শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

শীতে বাহারি শাল

ফেরদৌস আরা

শীতে বাহারি শাল

মডেল : শ্রাবন্তী রহমান ও কানিজ মুন ► পোশাক : রঙ বাংলাদেশ ► মেকওভার : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড ► ছবি : সামির খান বিল্লাল ► স্টাইলিং : আকাশ ► স্টুডিও : এক্সপোজ

শীত ঋতুতে আমাদের জীবনধারায় কিছুটা পরিবর্তন আসে। বিশেষ করে পোশাক-পরিচ্ছদে। শীত নিবারণের জন্য প্রয়োজন হয় শীতের পোশাকের। সোয়েটার, জ্যাকেট, ব্লেজার, শাল শীতবস্ত্র হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। শীত নিবারণের জন্য শালের চল বেশ পুরনো। সোয়েটার বা জ্যাকেট যাই থাকুক না কেন, শাল না হলে শীত যেন ঠিক জমে না।

 

শীতের সকাল কিংবা বিকাল কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারপাশে চাদরের উষ্ণতা ছাড়া কি আর চলে? শাল শীত পোশাক হিসেবে তো বটেই ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও আবাল-বৃদ্ধ সবারই পছন্দ। পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে শাল আপনার ফ্যাশনে আনবে বৈচিত্র্য। এক কথায় সোয়েটার বা জ্যাকেট যাই থাকুক না কেন, একটি শাল না হলে শীত যেন ঠিক জমে ওঠে না।

শীতের হিম হিম আবহে ফ্যাশন হোক কিংবা শীত নিবারণ যাই হোক না কেন, শীত নিয়ে কিন্তু সব বয়সীর থাকে আলাদা আগ্রহ। আর তাই তো শীতের এই সময়ে ফ্যাশনেবল হয়ে উঠতে চান কম-বেশি সবাই। কোট-ব্লেজার, জ্যাকেট, হুডিসহ আরও নানান কিছু থাকলেও শীত নিবারণে চাদরে উষ্ণতার আরামের তুলনাই নেই।

 

সেকেলের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে শীতবস্ত্র হিসেবে চাদরের ব্যবহার অনেক আগে থেকেই। সে সময় রাজা-মহারাজা ও অনেক অভিজাত শ্রেণির মানুষ কাঁধে ঝুলিয়ে নিতেন বাহারি কারুকাজ করা বিখ্যাত কাশ্মীরি শাল। আবার যাদের সহায় সম্বল কিছু ছিল তারাও এই চাদরের উষ্ণতার আরাম থেকে বাদ যেতেন না। তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে আশ্রয় হিসেবে গায়ে জড়িয়ে নিতেন মোটা ধরনের চাদর। হালকা বুননের পশমি শালেও কাবু করা যেতে পারে শীতকে। শুধু শীতের পোশাক হিসেবেই নয়, ফ্যাশন অনুষঙ্গ হিসেবেও আজকের প্রজন্মের কাছে চাদরের রয়েছে আলাদা কদর।

 

নগরীতে শীত যত জেঁকে বসছে, শীত অনুষঙ্গ চাদর-শালের কদরও ঠিক ততটাই বাড়তে শুরু করেছে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে চাদর পরা এখনকার ট্রেন্ড। প্রথমত, শীত নিবারণ করা যায় আবার ফ্যাশন ট্রেন্ডও বজায় থাকে। এ ছাড়া যে কোনো বয়সের মানুষই শাল ব্যবহার করতে পারেন। তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধাসহ সব বয়সের মানুষই শাল ব্যবহার করতে পারেন। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, জিন্স, ফতুয়া, স্কার্ট সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে যায় হাল ফ্যাশনের এসব শাল। বিভিন্ন রং, নকশা, কাটিং, ডিজাইন সব বয়সী নারীকে আকৃষ্ট করে। শীতে শাল গায়ে জড়িয়ে চলাফেরা করায় যে আরাম তা আর অন্য শীত পোশাকে নেই বললেই চলে। তাই শীতে তরুণ-তরুণীদের কাছে শালের গুরুত্বই আলাদা। সেকাল থেকে একাল-শীত ফ্যাশনে এখনো শালের কদর এতটুকু কমেনি, বরং শীতের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে শালে এসেছে রং ও নকশার অসংখ্য বৈচিত্র্য।

 

বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণী উভয়ের কাছেই শালের কদর লক্ষণীয়। ছেলেমেয়ে উভয়ই এখন শীতের ফ্যাশন হিসেবে চাদর ব্যবহার করেন। অনেকেই ফ্যাশনের পাশাপাশি এই শালকে সব সময়ের জন্য ব্যবহার করেন। হিমেল হাওয়ায় ঘুরতে বের হন, কাছাকাছি কোথাও ঘুরে বেড়ানোর জন্য শালটা জড়িয়ে নিলেন তাও আবার পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং করে। দেখতে আকর্ষণীয় তো লাগবেই ফ্যাশনেও আসবে ভেরিয়েশন। তা ছাড়া ফ্যাশনের আলাদা লুক আনার জন্য বেছে নিতে পারেন একটি রঙিন চাদর। বন্ধুদের আড্ডায় মেতে উঠতে শীত ফ্যাশনের শালও হয়ে উঠতে পারে ফ্যাশনেবল আইকন। আর এখনকার শীত উৎসবে শালের রং আর ডিজাইনে আনা হয়েছে নানারকম পরিবর্তন। হালকা শীতে পাতলা একটা শাল কিংবা চাদর ছেলে-মেয়ে উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন। চাদরের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে চাইলে এটাকে মাফলার হিসেবেও চালিয়ে নিতে পারবেন।

 

শীতে ছেলেদের ফ্যাশনে চাদর যেমন ব্যতিক্রমী লুক আনে তেমনি মেয়েদের ফ্যাশনেও আনে নতুনত্ব। এমনিতেই বাঙালি নারীকে শাড়িতেই বেশি মানায়। এর সঙ্গে শীত পোশাকের সামঞ্জস্য থাকলে নারীকে আরও নান্দনিক দেখায়। সব ঋতুতেই বাঙালি মেয়েদের প্রথম পছন্দ শাড়ি। যে কোনো পার্টি বা গেট টুগেদারে তারা শাড়ি পরতে ভালোবাসেন। সময়ের পালে এখন জায়গা করে নিয়েছে জমকালো বা ফ্যাশনেবল নানা নান্দনিক ডিজাইনের শাড়ি। তবে শীতের সময় শাড়ি পরে ঠাণ্ডায় টিকে থাকা সত্যিই কষ্টকর। এ জন্য চাই মানানসই এমন পোশাক যা দিয়ে দুই কাজ হবে।

 

কর্মজীবী নারীরা যারা শাড়ি কিংবা থ্রি-পিস পরেন তারা পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চাদর ব্যবহার করতে পারেন। থ্রি-পিসের সঙ্গে ওড়না হিসেবে এটা বেশ মানানসই। তবে ঢাকা শহরে শীতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত কয়েক বছর হালকা বা পাতলা শাল ফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে বেশ ভালোভাবেই। হালকা শীতে এই শালগুলো যেমন আরাম দেয়, তেমনি বহন করতেও সুবিধা। অনেকে ওড়নার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন নানা রং আর ডিজাইনে তৈরি এসব শাল।

 

তবে ছেলেদের ফ্যাশনে চাই ভিন্ন মাত্রা। তাই শার্ট, টি-শার্ট এবং পাঞ্জাবি যাই হোক না কেন, একটা বাহারি শাল চাদর পরতে পারেন। এবারে চাদরের রঙের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে নীল, খয়েরি, কফি, ম্যাজেন্টা, বাদামি, অফ হোয়াইট ইত্যাদি। চমৎকার বুনন আর ডিজাইনে তৈরি করা হচ্ছে নজরকাড়া সব চাদর বা শাল। দেশি শালের মধ্যে বাঙালি মেয়েদের প্রথম পছন্দ খাদি শাল। বেয়াড়া শীতকে বশ করতে খদ্দর বা উলের মোটা চাদর বেছে নিতে পারেন। সিল্ক, খাদি, পশমি সুতা, মোটা সুতি ইত্যাদি কাপড়ের ওপর কাজ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসগুলোর শীতের শাল। এসবের বাইরেও বিদেশি শাল লুধিয়ানা, জয়পুরি, চায়নিজ, বার্মিজ ও ইরানি শালও হতে পারে আপনার শীতের পরশ। কাশ্মীরি শালের মধ্যে পশমিনা শাল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। নেপাল থেকেও পশমিনা সংগ্রহ করেন কেউ কেউ। এখন দেশেও তৈরি করা হচ্ছে পশমিনা শাল।

 

এবারের শীতের পাতলা কাপড়ের প্রাধান্য বেশি। কারণ, শীত এবার খুব বেশি নয়। এরপর বেশি শীতের জন্য থাকছে উলেন কাপড়ের শাল। এ ছাড়া সুতা, চুমকি, পুঁতি, অ্যামব্রয়ডারি, ব্লক প্রিন্ট, টাইডাই, স্ক্রিনপ্রিন্ট, স্কেচ, কাশ্মীরি শাল এবং জরির কাজ করা শাল তো আছেই! থাকছে নানা বাহারি রকমের সেলাই ও নকশার কারুকাজ।

 

বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে রয়েছে এর আলাদা চর্চা। দেশি-বিদেশি এসব শালের মধ্যে মেয়েদের জন্য করা হয়েছে আলাদা নকশা। সাধারণত মেয়েরা ফুল, পাখির নকশা বা বিভিন্ন রঙের সুতায় নকশা করা শাল পছন্দ করেন। প্রয়োজনের তাগিদে পথচলা শুরু হলেও এখন চাদরের পালে লেগেছে নতুনত্বের ছোঁয়া। তরুণরাই এখন চাদরের ব্যবহারে এগিয়ে আছে। রংবেরঙের চাদর হয়ে উঠেছে ফ্যাশন ও স্টাইলিংয়ের অনুষঙ্গ। ছেলেরা এখন শার্ট, পাঞ্জাবি, জিন্সের সঙ্গে চাদর বেশ পরছে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে চাদর পরার চল নতুন নয়। জমকালো পার্টিতে পরতে পারেন ভারী কাজ করা ঝলমলে চাদর। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য হালকা রং বেছে নিতে পারেন।

 

দেশি ফ্যাশন হাউস রং বাংলাদেশ, দেশাল, নিত্য উপহার, আড়ং, দেশীদশ, বাংলার মেলাসহ অন্যসব হাউসে মিলবে বাহারি শাল। কাপড় আর ডিজাইনের ভিন্নতায় শালের দামও ভিন্ন ভিন্ন। পছন্দসই শাল পেয়ে যাবেন ৫০০ টাকা থেকে ৮০০০ টাকার মধ্যে।  তাছাড়া ঢাকা ও জেলা শহরগুলোর বিভিন্ন শপিংয়ে সাশ্রয়ী দামে পেয়ে যাবেন পছন্দসই নানা ডিজাইনের বাহারি পাতলা চাদর কিংবা শাল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর