শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

মনোবিদের মুখোমুখি

অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

মনোবিদের মুখোমুখি

সুশিক্ষিত, আধুনিক চিন্তাভাবনার অনেক মেয়ে আজও মনে করেন ভবিষ্যতের লাইফ পার্টনারটি যেন রোজগারের দিক থেকে দাপুটে হয়। বেতন আপনার চেয়ে বেশি বা কম, তাতে কী! দুজনে মিলে চলে গেলেই তো হলো, নাকি?

 

সমস্যা :

আমার বয়স ১৮ বছর। ঢাকার স্বনামধন্য কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছি। এখন ভর্তি পরীক্ষার জন্য ট্রাই করছি। আমার বান্ধবীদের বয়ফ্রেন্ড আছে। আমারও ইচ্ছা বয়ফ্রেন্ড করে ফেলি। কিন্তু বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে আমার একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আমার বান্ধবীরা বলে, ভালো বয়ফ্রেন্ড তারাই যারা বেতনের দিক থেকে দাপুটে। এমনকি তারা ভবিষ্যতে যা বেতন পাবে তার চেয়েও যেন বেশি বেতন পায়! তাহলে, ভালো বয়ফ্রেন্ড মানেই কি মোটা বেতনের চাকরি? 

— অর্পিতা নীলিমা, ধোলাইখাল।

 

সমাধান :

এ এক অদ্ভুত সামাজিক বাঁধাধরা। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের সমানাধিকারের দাবি আমরা যতই মেনে নিই না কেন, এই ধারণায় কিন্তু এখনো পরিবর্তন আসেনি। ছেলেবেলা থেকে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়। একসময় ছেলেদের বাইরের কাজ সামলাতে হতো আর মেয়েদের অলিখিত দায়িত্ব ছিল সংসার সামলানো। আজ সেই ছবিটা বদলে গেছে। পুরুষের পাশাপাশি রীতিমতো টেক্কা দিয়ে ঘরে-বাইরে দাপটের সঙ্গে কাজ করছে মেয়েরাও। তা সত্ত্বেও আজ বিয়ের বাজারে সুপাত্রের প্রথম ও প্রধান শর্ত, পার্মানেন্ট চাকরি বা সরকারি চাকরি। মেয়েটির চাকরি পার্মানেন্ট হলে উত্তম, না হলে আপত্তি নেই। বিপদে-আপদে মেয়েটির চাকরি চলে গেলেও পাত্রের চাকরি তো পাকাপোক্ত, দ্যাটস এনাফ! সুশিক্ষিত, আধুনিক চিন্তাভাবনার অনেক মেয়ে আজও ভাবে, আমার ভবিষ্যতের লাইফ পার্টনারটি যেন রোজগারে তার চেয়ে বেশি দাপুটে হয়। যার সঙ্গে আপনি সারা জীবন এক ছাদের নিচে কাটাবেন, তার রোজগার কত, তা দিয়ে কি সংসার চলবে, এ ভাবনাগুলো মাথায় আসা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে তো ‘তার রোজগার আপনার চেয়ে বেশি হতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই! তাহলে এত বিদ্যার্জন, এত জ্ঞানার্জন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্টনেস আনা, ইন্টারনেটে বিশ্বকে জানা, এসব করে লাভ কী? যদি না আপনি সেকেলে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারেন। এর একটা কারণ বছরের পর-বছর ধরে চলে আসা অলিখিত অভ্যেস। যা ঢুকে বসে আছে আমাদের রক্তে-রন্ধ্রে। তৈরি করে ফেলেছে অবচেতন ধারণা। যে ধারণা বলে, দিনের শেষে সংসারে টাকা-পয়সার চিন্তা পুরুষ মানুষের কাঁধে। অনেক মেয়ে চান ‘তার বয়ফ্রেন্ড কিংবা ভবিষ্যৎ লাইফ পার্টনারের মোটা অঙ্কের বেতন হোক। এই নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সারা জীবনের জন্য যে আমার পার্টনার হবে, তার বেতন আপনার চেয়ে বেশিই হোক বা কম হোক, তাতে কী আসে যায়? দুজনে মিলে চলে গেলেই তো হলো। পুরুষ মানুষের জেদ বেশি। তার তাড়নায় সে নিজে ভাবলেও ভাবতে পারে যে, তার জীবনসঙ্গীর চেয়ে তার রোজগার বেশি হতে হবে (যদিও এই ভাবনাটা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়)। এই বিষয়টা ছেলে-মেয়ে দুই দলেরই চিন্তাভাবনা করে পাল্টানোর সময় এসেছে। তবে একজন সুপাত্র হিসেবে ছেলেটি কেমন সেদিকটির বিষয়েও খেয়াল করে দেখা উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর