শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

শরীর যদি সুস্থ চান

শরীর যদি সুস্থ চান

► মডেল : সোমা, ► ছবি : মনজুরুল আলম

হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষায় পানি তৃষ্ণার্ত না হলেও বেশি করে পানি পান করার সিদ্ধান্ত নিন। গবেষকেরা বলেন, প্রয়োজনীয় পানীয়টি প্রচুর পরিমাণে পান করলে তা আপনাকে হৃদরোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। তৃষ্ণার্ত হলে অনেকে বিভিন্ন ধরনের জুস বা ফলের রস, দুধ, কফি এবং অন্যান্য কোমল পানীয় পছন্দ করেন এবং পান করেন। কিন্তু এসব পানীয় কখনোই পানির বিকল্প হতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে, পানি পানের সঙ্গে মারাত্মক হৃদরোগ সংক্রান্ত হওয়ার একটি সম্পর্ক রয়েছে। আপনি যদি প্রয়োজনীয় মাত্রায় পানি পান না করেন তাহলে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। যারা দিনে কমপক্ষে পাঁচ গ্লাস পানি পান করেন তারা, যারা দিনে দুই গ্লাস বা আরও কম পান করেন, তাদের চেয়ে হৃদরোগে প্রায় অর্ধেক মারা যান। আবার যারা পানির বদলে অন্যান্য পানীয় পাঁচ গ্লাস বা তার বেশি পান করেন তারাও কম পানি পানকারীদের মতোই হৃদরোগে সমান মারা যান। তাই আপনি যখন তৃষ্ণার্ত হবেন, পানি পান করবেন অন্য কোনো পানীয় নয়। এ ছাড়া হৃদরোগ প্রতিরোধের উপায় হলো স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে দিনে কমপক্ষে পাঁচ গ্লাস পানি পান করা, ব্যয়াম করা এবং ধূমপান না করা।

 

সুস্থ থাকতে হাসুন

স্বতঃস্ফূর্ত হাসি হলো আপনার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এই হাসি যদি আপনি চেপে রাখেন তাহলে নানা অসুখ বৃদ্ধি পেতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের এমনই অভিমত। হাসি স্বাভাবিক বলেই স্বাস্থ্যের জন্য ভালা। যুক্তরাজ্যের গবেষক ও চিকিৎসকেরা বলেছেন, স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাণবন্ত হাসি উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করে ও রক্তসঞ্চালন ভালো রাখে। হাসি মাংসপেশিকে শিথিল রাখে, দেহের ব্যথা, জ্বালা ও যন্ত্রণা প্রশমন করে। এমনকি দেহের ইমিউনো সিস্টেমকেও শক্তিশালী করে। হাসিখুশি শিশুরা কম রোগাক্রান্ত হয়।

 

সুস্বাস্থ্যের জন্য খাবার

ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো অসুখ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে সুস্থ ও নিরোগ জীবনযাপনের জন্য দরকার প্রতিদিন প্রচুর অধিক শাকসবজি, ফলমূল ও মাছ খাওয়া এবং অধিক পরিমাণে মাংস খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা। আমেরিকান জার্নাল অব নিউট্রিশনের তথ্য মতে, যারা নিরামিষ খান তারা অনেক বেশি সুস্থ থাকেন। সবজি ও ফলমূলে পাওয়া যায় প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ লবণ। এতে ক্ষতিকারক কোলস্টেরল নেই। এর আঁশজাতীয় অংশ কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করবে। আর মাছে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, লবণ ও ওমেগা থ্রি নামক উপাদান, যা আপনার মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর করে মস্তিষ্ককে করবে উর্বর। তাই প্রতিদিন প্রচুর সবজি, ফলমূল আর মাছ খান অপর দিকে খাবার হিসেবে মাংসের পরিমাণ কমান এটাই হবে আপনার সুস্থতার প্রাথমিক কথা।

 

চুলের সুরক্ষার সানস্ক্রিন

চুলের সুরক্ষায় কি সানস্ক্রিনের দরকার আছে? উত্তরটি হলো হ্যাঁ। যদিও সানস্ক্রিনের প্রয়োজনটা চুলের ক্ষেত্রে ত্বকের মতো এতটা সহজে চোখে পড়ে না কিন্তু এ কথা ঠিক যে সূর্যালোকে মাথার চুল পুড়ে লাল হয়ে যায়। আপনি হয়তো আপনার চুলের ক্ষতির স্থানটা দেখতে পারেন না কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকুন যে সূর্যের আলো আপনার চুলকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। সূর্যালোক চুলের দেহের প্রোটিনকে ধ্বংস করে এবং এর ফলে অক্সিডেশনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে চুল তার উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে। পরিণতি হিসেবে চুল শুষ্ক, ভঙ্গুর এবং অনুজ্জ্বল হয়ে যায়। চুলের এ ধরনের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে চুলে সানস্ক্রিন মাখতে হবে। রোদে বের হওয়ার আগে ভেজা বা শুকনো চুলে সানস্ক্রিন মেখে তারপর বের হবেন। কনডিশনার ধরনে সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। সানস্ক্রিনের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়তে বর্তমানে কিছু কিছু কনডিশনারে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট যেমন ভিটামিন ই এবং সি যোগ করা হচ্ছে। এগুলো অক্সিডেশনকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে, ফলে চুল সুরক্ষা পায়। তবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন আর নাই করুন, রোদে বের হলে চুলগুলোকে রক্ষা করতে মাথার ওপর ছাতা রাখুন অথবা মাথায় হ্যাট কিংবা স্কার্ফ ব্যবহার করুন।

 

হার্টবার্ন মাথাব্যথা ঘটাতে পারে

যাদের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ ধরে হার্টবার্ন বা বুক জ্বালাপোড়া করে তাদের সাবধান হতে হবে, কেন না তাদের ‘গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স’ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে দীর্ঘমেয়াদের এ বুক জ্বালাপোড়া থেকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন—ঢোক গিলতে কষ্ট, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস, হাঁপানি, এমনকি ইসোফেগাস বা খাদ্যনালিতে ক্যান্সারও হতে পারে।

তবে সম্প্রতি আমেরিকার নৌবিভাগের নাক, কান গলা বিশেষজ্ঞরা আরও একটি তথ্য দিচ্ছেন। এক সমীক্ষায় তারা দেখেছেন, হার্টবার্নের রোগীদের ২০-৬০ শতাংশ রোগী মাথা ও কাঁধে ব্যথা অনুভব করেন। এ রকম হলে সত্যিকার অর্থে রোগ নির্ণয় কঠিন হয়ে পড়ে। মাথা এবং গলার উপসর্গের মধ্যে সাধারণ লক্ষণ গলায় চাকার অনুভূতি। এ ছাড়াও অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে—খুকখুক কাশি, দীর্ঘমেয়াদি ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠস্বর, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, গলায় খাবার আটকে যাওয়া, মুখের মধ্যে জ্বালাপোড়া অনুভূতি, এমনকি মাথা ও কানে ব্যথা। এরকম হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যদি ‘গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স’ রোগ হয় তাহলে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে অবস্থার উন্নতি হয়। অ্যালকোহল ত্যাগ করুন। শরীর থেকে চর্বি কমান। চা, কফি, মসলাযুক্ত খাবার একদম বাদ দিন। নরম খাবার খান। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন, চিকিৎসায় হেলাফেলা করলে অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হতে পারে। তখন অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর