শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কটিতে নিউ লুক

কটিতে নিউ লুক

লেখা : তানিয়া জামান, ►পোশাক : লা রিভ

পোশাকের সৌন্দর্য বাড়াতে যেমন প্রচেষ্টার শেষ নেই। একইভাবে সেই সৌন্দর্যে ভিন্নতা আনতে থাকে অনেক সংযোজন ও বিয়োজন। এমনই এক স্টাইলিশ সংযোজন কটি নামের পোশাকটি। যে কোনো সাধারণ পোশাকে অসাধারণ লুক আনতে পছন্দসই একটি কটিই যথেষ্ট। আর তাই তো এ যুগের ফ্যাশন-সচেতন তরুণীরা নিজের কালেকশন থেকে কটি বাদ দিতে সম্মত নন। নিজেদের একটু আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে কটিই এখন সেরা।

 

একসময় ফ্যাশনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার হতো বিভিন্ন ডিজাইনের কটি। একে পোশাক অনুষঙ্গ বললেও ভুল হবে না। কারণ কটি ছাড়াও হয়তো একটি পোশাক মেয়েরা অনায়াসে পরতে পারেন। অথচ সেই পোশাককে আরও বেশি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে মূলত কটির ব্যবহার চলছে। ওড়নাসহ পরুন অথবা ওড়নার পরিবর্তে পরুন—কটির আবেদনটিই থাকে আলাদা। পোশাকের আউটলুক বদলে দিতে মানানসই একটি কটির ভূমিকা অনন্য।

কটির কথা বললে যে রূপটি ভেসে ওঠে তা হলো হাতা কাটা, খাটো দৈর্ঘ্যের মোটা কাপড়ের ওপর নকশা, সামনের দিকে কাটা এক ধরনের পোশাক। কখনো তাতে যোগ হয়েছে বাহারি বোতাম অথবা ফিতা। আজকাল তো লম্বা হাতার কটিও পাওয়া যাচ্ছে। আবার ফুল লেন্থ কটির ফ্যাশনটি যেন গায়ে লাগিয়ে দিচ্ছে পাশ্চাত্যের হাওয়া। হাল আমলের ফ্যাশনে নিজের ডিজাইনে একটু অদল-বদল করে কটি যোগ হচ্ছে নতুন অধ্যায় হিসেবে।

 

পুরনো ফ্যাশন যেমন সময়ের ব্যবধানে ফিরে আসে তেমনই আমরা কটির প্রচলনকেও একই ধারায় ফেলতে পারি। একযুগ আগে তার যে দাপট ছিল মাঝে তা কমে গিয়েছিল একেবারে। অথচ বিগত তিন চার বছরে তার দেখা মিলছে আবার। বর্তমানে ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে কটির সরব উপস্থিতি তাক লাগানোর মতো। আর তাইতো আলোচনায় উঠে এসেছে কটির ফ্যাশন। নারীদের পছন্দের পোশাক ফ্লোরটাচ, লং স্লিভ, আনারকলি অথবা সিম্পল কামিজের সঙ্গেও ব্যবহার করা হচ্ছে এসব কটি।

 

একরঙা কাপড়ের কটি, জরি চুমকির কারুকার্যময় কটি, নেট কাপড়ের কটি, নকশি কাঁথা ডিজাইনের কটি, প্রিন্ট কাপড়ের কটির ব্যবহার দেখা যায় বিভিন্ন বয়সীর মধ্যে। কটির ডিজাইনে আছে ভিন্ন রঙের পাইপিনের ব্যবহার। কয়েকটি রঙের কাপড়ের টুকরো জোড়া দিয়েও কটির ওপর হচ্ছে নজরকাড়া ডিজাইন। কিছু কটির ডিজাইন করা হয়েছে দুই পরতে। উপরের অংশটি একরঙা হলে নিচের অংশটি প্রিন্ট। কটির নিচের অংশে এলোমেলো কাট, সোজা কাট, ইউ কাট, ভি কাট ইত্যাদির দেখা পাবেন। গলার ডিজাইনে থাকে গোল, কলার, হাইনেক, ডাউন নেক ইত্যাদি। কিছু কটি আবার কোট কাটিংয়ের। কটির হাতা লম্বা, খাটো অথবা স্লিভলেস হতে পারে। ডিজাইনের সঙ্গে মানিয়ে হাতার মাথায় কপ, রাবার বা প্লেন থাকতে পারে। কিছু কটি কোমর থেকে গড়িয়ে কিছুটা নিচে, কোনোটি হাঁটুর নিচ পর্যন্ত, কোনোটি আবার কোমর পর্যন্তই যুতসই। কটির কাপড় হিসেবে সিল্ক, কটন, লিলেন ইত্যাদি ব্যবহার হয়। কটির ভিন্নতা আনতে ডেনিমের কটিও আজকাল অনেকের পছন্দের শীর্ষে অবস্থান করছে।

 

আজকাল বিয়ে পার্টি বা যেকোনো অনুষ্ঠানে নিজের সাজে জাঁকজমক লুক আনতে মেয়েরা পছন্দ করছেন নকশাদার কারুকার্যখচিত কটি। সালোয়ার-কামিজ বা লেহেঙ্গাকে ফ্যাশনেবল করতে কটি উপযুক্ত। ওয়েস্টার্ন পোশাকেও বাদ যাচ্ছে না কটির ব্যবহার। এক কথায় মেয়েরা সব ধরনের পোশাকের সঙ্গেই বেছে নিতে পারেন পছন্দের একটি কটি।

 

শীতের অনুষঙ্গ হিসেবে কটি হয়ে উঠতে পারে অপরিহার্য। শীতে যোগ হওয়া কটিতে থাকছে নতুন রূপ আর আভিজাত্য। এমনকি সোয়েটারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে কটির স্টাইল। পুরু কাপড়ে তৈরি কটি, ডেনিম কটি, উলেন কটি ফ্যাশনে যোগ করছে বাড়তি মাত্রা। হালকা শীতে গলায় একটি মাফলার জড়িয়ে কটির সঙ্গে শীত কাটানো যায় অনায়াসে।  

 

কর্মজীবী নারীদের জন্য এই শীতে কটি হয়ে উঠতে পারে একটি আদর্শ স্টাইল। দরকার একটু অভিনবভাবে উপস্থাপন। আগে যেভাবে পরা হতো, এখন পরতে হবে একটু ভিন্নভাবে। শাড়ি অথবা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে একটু লম্বা কটি মানাবে ভালো। এটি হাতা কাটাও হতে পারে আবার লম্বা হাতারও হতে পারে। লম্বা হলে হাতাটা একটু চাপা করে নিতে হবে। এ ধরনের কটির গলায় বৈচিত্র্য আনা যায়। গোল গলা, ভি গলা, উঁচু কলার, যেভাবে ইচ্ছা করতে পারেন। গলায় আলাদাভাবে পাইপিং লাগাতে পারেন। দেখতে ভালো লাগবে।

 

যাদের গলা একটু খাটো তারা উঁচু গলা ব্যবহার না করলেই ভালো। গোল গলা পরলে ভালো লাগবে। লম্বা গলার অধিকারীরা উঁচু কলারে চড়া করে পাইপিং লাগাতে পারেন।

শাড়ি, কামিজ বা জিন্সের সঙ্গে কীভাবে পরবেন, তার ওপর নির্ভর করবে এর ফ্যাশন। ব্লাউজের ওপর কটি পরে আভিজাত্যময় লুক আনা সম্ভব। শাড়ির আঁচলে ঢেকে থাকবে একটি দিক। আঁচলটি কটির বাইরে থাকলে ভালো লাগবে। লম্বা হাতের কটি ভালো দেখাবে সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে। অন্যদিকে জিন্স, টপস, শাড়ি সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যাবে এই কটি।

 

খাদির ওপর ব্লক কিংবা প্রিন্ট করে নেওয়া যেতে পারে একরঙা একটি কটিতে। ভেজিটেবল ডাই ব্যবহারেও অভিনব লাগবে। হালকা রঙের কাপড়ে চড়া রঙের পাইপিং লাগাতে পারেন। কেউ লেক লাইন পাইপিন করতে পারেন লেস দিয়ে। এক কথায় কটিতে ব্যবহার হচ্ছে সব ধরনের অ্যাক্সেসরিজ। অ্যান্টিক পুঁতি চুমকি, ঝকঝকে পাথর অথবা কয়েক রঙের কাপড়ের টুকরো জোড়া দিয়ে করা ডিজাইন। তবে উজ্জ্বল রঙের কটি মেয়েরা বেশি পছন্দ করছেন। 

 

এসব কটির বেশির ভাগই ব্যবহার করছেন টিনএজ মেয়েরা। তারা টি-শার্ট, কামিজ ও লেহেঙ্গার সঙ্গে কটি পরতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। এদিকে টি-শার্ট জিন্সের সঙ্গে কটি পরতে গেলে মাথায় রাখা উচিত জরুরি কটির লেন্থের বিষয়টি। ফুল লেন্থ সিনথেটিক একটি কটি টি-শার্টে মানিয়ে যাবে দারুণ। অন্যান্য পোশাকে সাধারণত শর্ট কটিই মানানসই। সম্পূর্ণ ভিন্ন লুক দিতে স্টাইলিশ সংযোজন বলা যায় এসব কটিকে।

 

বলা যেতে পারে কটির ফ্যাশনটা নতুনভাবেই আবার ফিরে এসেছে। পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায় এমন একটি কটি কিনে নিতে পারেন আলাদাভাবে। আবার কোনো ড্রেসের সঙ্গে কটি থাকে ডিজাইনের অংশ হিসেবে। তবে আলাদাভাবে কিনতে হলে আপনাকে যেতে হবে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে। ফ্যাশন ডিজাইনাররা হালের চাহিদা বিবেচনা করে উপযুক্ত অসংখ্য কটির সমাহার রেখেছেন। এখানে কটির দামটিও থাকছে হাতের নাগালে। এ ছাড়াও নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, মৌচাক, যমুনা ফিউচার পার্কসহ ছোট-বড় অন্যান্য মার্কেটে পাওয়া যাবে পছন্দের কটি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর