারেন এই জ্যাকেট। খুব বেশি অসুবিধের নয় যদি প্যাটার্নটা বুঝতে পারেন।

 

সঠিক যত্ন

লেদারের জ্যাকেট যেমন ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক তেমনি যত্নের দিক থেকেও অনেক সেনসেটিভ। অযত্ন অবহেলায় দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। লেদারের জ্যাকেট কখনই বাসায় পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন না। পানি লেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মুছে রোদে দিন। তবে খুব কড়া রোদে একেবারেই না। সম্ভব হলে ভেতরের লাইনিং কয়েক বছর পরপর বদলে নিন। প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশ করে এমন স্থানে নরম কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখুন।

 

দরদাম

অন্যান্য জ্যাকেটের তুলনায় লেদারের জ্যাকেটের দাম বরাবরের মতোই একটু বেশি। আর্টিফিশিয়াল লেদারের জ্যাকেট ২৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা। ভালো মানের লেদারের জ্যাকেট ৪০০০-৭৫০০ টাকা। ব্র্যান্ডের লেদারের জ্যাকেট পাওয়া যাবে ৭,৫০০-১০,০০০ টাকায়।

 

ব্র্যান্ডের লেদারের জ্যাকেট কিনতে যেতে পারেন ডিমান্ড, ওয়েস্টেকস, ইনফিনিটি, ইজি, এক্সট্যাসি, ব্র্যান্ড কিউ, ফ্রিল্যান্ডসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমে।   যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাজা, সীমান্ত স্কয়ার, বঙ্গবাজার, টুইন টাওয়ার, নাভানা টাওয়ারসহ বিভিন্ন শপিং মল এবং মার্কেটেও পাওয়া যাবে নানা ধরনের লেদারের জ্যাকেট।

 

টি প স

স্মার্ট আউটলুকের জন্য রইল টিপস—

►  ছেলেমেয়ে সবার পছন্দ লেদার জ্যাকেট। বাজারে লেদার পিওর সিনথেটিক কিংবা মিক্সড সব রকমই জ্যাকেট পাওয়া যায়, যা অফিসে ক্যাজুয়াল ওয়্যার বা সন্ধ্যের পার্টিতে বা নৈশ আড্ডায় খুব জনপ্রিয়।

►   জম্পেশ একটা লেদারের জ্যাকেট আর জিন্স, জমে যাবে আপনার বোল্ড অ্যান্ড বিউটিফুল লুক। তবে অফিসে মেয়েদের ফুলস্লিভ জ্যাকেট না পরে পাতলা লেদারের ওয়েস্টকোট ফুলস্লিভ শার্ট বা পুলওভারের সঙ্গে পরলে ভালো মানাবে।

►   খয়েরি, মেরুন বাদ দিয়ে কালারফুল যে কোনো লেদারের জ্যাকেট কিনতে পারেন। সাদা লেদারের জ্যাকেটে সাবধানতা অবলম্বন করুন। কেননা, সাদা ময়লা টানে বেশি।

►   হালকা রঙের পোশাকের ওপর গাঢ় রঙের লেদারের জ্যাকেট ভালো লাগবে। পরনে চিনোস অ্যান্ড লোফার্স সঙ্গে গলায় জড়িয়ে নিন স্কার্ফ। এর ওপর লেদার জ্যাকেট এনে দেবে জেট-সেটিং লুক।

►   ডেনিম বা ফরমাল ট্রাউজারের সঙ্গে লেদার জ্যাকেটে বেশি মানানসই। ফরমাল ট্রাউজার্স ও টাইয়ের সঙ্গে ডাবল ব্রেস্ট লেদার জ্যাকেট নিয়ে আসবে ক্লাসিক লুক।

►   বড় বড় ফ্যাশন হাউস এবং লেদারের শো-রুমগুলোতে থাকছে বিভিন্ন রঙের লেদার প্যান্ট। সাধারণ প্যান্টের তুলনায় লেদারের প্যান্টের ঔজ্জ্বল্য ও ফিটিংস ভালো হয়। পরলে শরীরও থাকে উষ্ণ তবে অফিসে এগুলো না পরাই ভালো।  বড্ড বেশি ছেলেমানুষী মনে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর