শুক্রবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাইক কালচার

আবদুল কাদের

বাইক কালচার

► মডেল : হৃদয় চৌধুরী ও মাইশা ► পোশাক : ইজি ► বাইক : জামান মোটরস ► ছবি : ফ্রাইডে

নগরকেন্দ্রিক জীবনে রাজপথ থমকে দাঁড়ায় যানজটে। অল্প পরিসরে আরামদায়ক চলাচলে মোটরসাইকেল তারুণ্যের প্রথম পছন্দ। হ্যাং-আউটে ছুটতেও এ বাইক অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ভার্সিটি কি শপিংমল— বন্ধু-বান্ধবী সঙ্গী হলে পথচলায় দেরি কেন? সময়টাতে হিট বাইক কালচার...

নাগরিক জীবনে রাজপথ থমকে দাঁড়ায় অসহনীয় যানজটে। কিন্তু এর সহজ সমাধান বাইক কালচার। তা ছাড়া বাইক মানেই বন্ধুদের মধ্যে আনন্দে থাকা, তবে সেই বাজিতে বাদ যায় না স্কুটিও। কোন বাইক আমার জন্য ফিট আর কোন স্কুটি কেনা বুদ্ধিমানের কাজ— বাইক-স্কুুটির হরেক রকম তথ্য নিয়ে হাজির ফ্রাইডে।

 

ব্যস্ত নাগরিক জীবনে রাজপথে সময় বাঁচাতে বাইক কিংবা স্কুটির বিকল্প নেই। হাঁপিয়ে ওঠা নাগরিক জীবন যখন যানজটে স্থবির, তখন বাইকের সাওয়ার হয়ে পাশেই ছুটে চলেছেন অনেকেই। এই সময়ে সব বয়সী মানুষের কাছে অন্যতম পছন্দের ও বিকল্প বাহন হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বাইক। নিজস্ব একটা বাহন থাকার আলাদাই একটা মজা। কিন্তু বাজারে তো হাজারো বাইক-স্কুটির মেলা। কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনবেন, তা নিয়ে ঝক্কি-ঝামেলারও কমতি নেই। সঠিক ইনফো না থাকলে কিন্তু এই পথ তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে যাবে।

 

এই যে বাইক চেপে হাওয়া খাওয়া, কিন্তু এটা বানাতে কম পরিশ্রম করতে হয়নি। নতুন বাইকটি কিনে, কলার তুলে বন্ধুদের মধ্যে অন্তত ‘হিরো’ হওয়ার জন্য জেনে রাখা ভালো, ১৮৮৫ সালে জার্মানির গটলিয়েব ডাইমলার এবং উইলহেম মেবাখ, রিটওয়াগেন (জার্মানিতে যার অর্থ চলমান বাহন) নামের প্রথম মোটরবাইকটির নির্মাতা। তারপর তৈরি হয় বাষ্পচালিত মিশো-পেরো মোটরবাইক। আর এভাবেই পথচলা শুরু বাইকের। প্রধানত তিন ধরনের বাইক হয়। স্ট্রিট বাইক, অফরোড বাইক আর ডুয়াল-পারপাজ বাইক। স্কুটার, মপেড এবং আন্ডারবোন এগুলো সবকটাই বাইকের থেকে আকারে অনেকটাই ছোট। মানে এগুলোকে বাইকের মাসতুতো ভাই বলা চলে আর কি!

 

সব বয়সীদের পছন্দের হলেও তারুণ্যের মধ্যেই বাইকের চাহিদা বেশি। অসহনীয় যানজটে গাড়ি বা রিকশার পাশে দেখবেন মোটরবাইকে কোনো মেয়েকে দেখলেই একটু-আধটু চোখ আটকায় বৈকি। অনেক করপোরেট অফিসের কর্মকর্তা কিংবা চাকরিজীবীরা গাড়ি ছেড়ে সময়ের তাগিদে বেছে নেন বাইক। মূলত শখ করে নয়, বরং প্রয়োজনেই নাগরিক ব্যস্ততার শহুরে রাস্তায় বাইক নিয়ে বের হন অনেক কর্মজীবী তরুণী। তবে, বাইক চালানোর জন্য পোশাক নিয়ে অনেক মেয়েই রয়েছে ভুল ধারণা। বাইক চালাতে যে পাশ্চাত্য পোশাকই পরতে হবে তা কিন্তু নয়। বরং সালোয়ার-কামিজ বা শাড়ি পরেও আপনি অনায়াসে বাইক চালাতে পারেন; যেখানে জিনিসপত্র ও ব্যাগ রাখারও সুবিধা রয়েছে।

 

আসলে নগরের পথচলায় পয়সা আর সময় দু’টোই বাঁচাতে সবারই পছন্দ মোটরবাইক। আর যানজটের শহরে নির্দিধায় চলাফেরার জন্য মোটরবাইকের বিকল্প আর কি হতে পারে। তবে যত যাই হোক, তারুণ্যের মাঝে এই বাইকর চাহিদা কিংবা জনপ্রিয়তা পাবার অবশ্য ভিন্ন কারণ রয়েছে। সেটা হলো ফ্যাশন। হাল ফ্যাশনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণদের মাঝে এখন বাইক যেন স্বপ্নের সাওয়ার। ফ্যাশনে বাইক না হলে যেন তারুণ্যের মধ্যে আড্ডা জমে ওঠে না। তবে, তেল খরচের দিকটি অনেকের মুখ্য বিষয়।

 

এ প্রসঙ্গে জামান মোটরস-এর কর্ণধার মোশারফ হোসেন নিয়ে আসেন তারুণ্যের উচ্ছলতার কথা। তার ভাষায়, ‘তারুণ্যের কায়দাবাজিটা গাড়িতে জমে না। বাইক মানেই উদ্দাম তারুণ্যের বাঁধনছেঁড়া গতি। দুহাতে হ্যান্ডেল ধরে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে ছুটে যাওয়া, হাতের পেশি টানটান। শুধু সিনেমার পর্দায়ই নয়, বাস্তব জীবনেও চলে অনেক তারুণ্যের মধ্যে। এছাড়াও নাগরিক ব্যস্ততার হিসাব কষলে দেখবেন, সময় ও পয়সা দুটোই সাশ্রয়ের জন্য বাইকের চেয়ে ভালো কোনো অপশন নেই। আবার বর্তমানে আমাদের দেশের মেয়েদের বাইক চালানোয় এগিয়ে। মেয়েদের ক্ষেত্রে ফ্যাশনে না হলেও প্রয়োজনে যে বাইকের ব্যবহার করছেন তা দেখলেই বোঝা যায়।’

 

জামান মোটরসের কর্ণধার আরও বলেন, ‘সবচেয়ে আড়ম্বর বিহীন বাইকটি এমনিতে শক্তপোক্ত। ক্রুজার এবং স্পোর্টস বাইকের মাঝামাঝি শ্রেণির বাইক বেছে নিতে পারেন। তারুণ্যের জন্য ক্রুজার বাইক আদর্শ। ক্রুজারে ভি-টুইন ইঞ্জিন (ডবল সিলিন্ডার ক্ষমতা সম্পন্ন, যার আকার ভি-এর মতো) থাকায়, সিট থেকে হ্যান্ডলবারের দূরত্ব একটু বেশি। তবে, রোমহর্ষক কিছু চাইলে অফরোড বাইকের কোনো জুড়ি নেই। অফরোড বাইক বা ডার্ট বাইক খুব হালকা হয়। এবড়ো-খেবড়ো পাহাড়ি রাস্তায় বা উঁচু-নিচু রাস্তায় চালানোর জন্য অফরোড বাইক জাস্ট অসাম। এই বাইকের চাকাতেও বিশেষ স্পাইক থাকে।’

 

বাজারে নানা ধরনের বাইক আছে। একেকটার কাজ ও মজা একেকরকম। যেমন—রোড-বাইক, স্পোর্টস বাইক, নেইকেড বাইক, মোটো-ক্রস বাইক, ক্রুজার বাইক, চপার বাইক, ইত্যাদি। পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে দামি বাইকগুলো সবসময়েই ক্রুজার বা চপার বাইক হয়। মূলত বাইক কিনতে এলে তারুণ্য আসলে শুরুতেই গতিময়তা খোঁজে। সঙ্গে বাইকের রং আর স্টাইল। সব মিলিয়ে ধুম মাচালে লুকস না থাকলে যেন তারুণ্যের গতি থমকে দাঁড়ায়। তাই তো অনেক তরুণই বেছে নেন রিগ্যাল রেপটর, রুশি, ডেলিম, এলিপোর মতো বাইক।

 

বাইক চালানোর সময় সবার আগে সেফটি। তাই বাইক চালানো ভালোভাবে না শিখে পথে বের হওয়া মোটেও ঠিক নয়। মনে রাখবেন, মোটরবাইক নিয়ে পথে বের হলে জানতে ও মানতে হবে রাস্তাঘাটের চলার নিয়ম-কানুুন। হেলমেট পরতে কখনোই ভুল করা যাবে না। গাড়ির লাইসেন্স ও অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র সঙ্গেই রাখুন। সপ্তাহে ৪০ কিলোমিটারের বেশি বাইক চালালে হাত কিংবা কনুই পর্যন্ত গ্লাভস ব্যবহার করুন। 

 

বাইক চালানোর সময় মাথা রাখতে হবে ঠাণ্ডা। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আর সবচেয়ে বড় বিষয় যেটি তা হলো, আপনাকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর