শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সবার আগে ত্বক

তানিয়া জামান

সবার আগে ত্বক

► মডেল : ফারিয়া শাহরীন ► পোশাক : জে এম ক্ল্যাসিক ফ্যাশন ► মেকওভার : আর কে রাতুল ► ছবি : নেওয়াজ রাহুল ► স্টুডিও : এক্সপোজ

সতেজতায় স্নিগ্ধতা। ত্বক সতেজ রাখতে চাই যত্ন। ত্বক সুস্থ থাকলে সৌন্দর্যের জেল্লা চোখে পড়বে যে কারও। পোশাকে, গহনায় কিংবা সাজে নজর দেওয়ার আগে এই শীতে ত্বকের দিকে নজর রাখুন। শীতে ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ। ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে টুকটাক কৌশলগুলো জেনে রাখা ভালো। সবার আগে ত্বক...

শীতকালে বাইরের আবহাওয়ায় ধুলো, ময়লা, জীবাণু অনেক বেশি থাকে; তাই ত্বক অন্য ঋতু থেকে বেশি ময়লা হয়। রুক্ষ আবহাওয়ায় আমাদের ত্বকের ময়েশ্চার ব্যালান্স নষ্ট হয়ে যায়। ময়েশ্চারের অভাবে ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই শীতে প্রয়োজন ত্বকের পরিচর্যা। এর আগে জানতে হবে ত্বকের ধরন।

 

সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা। শিরশিরে বাতাস জানান দেয় কড়া শীতের উপস্থিতি। আর এই হিমেল বাতাসে ত্বক এখন থেকেই রুক্ষ, খসখসে। ফলে মনটা ভালো হয়ে গেলেও হালকা শীতের শুষ্ক বায়ুর সংস্পর্শে ত্বকের বেহাল অবস্থা। এ সময় ত্বকে দেখা দেয় ব্রণ ফুসকুড়ির মতো সমস্যা। তাই এ সময় প্রতিদিন দরকার ত্বকের একটু বেশি যত্ন। তাই দৈনন্দিন শত ব্যস্ততার মধ্যেও ত্বকের পরিচর্যা মাস্ট। কেননা, ত্বক সুস্থ থাকলে আপনি শত ব্যস্ততায়ও থাকবেন উত্ফুল্ল ও প্রাণবন্ত।

 

ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে আগে জানতে হবে ত্বকের ধরন। এজন্য একটি টিস্যু পেপার বা ব্লটিং পেপারের সাহায্য নিতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে টিস্যু বা ব্লটিং পেপারটি আপনার ত্বকে চেপে ধরুন। ত্বক তৈলাক্ত হলে বা মিশ্র হলে তার ছাপ পড়বে পেপারে। ত্বক সেনসিটিভ কিনা তা অবশ্য ঘরে বসে বোঝা মুশকিল। এজন্য পারলারে বিউটি এক্সপার্টের সাহায্য নিতে হবে।

 

শুষ্ক ত্বক

আপনার ত্বকে যদি অ্যালার্জি প্রবণতা থাকে তাহলে বুঝবেন ত্বক শুষ্ক। চুল শুকনো হলে বুঝবেন মাথার ত্বকও শুষ্ক। এ ছাড়া খুব বেশি খুসকির সমস্যা থাকলে তাহলেও বুঝতে হবে ত্বক শুষ্ক। লেপ, কম্বল ইত্যাদিতে অ্যালার্জি থাকলে বা নতুন কিছু  ব্যবহার করলে যদি অ্যালার্জির সমস্যা হয় তাহলে বুঝবেন আপনার ত্বক শুষ্ক।

 

তৈলাক্ত ত্বক

আপনার ত্বকে যখন তেলতেলে ভাব ফুটে ওঠে বিশেষ করে নাক, কপাল নিয়ে যে অংশ তেলতেলে আকার ধারণ করলে বুঝতে হবে তৈলাক্ত ত্বক। তৈলাক্ত ত্বকে সাধারণত কানের পেছনেও তেলতেলে লাগে। আসলে এই তেল বের হয় সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে। আমাদের শরীরে শতকরা ৭০ ভাগ সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থাকে মুখে। মুখ তেলতেলে থাকা তৈলাক্ত ত্বক চেনার প্রধান উপায়। এ ছাড়া ব্রণ, ফুসকুড়ি সমস্যা তৈলাক্ত ত্বকে বেশি হয়। ত্বকে কালো ছোপেরও সমস্যা থাকে।

 

সেনসেটিভ ত্বক

আপনার ত্বকে চুলকানো, লাল হওয়া, জ্বালা করার সমস্যা হয় খুব বেশি? তাহলে বুঝে নিন আপনার ত্বক অতিশয় সেনসেটিভ। শুষ্ক ত্বকেরই আরেকটা দিক হলো সেনসেটিভ হওয়া। এই ত্বকে কসমেটিক লাগানোর পর সমস্যা হয়। অনেক সময় কারণ ছাড়াই ত্বকে ইরিটেশন হতে পারে।

 

এই তো গেল ত্বকের নানা ধরন। এবার ত্বকের ধরন বুঝে নিন আপনার ত্বকের যত্ন। এজন্য পারলারের এক্সপার্টের ধরনা ধরার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসেই সেরে নিতে পারেন। রুক্ষ্ম ও শুষ্ক ত্বকের জেল্লা ফিরিয়ে আনতে রইল ঘরোয়া টোটকা।

 

শুষ্ক ত্বকের প্যাক : গোসলের আগে একটা পাত্রে মধু ও সঙ্গে সামান্য পানি নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ পুরো মুখে, গলায় ও হাতে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে কিছুক্ষণ রেখে ভালো করে গোসল করে নিন। এর ফলে স্নানের পর ত্বক হয়ে উঠবে তুলতুলে। এই প্যাকটি প্রতিদিন অথবা একদিন অন্তর দিতে পারেন।

 

তৈলাক্ত ত্বকের প্যাক : রাতে ঘুমতে যাওয়ার আগে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এজন্য গোলাপের পাপড়ি বাটা, টক দই ও মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট, কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে প্রতিদিন গোসলের আগে এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

 

সাধারণ ত্বকের প্যাক : ভালো করে শসার রস, টক দই, কমলালেবু, মধু, মুলতানি মাটি ইত্যাদি দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে পুরো মুখে, গলায় ভালো করে লাগিয়ে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে সার্কুলার মোশনে হালকা করে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করার পর কিছু সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে রিল্যাক্স করুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।

 

সেনসেটিভ ত্বকের প্যাক : এই ত্বক বরাবরের মতোই অনেক সেনসেটিভ। এজন্য ভালো করে দুধ ফুটিয়ে দুধটাকে যথেষ্ট ঘন করে নিন যেন এর উপরে একটা সরের স্তর পড়ে। এর পর দুধ ঠাণ্ডা হলে সেই দুধের সর তুলে নিয়ে সেটা পুরো মুখে, গলায় ভালো করে লাগিয়ে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করুন। এবার কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রিল্যাক্স করুন। শেষে কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। এছাড়া এ ধরনের ত্বকে লাউ বাটা, গাঁদা ফুলের পাপড়ি বাটা, মুলতানি মাটি দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন লাগান। উপকার পাবেন।

 

এছাড়া ত্বকের জন্য ব্যবহার করতে পারেন গ্রিনটি ক্লিনজার। একটা পাত্রে এক টেবিল চামচ ক্লিনজার নিন। এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ গ্রিন-টি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিন। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে ভিজে হাতে সার্কুলার মুভমেন্টে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে জমে থাকা ধুলোময়লা ও তেল সহজে পরিষ্কার হয়ে যাবে। সঙ্গে ত্বকের ময়েশ্চার ব্যালেন্সও বজায় থাকবে। স্বাভাবিক, শুষ্ক বা তৈলাক্ত যে ধরনের ত্বকের জন্যই এই ক্লিনজার ভীষণ উপকারী।

 

ত্বক পরিচর্যায় শুধু ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করলেই চলবে না, সঙ্গে প্রয়োজন একটি সুন্দর লাইফস্টাইল। পরিমিত ঘুম ও খাওয়া-দাওয়া সুন্দর ত্বক তৈরিতে সাহায্য করে। তবে, শীতকাল বলে খুব বেশি তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। বেশি বেশি পানি পান করুন। বাইরের ধুলোবালি থেকে বাঁচতে স্কার্ফ ও সানগ্লাস ব্যবহার করুন। রাতে বাসায় ফিরে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ঘরে ফিরে মেকআপ তুলতে দেরি করবেন না।

 

টিপস

♦ আপনার ত্বক যেমনই হোক না কেন স্ক্রাব কখনোই সপ্তাহে তিনবারের বেশি ব্যবহার করবেন না। বেশি ব্যবহারে ত্বকের টেক্সচার নষ্ট হয়ে যায়।

♦  সপ্তাহে একদিন একটু সময় বের করে ফেস মাস্ক ট্রাই করতে পারেন। ফেস মাস্ক ডেড সেল রিমুভ করে ব্লাড সার্কুলেশন ভালো রাখে, মুখের ত্বক টানটান, নরম ও মসৃণ রাখে।

♦  এ সময় ত্বকে অলিভ অয়েল, লেবুর রস ৪-৫ ফোঁটা, ডিম মিশিয়ে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিন বা তুলো ভিজিয়ে মুছে নিন।

♦  সারা দিনে বা খুব ভালো হয় রাতে শুতে যাওয়ার আগে দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে হালকা ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্কতা কমবে অনেকটাই।

♦  মধু, দই, ডিম, গাজরের রস একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান, ২৫ মিনিট পর আলতো করে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ দিন করতে পারলে শুষ্কতা কমে যাবে।

♦  মূলতানি মাটির তৈরি প্যাক শুকনো ও রুক্ষ ত্বকের জন্য খুব ভালো। এই মাটি ত্বকের ক্ষতি সারায় ও নরম রাখে। তাই এবড়োখেবড়ো চামড়ায় মাঝে মধ্যে মুলতানি মাটি লাগানো খুব ভালো ত্বকের জন্য। মুলতানি মাটি সহজেই পাওয়া যায় এবং সস্তাও।

♦  সব ধরনের ত্বকের জন্য আপেল কোরানো বেশ কিছুটা, মধু ১০ ফোঁটা মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট লাগান হালকা ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন।

♦  পাকা কলা চটকে এর সঙ্গে ২ টেবিল চামচ মধু, ২ টেবিল চামচ গ্লিসারিন, একটা ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে ফেস মাস্ক তৈরি করে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

♦  একটা শসা কুরে আধা কাপ টক দই ও আধা কাপ ওটমিলের সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এটি ত্বকের ময়েশ্চারাইজ করবে ও পুষ্টি জোগাবে।

♦  চোখের তলায় কালি দূর করার জন্য আই ক্রিম লাগান। সপ্তাহে তিন দিন রাতে শুতে যাবার আগে আলু থেঁতো করে, পাতলা কাপড়ে মুড়ে চোখের পাতায় ১৫ মিনিট রাখুন। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এক চা-চামচ আমন্ড অয়েল চোখের চারধারে ম্যাসাজ করুন। এতে চোখের আশপাশের চামড়া ভালো থাকে।

♦  মুখের মতো হাত-পায়ের যত্ন নিন। শীতে হাত-পাও খুব রুক্ষ হয়ে যায়। গোসলের পর ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে হাতে ও পায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান। কনুইয়ের চামড়া যদি শক্ত ও শুষ্ক হয়ে যায়, তাহলে গ্লিসারিন ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত মাসাজ করুন। পামিস স্টোন বা ফুট ব্রাশ দিয়ে স্নান করার সময় নিয়মিত পা পরিষ্কার করুন।

♦  শীতের এ সময়টা ত্বকে অনেক বেশি রুক্ষতার সৃষ্টি করে। তাই সারা দিনে দুই বার বা তিন বার গ্লিসারিন ব্যবহার করতে পারেন।

♦  একটা পাকা কলা ও এক টেবিল চামচ নারকেল তেল একসঙ্গে নিয়ে একটা প্যাক তৈরি করে সেটা পুরো মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। এই পদ্ধতিটি সপ্তাবে দু’বার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।

♦  একটি পাত্রে ঘরে পাতা টকদই নিয়ে তার সঙ্গে কিছুটা মধু ও চিনির গুঁড়ো মিশিয়ে সেই প্যাক পুরো মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট হালকা ম্যাসাজ করবেন। এরপর কিছুক্ষণ রেখে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।

♦  ডিমের কুসুম ক্লিনজার হিসেবে দারুণ কাজ করে। এর ক্লিনজিং প্রপার্টি মুখে জমে থাকা ধুলো ময়লা তেল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুম ফেটিয়ে নিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করে পরিষ্কার হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

♦  আমন্ড বাটা ও মধু দিয়ে প্যাক করে মুখে লাগান ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিন দিন করলে অনেক উপকার পাবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর