শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
এইচ এম ইব্রাহিম

সৃষ্টি আর কৃষ্টিকে ধরে রাখতে হবে

সৃষ্টি আর কৃষ্টিকে ধরে রাখতে হবে

বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরে। অভিজাত পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা এইচ এম ইব্রাহিমের ছোটবেলা কেটেছে জন্মস্থান নোয়াখালীর চাটখিলে। শিক্ষাজীবন থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। রাজনীতির পাশাপাশি জড়িয়েছেন ব্যবসায়ও। তারুণ্য, ফ্যাশন আর সব্যক্তিত্বে একেবারেই ব্যতিক্রম তিনি। নোয়াখালীর চাটখিলের এই জাতীয় সংসদ সদস্যের মুখোমুখি হলে ফ্রাইডেকে অকপটে জানিয়েছেন লাইফস্টাইল, রাজনীতি আর ব্যবসায়ের নানা গল্প। লিখেছেন— রণক ইকরাম

 

বর্তমানে নোয়াখালী-১ আসনের জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন এইচ এম ইব্রাহিম। জন্ম নোয়াখালীর চাটখিলে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে সোয়া কিলোমিটার দূরে ছিল সেই স্কুল। এরপর বড় ভাইয়ের চাকরির সুবাদে চলে যান চিটাগাং। সেখানে পড়াশোনা শেষ করেন। বাবা সরকারি চাকরি করলেও শারীরিক অসুস্থতায় পারিবারিক আপত্তির মুখে চাকরির বয়স শেষ হওয়ার আগেই অবসর নেন।

 

ুপড়াশোনায় দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সুদূর আমেরিকাতেও গিয়েছেন। ফিরে এসে জড়িয়েছেন ব্যবসায়। কিন্তু এইচ এম ইব্রাহিমের রাজনীতির ব্যাপারটা এলো কোত্থেকে। প্রশ্ন করতেই মৃদু হাসলেন সদালাপী এই মানুষটি। বললেন ‘ছাত্রজীবন থেকেই আমি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এই জড়ানোটা কিন্তু যেন তেন জড়ানো নয়। আমাকে দু-দুবার জেলে পর্যন্ত যেতে হয়েছে। তখন অবশ্য স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় ছিল। তবে জেলে বেশিক্ষণ থাকতে হয়নি। এরপর বের হয়ে এসে কর্ম আর শিক্ষার উদ্দেশে চলে যাই আমেরিকায়। নব্বইয়ের দশকে দেশে ফিরে এসে গার্মেন্ট ব্যবসা শুরু করি। এরপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত হই। রাজনীতিটাও চলতে থাকে।’

 

ছাত্রজীবনের রাজনীতি আর এখনকার রাজনীতি- নিজের চোখে অনেক পরিবর্তন দেখেছেন তিনি। বিশ্বের অন্যতম সেরা গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকাতেও ছিলেন অনেক দিন। সব দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন এইচ এম ইব্রাহিম? তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, অনেক সরকারকেই তো দেখলাম, কিন্তু বর্তমান সরকার যেভাবে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাতে মনে হয় ১৯৯৬-২০০৬ পর্যন্তও যদি এই সরকার থাকত তাহলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতাম।’

 

ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গ আসতেই বললেন তিনি কাজপাগল। আবার মাঝে মাঝে একটু আধটু আলসেমিও ভর করে। রাতে একটু দেরি করে ঘুমান। তাই সকালে উঠতে একটু দেরি হয়। মাঝে মাঝে শরীরচর্চা করেন বটে, তবে নিয়মিত নয়। পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও আছে দুই মেয়ে আর এক ছেলে। মেয়ে সলিমুল্লাহ মেডিকেলে চতুর্থ বর্ষে পড়ে। ছেলে ক্যালিফোর্নিয়াতে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করে। আর ছোট মেয়ে ডিপিএইচ স্কুলে পড়ে। এর বাইরে অবশ্য পরিবারটা বড়। সাত ভাই চার বোনের মধ্যে এক ভাই মারা গেছে। সবাই এখনো একসঙ্গেই থাকেন।

 

পোশাকের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো পছন্দ নেই এইচ এম ইব্রাহিমের। বললেন ‘আমি আসলে এক সময় শার্ট-প্যান্টই পরতাম। তারপর নব্বইয়ের দশকে যখন সরাসরি পাবলিকের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ গড়ে ওঠে তখন বেশির ভাগ সময় পায়জামা পাঞ্জাবি পরতাম।’

 

এখন পরিবেশ অনুযায়ী যখন যেটা দরকার তখন সেটাই পরেন। প্যান্ট-শার্ট ব্লেজার, পাঞ্জাবি যখন যেটা দরকার। ফ্যাশনের সংজ্ঞা জানতে চাইলে তিনি বলেন— ‘আমার কাছে ফ্যাশনের সংজ্ঞা হলো, প্রতিটি মানুষের কাছে নিজস্ব থিম চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। পোশাকের ভিতর সেটা কম দামি হোক কিন্তু অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে। ফ্যাশন মানে উগ্রতা নয়, মার্জিত হওয়া উচিত।

 

গার্মেন্টের পর তিনি জড়িয়েছেন ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায়। শিপিং লাইনের ব্যবসাসহ আরও কিছু ব্যবসাও রয়েছে। তবে এর মধ্যে তার আরেকটি ব্যবসার কথা কেউ জানে না। সেটা হলো মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা। ছাত্রজীবন থেকেই মঞ্চের কর্মী ছিলেন। এর দীর্ঘদিন পর প্রযোজক হিসেবে প্যাকেজ নাটক বানানো শুরু করেন। সম্প্রতি একটি চলচ্চিত্রও প্রযোজনা করেছেন। মুভিটির নাম ‘হালদা’। বানিয়েছেন তৌকীর আহমেদ। এর মূল থিম হলো, অনেক হেরিটেজের মধ্যে হালদা একটি হেরিটেজ। এই হেরিটেজকে পৃথিবীর মানুষ এবং বাংলাদেশের মানুষের সামনে তুলে ধরা।

 

বাংলা চলচ্চিত্রের জাগরণে আরও অনেক ভূমিকা রাখতে চান এইচ এম ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ওপর ছবি করার কথা চলছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করব। আমার বন্ধুদের কেউ আছেন যারা সরাসরি যুদ্ধ করেছেন। তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করতে চাই।’

নোয়াখালীর জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজের মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বললেন, এটা জনগণই ভালো বলতে পারবে। এরপর যোগ করেন ‘অর্জন বলতে আসলে তৎকালীন জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে কিছু কাজ হয়েছে, তারপর আমিই বেশ কিছু কাজ করেছি। এরপর আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত জুনে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ সম্ভব হয়েছে। অবকাঠামোগত দিক থেকে তেমন কিছু বাকি নেই, গ্রামীণ কিছু রাস্তা বাকি সেগুলো খুব দ্রুত শেষ হবে। আর স্কুল-কলেজ, মসজিদের কাজ হচ্ছে। তাতে মনে করি, অন্য আসনের তুলনায় আমার আসনে কাজ বেশি হয়েছে।’

 

সব দিক থেকে সফল মানুষ এইচ এম ইব্রাহিমকে ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন আর বাকি সব দিক থেকে আধুনিক মানুষ বলাই যায়। কিন্তু এই আধুনিক মানুষের সংজ্ঞাটা তার কাছে কী? তিনি বললেন, ‘আধুনিক মানুষ বলতে অনেকভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। জ্ঞানের ওপর আসলে মানুষের আধুনিকতা নির্ভর করে। তার চিন্তা চেতনা, কাজের ওপর আধুনিকতা নির্ভর করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি শুধু পোশাকেই নয়, তার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হবে। তার কৃষ্টি ধরে রাখতে হবে। আমরা বাঙালি জাতি। আমাদের সত্তা বাঙালি। সে হিসেবে বাঙালিয়ানা আমাদের মাঝে থাকতে হবে।

 

তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার উপায় কী? এইচ এম ইব্রাহিম বলেন, ‘আমি মনে করি, ড্রাগ থেকে দূরে থাকতে হবে। তাদের মুক্ত রাখতে হবে, যাতে আমরা আগাইতে পারি এবং ভালো ও আধুনিকতার শিক্ষা দিতে হবে। এতে দেশ সামনের দিকে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা আরও ত্বরান্বিত হবে।’

সর্বশেষ খবর