শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আইনবিদের মুখোমুখি

ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া

আইনবিদের মুখোমুখি

সমস্যা :

জমি থেকে উচ্ছেদের আশঙ্কা হলে অথবা উচ্ছেদ হলে করণীয় কী?

 

সমাধান :

প্রায়ই পারিবারিক বিরোধ, স্থানীয় ভূমিদস্যুদের আগ্রাসন ও মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্রের দুর্বলতার জের ধরে অনেকেই জমি দখলের স্বীকার হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে অনতিবিলম্বে আইনের শরণাপন্ন হয়ে সম্পত্তি রক্ষা করতে হবে। আর তাই আইনি প্রতিকারসমূহ সম্পর্কে স্বচ্ছ ও সঠিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। উচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেলে সে বিষয়ে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি করে অবহিত করতে হবে। একজন আইনজীবীর শরণাপন্ন হয়ে সি. আর. পি. সি. ১৮৯৮ এর ১৪৫ ধারায় একটি মামলা করা যেতে পারে যেখানে ফৌজদারি আদালত অত্র নালিশি সম্পত্তি ও সংলগ্ন এলাকায় যেন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে তত্মর্মে সংশ্লিষ্ট থানাকে আদেশ দেবেন এবং মামলায় আনিত অভিযোগটি তদন্তসাপেক্ষে একটি রিপোর্ট পেশ করারও আদেশ প্রদান করবেন। পুলিশ রিপোর্টে জমির দখলস্বত্বের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এই আইনি প্রক্রিয়ায় সাময়িক প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। ইতিমধ্যে স্পেসিফিক রিলিফ অ্যাক্ট ১৮৭৭ এর ৫৪ ধারায় স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা যেতে পারে। আর যদি সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয় সেক্ষেত্রেও নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি করে সি. আর. পি. সি. ১৮৯৮ এর ১৪৫ ধারায় মামলা করা যেতে পারে, যেখানে পুলিশ রিপোর্টে অভিযোগকারীর পূর্বেকার দখলস্বত্বের বিষয়টি উল্লিখিত হবে, যা অন্য মামলায়ও সহায়ক হবে। উচ্ছেদ-পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে স্পেসিফিক রিলিফ অ্যাক্ট ১৮৭৭ এর ধারা ৯ এর অধীনে অর্ধেক এড-ভলেরাম কোর্ট ফি জমা দিয়ে মামলা দায়ের করতে হবে এবং সেক্ষেত্রে জমির মালিকানা/টাইটেল প্রমাণের প্রয়োজন হবে না। তবে এই ধারার অধীনে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় না। ছয় মাস সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে একই আইনের ধারা ৮ এর বিধান মতে পূর্ণ এড-ভলেরাম কোর্ট ফি জমা দিয়ে মামলা দায়ের করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে জমির মালিকানার প্রমাণ প্রয়োজন হবে। সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে এই আইনের ৪২ ধারায় ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। আবার অন্য কারও নামে সম্পত্তির মালিকানা রেকর্ড হয়ে গেলে ৩৯ ধারায় তা বাতিল চাওয়ার পাশাপাশি ৪২ ধারায় ঘোষণামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে। উপরন্তু, সি. পি. সি. ১৯০৮ এর ৩৯ নং আদেশের রুল ১ ও ২ এর বিধান অনুযায়ী একই আদালতে ওই মামলায় একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ চাইতে হবে যেন মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বে নালিশি সম্পত্তি কোথাও বিক্রি করে দিতে না পারে অথবা ওই সম্পত্তিতে কোনো নির্মাণ কাজ করতে না পারে। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদনটির শুনানি না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ চাইতে হবে যেন ওই সময়ের মধ্যেও বিবাদীপক্ষ অত্র সম্পত্তিতে কিছু করতে না পারে।  আপনার আইনজীবীর অদক্ষতায়/অসতর্কতায় যেন সম্পত্তি হাতছাড়া না হয়— তাই সাধারণ জ্ঞান রাখা ভালো।

সতর্কীকরণ : আইনজীবীকে মামলার প্রয়োজনে জমির দলিলের মূল কপি দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।       

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর