শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

লেডিস শেরওয়ানিতে চমক

লেডিস শেরওয়ানিতে চমক

♦ মডেল : শ্রাবন্তী ♦ পোশাক : ভ্যালেন্টিনো ♦ ছবি : গোলাম মোস্তফা ♦ মেকওভার : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড ♦ স্টুডিও : এক্সপোজ

ফ্যাশন দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন কিছু। পুরনো ধারণা পাল্টে যাচ্ছে সহজেই। জাগিয়ে তুলছে নতুন চমক। এমনই এক চমকের নাম ‘লেডিস শেরওয়ানি’। শেরওয়ানি এখন শুধুই পুরুষের দখলে নেই। ফ্যাশনে নতুনত্ব যোগ করেছে নারীদের শেরওয়ানি। লেডিস শেরওয়ানির খোঁজখবর জানাচ্ছেন— তানিয়া জামান

 

হাল আমলের পোশাক বৈচিত্র্যে পাবেন নানা রকম ছোঁয়া। একাল-সেকালের সব স্টাইলকে তুলে আনা হয়েছে সে বৈচিত্র্যময় ধারায়। তবে পরিবেশনে থাকে সামান্য পার্থক্য। এ বিষয় মাথায় রেখে দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো নিয়মিত ভিন্নতার ছাপ রাখছে রকমারি সব আয়োজনে। নিজেকে ট্রেন্ডি লুকে উপস্থাপন করতে ফ্যাশন সচেতনরাও সেসব আয়োজন থেকে বেছে নিচ্ছেন পছন্দের পোশাকটি।

 

শেরওয়ানি নামটি শুনলেই মনে বেজে ওঠে সানাইয়ের সুললিত সুর। আর চোখের সামনে ভেসে ওঠে লাজুক বরের পরনে থাকা চকচকে পোশাকটি। শেরওয়ানি নামের এই পোশাকটি আদিকাল থেকে বিয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইতিহাস বলে আগের আমলের রাজা বাদশাদের পোশাক ছিল শেরওয়ানি। তাদের সাজ পোশাকে আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে পোশাকটি পেত বিশেষ গুরুত্ব। দিন বদলেছে, যান্ত্রিক এ জীবনে সবসময় আভিজাত্য দেখানোর সুযোগ কোথায়? কিন্তু বিয়ের একটি মাত্র দিন সবার কাছেই স্পেশাল। এই দিনে বর হয়ে ওঠেন আভিজাত্যময় রাজা-বাদশা। মনের রানীকে বরণ করে নিতে আজ তার এমন আয়োজন। বিয়েতে ঠিক এমন আবহ ফুটিয়ে তুলতেই হয় তো যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে শেরওয়ানি। আর তাই তো শেরওয়ানি বললেই মনে হয় এটি ছেলেদের পোশাক। কিন্তু বর্তমান ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে এসেছে পোশাক বৈচিত্র্য। সেখানে ছেলেমেয়ের পোশাক ধারা নিজেদের গণ্ডি পেরিয়ে মিলেমিশে একাকার। একে আপনি ফিউশনধর্মী ট্রেন্ডও বলতে পারেন। আর তাই তো মেয়েরা এখন পোশাক হিসেবে বেছে নিচ্ছেন শেরওয়ানি। ফুটে উঠছে লেডিস শেরওয়ানিতে নতুনের চমক।

 

পোশাকটির নাম শেরওয়ানি হলেও ছেলে ও মেয়েদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে কিছুটা পার্থক্য রেখে। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন অঙ্গনে বেশ কিছুদিন থেকে এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিয়ের কনের সাজে বা জাঁকজমক কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যে কোনো মেয়ে বেছে নিতে পারেন ঐতিহ্যবাহী এই পোশাক। তা ছাড়া যারা নিজেদের সাজগোজে ভাবগাম্ভীর্য ফুটিয়ে তুলতে চান তারাও অনায়াসে বেছে নিতে পারেন লেডিস শেরওয়ানি। যারা সবসময় নিজেদের একটু ট্রেন্ডি লুকে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য লেডিস শেরওয়ানি হতে পারে নতুন সংযোজন। 

 

নাম শেরওয়ানি হলেও এর ভিন্নতা দেখা যাবে কাটছাঁট আর নকশার ধরনে। শেরওয়ানির বৈশিষ্ট্য হিসেবে আমরা জানি, সামনের দিকে মাঝ বরাবর চেরা থাকবে। গলা থেকে পেট পর্যন্ত বোতামে আটকানো এবং নিচ পর্যন্ত থাকবে খোলা। দৈর্ঘ্য গড়াবে হাঁটু পর্যন্ত বা তার থেকে নিচ অবধি। মেয়েদের শেরওয়ানিতেও এই রীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। তবে মেয়েদের শেরওয়ানিতে কাটের দিকে একটু ভিন্নতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। কিছু শেরওয়ানির সামনের দুই পার্ট কিছুটা ধনুকের পিঠের মতো গোলাকার দেখা যাচ্ছে। কেউ দিচ্ছেন সোজা কাট। কোনো শেরওয়ানির নিচের অংশটি পুরোটা ওভাল শেপের, কেউ করছেন একদম স্ট্রেটকাটের। তবে শেরওয়ানির ক্ষেত্রে একটি কমন ব্যাপার থাকছেই। আর তা হলো শেরওয়ানিটি অবশ্যই ফিটিং শেপের হবে। ফিউশন করতে চাইলে সামনে খাটো দিয়ে পেছনে লম্বা ঝুল দেওয়া যেতে পারে। কাঁধ চওড়া থাকবে, হাতা হবে কোটের হাতার মতো।

 

মেয়েদের শেরওয়ানিতে থ্রিপিসের মতো বুকে ভারি নকশা থাকে না। কলার আর হাতায় থাকে মসৃণ কাজ। তবে নিচে ঝুলের দিকে নকশার কিছুটা আধিক্য দেখা যাবে। পিঠে থাকতে পারে সামান্য ডিজাইনের ছোঁয়া। সোজা পার্টের শেরওয়ানিতে গলা থেকে নিচের ঝুল পর্যন্ত চওড়া পাড়ের প্লেট লাগানো থাকতে পারে। কেউ চাইলে অ্যামব্রয়ডারি করা চিকন লেস লাগিয়ে নিতে পারেন। তবে হ্যাঁ, শেরওয়ানির বোতামগুলো হতে হবে অবশ্যই মানানসই। কারণ বুকে ভারি কাজ না থাকায় বোতামের লুক বেশি হাইলাইট হবে। সেক্ষেত্রে বাটনের সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করছে আপনার শেরওয়ানির সৌন্দর্য। শেরওয়ানির বোতামে কারুকাজ থাকলে ভালো দেখায়। বোতামের পরিবর্তে পুঁতি বা চেইনও ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো কোনো শেরওয়ানিতে আলাদা প্লেট কাপড় লাগিয়ে বাটন ঢেকে রাখা হয়। সেক্ষেত্রে এই প্লেটটি হবে নকশাদার।

 

শেরওয়ানির ডিজাইনে জরি ও রেশমি সুতার অ্যামব্রয়ডারি ভালো লাগে। তবে খেয়াল রাখতে হবে কাজগুলো যেন মসৃণ হয়। কারণ আভিজাত্যময় থিমের এই পোশাকে এলোমেলো বা ত্রুটিপূর্ণ কাজ পুরো আয়োজনকেই বৃথা করে দিতে পারে। এক কথায় শেরওয়ানি নির্বাচনে রুচিশীল হওয়া প্রয়োজন। পোশাকের রং বিবেচনায় গোলাপি, নীল, সোনালি, কফির মতো ডিপ রং প্রাধান্য পাবে। লাইট কালার যেমন লেমন, সোডিয়াম, বাঙি ইত্যাদি এড়িয়ে চলাই ভালো। 

 

এ ধরনের পোশাকের সঙ্গে চাপা ফোর কোয়ার্টার প্যান্ট মানাবে। অর্থাৎ পায়ের গিরার ওপরে ওঠা প্যান্ট ভালো লাগে। ফিটিং চুড়িদার পায়জামাও শেরওয়ানির সঙ্গে উপযুক্ত। প্রিন্টেড জেগিংস পরলেও মন্দ লাগবে না। এগুলোর ক্ষেত্রে কালার ম্যাচিং বা ডিপ যে কোনো কালার বেছে নিতে পারেন। জুতার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক উচ্চতার হিল, হাইহিল ও নাগরা স্টাইলের পাথর-পুঁতিখচিত জুতা ভালো লাগবে।

 

শেরওয়ানি যেহেতু প্রায় পেট পর্যন্ত চেরা থাকে তাই এর নিচে স্কিন কালারের অথবা ম্যাচিং করে টিশার্ট পরতে পারেন। হিপের নিচ পর্যন্ত ঝুলের কামিজের সঙ্গেও পরা যেতে পারে। আজকাল বাজারে ঢিলেঢালা প্লাজো পাওয়া যাচ্ছে, শেরওয়ানির সঙ্গে এটিও ভালো লাগবে। চাইলে স্কার্টের সঙ্গে শেরওয়ানি পরা যায় অনায়াসে। তাই স্কার্টটি হতে হবে স্টাইলিশ ও নকশাদার। এক্ষেত্রে আপনাকে লাগবে সম্পূর্ণ অন্যরকম। অনভ্যাসে শেরওয়ানি পরতেও তখন আর ইতস্তত লাগবে না।

 

সুন্দর একটি শেরওয়ানি পেতে আপনাকে অবশ্যই কাপড়ের দিকে নজর দিতে হবে। কারণ কাপড়ের সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করছে শেরওয়ানির জাঁকজমক ভাব। শেরওয়ানির কাপড় হিসেবে বেছে নিতে পারেন ভেলভেট, মখমল, কাতান বা এই ধরনের ভারি কোনো কাপড়। পোশাকের সঙ্গে ডিজাইনের কম্বিনেশনে ভাবগাম্ভীর্য ফুটিয়ে তুলতে এ ধরনের কাপড় অনন্য। পুরো কাপড়ে সুতার জমকালো কাজ থাকলে তা অন্যরকম লুক দেবে।

 

মেয়েদের সাজ মানেই নানা অনুষঙ্গের ব্যবহার। শেরওয়ানি পোশাকটিই যেহেতু ঐতিহ্যবাহী তাই সাজের জন্যও বেছে নিতে হবে ঐতিহ্যবাহী গয়না। একটু বড় ধরনের মালা, কয়েক লহরের বড় মুক্তা বা পুঁতির মালা শেরওয়ানিতে ভালো লাগবে। পরতে পারেন বড় লকেটের একটি হার। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে আঙ্গুলের শোভা বাড়াতে পাথরের আংটি ভালো লাগবে। হাতে ব্রেসলেট, ঐতিহ্যবাহী নকশার বালা বা রতনচূর পরা যেতে পারে। পরিহিত গয়নাগুলো অ্যান্টিক ডিজাইনের বা এর কাছাকাছি হলে আরও বেশি ভালো। চুলটা বাঁধতে হবে একটু ভিন্নভাবে। শেরওয়ানির জাঁকজমক ভাবটি ফুটিয়ে তুলতে চুলগুলো খুলে না রাখায় ভালো। উঁচু করে ফুলিয়ে বা টান টান করে খোঁপা করা যেতে পারে। খোঁপায় ব্যবহার করতে পারেন বাহারি হেডচেইন, কাটা বা হেয়ার ক্লিপ। পাগড়ির স্টাইলে হিজাবও বেঁধে নিতে পারেন। এতে আপনার পুরো লুকই বদলে যাবে। নিতান্তই চুল খোলা রাখতে চাইলে প্রাধান্য পাবে কাঁধ বা পিঠ অবধি চুল। এতে পনিটেইল করে ছেড়ে রাখলে ভালো দেখায়। বেশি লম্বা চুল ছেড়ে রাখলে শেরওয়ানির জাঁকজমক ভাবটি লুকিয়ে যেতে পারে।

 

গয়না পোশাক উভয়ই ভারি তাই মুখের মেকআপটি হতে হবে হালকা। কারণ শেরওয়ানি ঐতিহ্যে সাজের চেয়ে ভারি গয়নার প্রাধান্যই বেশি দেখা যায়। বেজ মেকআপটি করুন নিখুঁতভাবে। ঠোঁট আর চোখের সাজে চড়া রং এড়িয়ে চলায় ভালো। লম্বা আকৃতির ঝুমকা ও চ্যাপটা দুল এমন পোশাকে দারুণ মানাবে। হাতের ব্যাগটি বটুয়া বা ক্ল্যাচ হলেই ভালো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর