শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝলমলে চুলের ঐশ্বর্য

ঝলমলে চুলের ঐশ্বর্য

♦ মডেল : আনিকা কবীর শখ ♦ ছবি : নেওয়াজ রাহুল ♦ স্টুডিও : এক্সপোজ

নারীর সৌন্দর্যের অন্যতম গোপন রহস্য ঝলমলে চুল। এমন চুলে মানানসই কাট যে কারও চেহারায় আনতে পারে নতুনত্ব। হরেক রকমের অনুষঙ্গ দিয়ে ঝলমলে চুলকে সাজানো সম্ভব মনোহারী রূপে। পাথর বসানো হেড চেইন, হেয়ার পার্ল, পুঁতি বসানো ক্লিপ বা দৃষ্টিনন্দন পাঞ্চ ক্লিপ বাড়িয়ে দিতে পারে ঝলমলে চুলের ঝলকানি। বিস্তারিত জানাচ্ছেন— তানিয়া জামান

 

যে কোনো নারীকে রূপে ঐশ্বর্যময়ী করে তুলতে ঝলমলে একগোছা চুলের তুলনা হয় না। চুলের সাজ বদলে দিতে পারে পুরো লুকটাই। মুখের চেহারা, গায়ের রং পরিবর্তন না করেও শুধু চুলের সৌন্দর্যের কারণে আপনার চেহারা পেতে পারে নতুনত্ব। যেমন কোঁকড়া চুলে আপনাকে লাগবে একরকম, সিল্কি চুলে লাগবে অন্যরকম। আবার নিষ্প্রাণ চুলে হয়তো আপনি সৌন্দর্যহীন, কিন্তু ঝলমলে চুলে লাগবে দারুণ উচ্ছ্বসিত।

 

খুব বেশি সাজগোজ না করেও ঝলমলে চুলের গুণে আপনাকে লাগতে পারে সবসময় ফিট। আবার খুব সহজেই পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে এমন চুলকে সেট করতেও বেগ পেতে হবে না। এককথায় নারীর সৌন্দর্যের প্রায় আধাআধি নির্ভর করে ঝলমলে চুলের ঐশ্বর্যের ওপর। আদিকাল থেকেই গভীর কালো চুলের অধিকারী নন্দিনীর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে আসছে পুরুষরা। যুগ পাল্টেছে, তবু প্রিয়ার ঝলমলে চুলের আধারে নিজেকে আজও হারায় প্রেমিক পুরুষ। শুধু প্রিয় মানুষের মন জয় নয়, অন্য সবার কাছে নিজেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যে উপস্থাপন করতে ঝলমলে চুল অতুলনীয়।

 

মাথায় একগোছা ঝলমলে চুল থাকলে হালকা পনিটেইল করে সঙ্গে পরতে পারেন পাথর বসানো হেড চেইন। এবার একটি গাউন স্টাইলের পোশাক— প্রথম লুকেই আপনাকে রানী বললে ভুল হবে না। অনেকে আবার নানা রকম পাথর বা পুঁতি বসানো মালা পরছেন চুলে। আজকাল এমন চুলের সাজে বয়স লুকানোও যেন একটি তুড়ির ব্যাপার মাত্র। যে কোনো কাটের ঝলমলে চুলে নান্দনিক একটি হেডব্যান্ড লাগিয়ে পুরো চুল ছেড়ে রাখুন। টপস স্টাইলের পোশাকের সঙ্গে আপনি সহজেই যেন টিনেজ বনে গেলেন। স্কার্টের সঙ্গে এ ধরনের চুল খোলা রেখে করতে পারেন আলাদা কোনো স্টাইল। যে কোনো একপাশে সিঁথি করে কপালের উপরের চুলগুলো টুইস্ট স্টাইলে মুড়িয়ে নিন। এবার ছোট্ট একটি পাঞ্চ ক্লিপে আটকে রাখলেই হলো। নিতান্তই চুল খোলা রাখতে না চাইলে বেণি করলে দারুণ মানাবে। প্লেন বেণি অথবা ফ্রেন্স বেণিতে খারাপ লাগবে না। চুল সুন্দর হলে শুধু একটি রাবার ব্যান্ডেও আপনাকে মনোহারী লাগবে। তা ছাড়া বাজারে পাওয়া হরেক রকমের অনুষঙ্গ দিয়ে ঝলমলে চুলকে সাজাতে পারেন মনোহারী রূপে। পুঁতি বসানো ক্লিপ বা দৃষ্টিনন্দন পাঞ্চ ক্লিপগুলোও হতে পারে আপনার চুলের সঙ্গী।

 

চুলের সাহায্যে আপনার সৌন্দর্যে আরও অনেক বৈচিত্র্য আনা সম্ভব। আপনার চেহারা ও যে ধরনের পোশাক বেশি পরা হয় তার সঙ্গে মিলিয়ে চুলের কাট দেওয়া উচিত। ইমো, শ্যাগি কাটের সঙ্গে সালোয়ার-কামিজ খুব বেশি মানাবে না। যারা বেশির ভাগ সময় ফতুয়া, টি-শার্ট বা শার্ট পরতে পছন্দ করেন তাদের এসব কাটে মানিয়ে যাবে। ফাংকি কাটেও ভালো মানাবে। যারা একটু কম ফোলানো চুল চান, তাদের জন্য ইন্টারনাল লেয়ারটা ভালো। গলার উচ্চতা কম হলে ছোট চুল ভালো লাগবে। গলা লম্বা হলে লম্বা চুল দেখতে ভালো লাগবে। যাদের চেহারা গোল ধরনের, তারা লেয়ারের প্রথম কাটটা গলার কাছাকাছি থেকে শুরু করলে ভালো লাগবে।

 

লাভ শেপের চেহারার অধিকারীরা ব্যাংগস না করে গালের ওপর পড়ে থাকবে, এমনভাবে চুল কাট দিতে পারেন। ডিম্বাকার চেহারার জন্য ব্যাংগস ভালো। চারকোনা চেহারায় ব্যাংগসটা অতটা মানানসই নয়। ব্যাংগস রাখতে চাইলে ফ্রন্ট লেয়ারও রাখতে হবে। গোলমুখে যদি কপাল ছোট হয়, তাহলে ফ্রিনজেস করা যেতে পারে। এবার কাঙ্ক্ষিত সৌন্দর্য পেতে চুলে নিউট্রিশান ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে হবে। এতে চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে ও প্রাণবন্ত। ফলে আপনার লুকে গর্জিয়াস পরিবর্তন চলে আসবে সহজে। অনেকের ধারণা শুধু সোজা চুলই ঝলমলে হয়। অথচ আপনার চুল কোঁকড়া বা হালকা ঢেউ খেলানো হলেও তাকে প্রাণবন্ত ও ঝলমলে করা সম্ভব। এককথায় চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান থাকলে তা এমনই ঝলমলে হবে।

 

আজকাল অনেকে চুলে রং করতে পছন্দ করেন। এতে সাজের সময় খুব বেশি মেকআপের প্রয়োজন হয় না। চড়া রং যেমন নীল, সবুজ, লাল, ম্যাজেন্টা, বেগুনি ইত্যাদি দিয়ে ওমব্রে স্টাইলটি আজকাল বেশি দেখা যাচ্ছে। এই স্টাইলে চুলের আগা থেকে গাঢ় হয়ে উপরের দিকে হালকা রং ধারণ করে। তবে চুলে রং করার আগে আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যাতে মিলে যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আপনি চাইলে পুরো চুলে রং করতে পারেন। হাইলাইট বা স্টিক কালারও করিয়ে নিতে পারেন। কেউ কেউ শুধু ঘাড়ের কাছের কিছু চুলে চড়া রং করেন।

 

চুলে যে কাটই দিন না, আর যেভাবেই রং করুন না কেন ঝলমলে চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতে দরকার উপযোগী যত্ন। আসছে গ্রীষ্মকাল। গরমের সময় রোদে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল হয়ে যায় নিষ্প্রভ। নিয়ম করে চুলে অয়েল ম্যাসাজ, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং করার কথা ভোলা যাবে না। এ ছাড়া সপ্তাহে অন্তত এক দিন হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এটি চুলের ভিতর থেকে পুষ্টি জুগিয়ে মজবুত করে। দেখে নিন কিছু হেয়ার প্যাক তৈরির নিয়ম।

 

প্যাক - ১

দুটি পাকা কলা ভালো করে চটকে নিন। এর সঙ্গে অলিভ অয়েল, মধু, টকদই মেশান। এবার পুরো মিশ্রণটি চুলে ভালো করে লাগাতে হবে। আধাঘণ্টা অপেক্ষা করে হালকা শুকাতে হবে। এবার ভালো করে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন। এতে চুল আগের চেয়ে ভালো দেখাবে।

 

প্যাক - ২

দু-তিন টেবিল চামচ দুধ ও সামান্য মধু একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এবার চুলে লাগিয়ে হালকা করে ম্যাসাজ করতে থাকুন। শাওয়ার ক্যাপ পরে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে আপনার চুল উপযোগী শ্যাম্পু দিয়ে। নিয়মিত এ প্যাক ব্যবহারে চুল নরম হবে এবং উজ্জ্বলতা বাড়বে।

 

প্যাক - ৩

চুলের পুষ্টির জন্য মেথি খুব উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস, প্রোটিন, নিকোটিনিক অ্যাসিড পুষ্টি যুগিয় চুলকে করে তোলে সুন্দর। কিছুটা মেথি নিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রেখে পরের দিন পেস্ট করতে হবে। এবার তা পুরো চুলে লাগিয়ে ৪০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগাতে হবে।

 

অয়েল ম্যাসাজ

চুল ভালো রাখার প্রথম মন্ত্র হলো অয়েল ম্যাসাজ। এতে স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল ভালো হয়, চুলের পুষ্টি জোগায়। এতে চুল পড়া কমে এবং চুল হয়ে ওঠে ঝরঝরে ও চকচকে। অয়েল ম্যাসাজের জন্য নারিকেল তেল, আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, আমলা অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে পুরো চুলে ও স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগিয়ে নিন। এবার ১৫ মিনিট হালকা করে ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন অয়েল ম্যাসাজ করলে চুলের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।

যাদের চুলের গোড়া বেশি ঘামে তারা বাড়ি ফিরে আগে চুল শুকিয়ে নিন। এরপর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিতে হবে। গরমে চুলের আগা ফাটা ও রোদে পোড়া থেকে মুক্তি পেতে মাসে একবার আগা ছেঁটে নিতে পারেন। বেশি রোদের ভিতর স্কার্ফ বা ছাতা ব্যবহার করা উপযুক্ত হবে।

 

প্রতিদিন চুলের যত্ন

ঘুমাতে যাওয়ার আগে চুল ভালো করে আঁচড়ে নিন। আস্তে আস্তে চুলের জট ছাড়িয়ে নিতে হবে। বড় চুল হলে খোঁপা বা বিনুনি করে নিন। চুলে জট পড়বে না। অনেকের ধারণা চুল খুব টেনে বাঁধলে দ্রুত লম্বা হয়। অথচ টেনে বাঁধার কারণে চুলের গোড়া দুর্বল ও সহজে ভঙ্গুর হয়। চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং ঝলমলে একগোছা চুল পেতে উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

 

চুলের বেশির ভাগ যত্ন কিন্তু নির্ভর করে শ্যাম্পুর ওপর। কারণ ভালো উপাদান যুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে ধুলে চুল ভালো থাকে। চুলের খুশকি দূর, শুষ্কতা কমানো বা চুল পড়া কমানোর জন্য কোন শ্যাম্পুটি আপনার জন্য ভালো হবে সেটি জানা দরকার আগে। হাইড্রেটিং বা ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু চুলে ময়েশ্চার যোগ করে। উসকো-খুসকো চুলকে ঝলমলে করতে এই ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু হবে উপযোগী। যাদের মাথায় চুল কম তারা ব্যবহার করতে পারেন ভলিউমাইজিং শ্যাম্পু। এতে মাথায় অল্প চুল থাকলেও বেশি দেখায়। ড্যামেজ, রং করা, দুর্বল চুলে পুষ্টি জোগাতে স্ট্রেংদেনিং শ্যাম্পু ভালো হবে। তাই চুলের ডগা ফাটা বা অত্যধিক চুল পড়ার সমস্যা থাকলে এই শ্যাম্পু উপযোগী হবে। এ ছাড়া সব রকমের চুলেই ব্যবহার করতে পারেন ব্যালান্সিং শ্যাম্পু। এটি যেমন চুল ড্রাই করে দেয় না, আবার অতিরিক্ত ময়েশ্চারও করে না। ফলে আপনার চুল আগের মতোই থাকবে। কোনো ধরনের সমস্যা না থাকলে চুলে ব্যালান্সিং শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর