শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমাধান

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি খুবই সাধারণ সমস্যা। এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার জীবনে কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য হয়নি। ভুক্তভোগীর মূল সমস্যাই হলো খুব শক্ত বর্জ্য। টয়লেটে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও পরিষ্কার না হওয়ায় অনেকেই অস্বস্তিতে ভোগেন, এমনকি ভুক্তভোগীরা কোষ্ঠকাঠিন্যের ভয়ে খাওয়া দাওয়া করতেও ভয় পান। দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্যকে কোনোক্রমেই অবহেলা করা যাবে না। কারণ এটিই হতে পারে জটিল কোনো রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।

 

কোষ্ঠকাঠিন্য কী?

পায়খানা শক্ত বোঝাতে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য শব্দটি ব্যবহার করি। মেডিকেল সায়েন্সের পরিভাষায় পায়খানা সপ্তাহে তিনবারের কম অথবা পরিমাণে কম, শক্ত এবং শুকনা হওয়াকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে। কেউ পর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার পরও যদি সপ্তাহে তিন বারের কম মলত্যাগ করেন, তখন সঠিক কারণ নির্ণয় জরুরি।

 

লক্ষণ বা উপসর্গ

মূল উপসর্গটাই হলো শক্ত ও কঠিন মল। এর সঙ্গে নিম্নে উল্লেখিত একাধিক উপসর্গও থাকতে পারে।

♦ মলত্যাগে অনেক বেশি সময় লাগা।

♦ অনেক বেশি চাপের দরকার হওয়া

♦ অধিক সময় ধরে মলত্যাগ করার পরও অসম্পূর্ণ মনে হওয়া।

♦ মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথা।

♦ প্রায়ই আঙ্গুল, সাপোজিটরি বা অন্য কোনো মাধ্যমে মল বের করার চেষ্টা।

 

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ

নানা কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। অনেকের এমনিতে রোগ বা কারণ ছাড়াই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আবার বেশ কিছু জটিল রোগের লক্ষণ হিসেবেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কিছু কিছু কারণ জীবনযাপনের পদ্ধতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর কিছু কিছু হয়ে থাকে বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবে। জীবন যাপনের পদ্ধতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারণগুলো হচ্ছে—

♦ খাদ্যাভাসের পরিবর্তন—আঁশযুক্ত খাবার ও শাকসবজি কম খাওয়া।

♦ নিয়মিত ফাস্ট ফুড খাওয়া বা বেশি পরিমাণে খাওয়া।

♦ পানি বা তরল খাবার কম খাওয়া।

♦ সুময়মতো মলত্যাগ না করে চেপে রাখার প্রবণতা। আমাদের দেশের বেশির ভাগ কর্মজীবী মহিলার এই অভ্যাসটা আছে। কর্মস্থলের টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত প্রাইভেসি না থাকায় তারা সাধারণত কর্মস্থলে টয়লেট ব্যবহার করেন না।

♦ অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকা।

♦ শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম কম করা।

♦ দুর্ঘটনা বা কোনো রোগের কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকা।

 

রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারণ—

♦ কলোরেকটাল তথা মলাশয়ের ক্যান্সার।

♦ হাইপোথাইরয়ডিজম, হাইপার প্যারাথাইরয়ডিজমের মতো হরমোন ঘটিত রোগ।

♦ ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি।

♦ পার্কিনসন’স ডিজিজ।

♦ বিভিন্ন ধরনের ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায়ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যেমন-আয়রন, ক্যালসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম ও ক্যালসিয়াম যুক্ত অ্যান্টাসিড, আফিম, মরফিন জাতীয় নার্কোটিক ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি।

 

কোষ্ঠকাঠিন্যের জটিলতা—

কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগলে অনেক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন—   

♦ মল ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া।

♦ অর্শ বা পাইলস, ফিস্টুলা বা ভগন্দর, এনাল ফিশার বা গেজ রোগ হওয়া।

♦ রেকটাল প্রোলাপস তথা মলদ্বার বাইরে বেরেনো।

♦ প্রস্রাবের সমস্যা।

♦ ইন্টেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশান বা অন্ত্রে ব্লক বা প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।

 

কোষ্ঠকাঠিন্যে হলেই যে জটিল কোনো অসুখ আছে—তা সব সময় ঠিক নয়, তেমনি একে অবহেলা করাও উচিত নয়। একটু সচেতনতা এবং জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তন এনেই ভালো থাকতে পারেন।

 

প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

কোষ্ঠকাঠিন্যে প্রাথমিকভাবে এর চিকিৎসা—

♦ প্রচুর পানি, শরবত বা তরল খাবার পান।

♦ বেশি শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ। 

♦ নিয়মিত ব্যায়াম এবং হাঁটাচলা করা।

♦ ইসবগুলের ভুসি, বেল, পেঁপে খাওয়া।

♦ সোনাপাতা, এলোভেরা খাওয়া।

♦ হালকা গরম দুধ পান করা।

 

এতে উপকার না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অনেকেই কারণ শনাক্ত না করে বা উপরোল্লেখিত প্রাথমিক ব্যবস্থাগুলো না নিয়েই প্রথম থেকে মল নরম করার বিভিন্ন ওষুধ, সিরাপ এবং মলদ্বারের ভিতরে দেওয়ার ওষুধ প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করলে মলদ্বারের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়।

 

কথায় আছে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।

♦ খাদ্য তালিকায় সব সময় বেশি করে শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার রাখা।

♦ ফাস্ট ফুড যথাসম্ভব কম খাওয়া।

♦ বেশি করে পানি পান করা।

♦ দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করা।

♦ নিয়মিত ব্যায়াম করা।

♦ দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর