শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

অবাধ্য চুলে তেল...

সাদিয়া সারা

অবাধ্য চুলে তেল...

এমন উষ্ক-শুষ্ক চুলও লাবণ্যতা ফিরে পাবে তেল ব্যবহারে। ছবি : ফ্রাইডে

চুলের যত্ন তেল ছাড়া নেহায়েতই অসম্ভব। আগের দিনের শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- তেলই ছিল ভরসা। যদিও আজকাল তেলের ব্যবহার কমেছে বটে, কিন্তু তেলের মতো যত্ন আর আছে কিসে! আজকাল নানা প্রসাধনী পণ্যে বাজার সয়লাব হলেও এখনো চুলের নানা সমস্যায় সেই পুরনো তেলকেই তোষামোদ করতে হয়।

 

কথায় যতই বলি না কেন তেল দিয়ে কাজ নেই। কিন্তু রূপচর্চায় তেল একটি অপরিহার্য উপাদান। রূপচর্চায় তেলের ব্যবহারের কথা ভাবলেই আগের দিনের শীতের সকালগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। সেকেলে তেল দিয়ে মাথা থেকে পা অবধি ত্বকচর্চা করতেন। গোসলের আগে কিংবা পরে তেল মালিশ ছাড়া ঘর থেকে বের হতেন না। এককথায় সেই আদিমকাল থেকেই তেলের ব্যবহার চলে আসছে। তেল দিয়ে কেউ চুল মজবুত করে কেউবা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে তেল ব্যবহার করে থাকেন। তেল ত্বক কিংবা চুল উভয় ক্ষেত্রেই প্রশংসনীয়। চুলের পুষ্টি জোগাতে নিয়মিত তেল ব্যবহার করতে হয়। তাড়াহুড়োর জীবনে মা-খালাদের মতো আয়েশ করে তেল দেওয়ার সময় এখন আর নেই। তবুও চুল রক্ষা করতে চাইলে তেল লাগাতেই হবে। অনেকেই প্রশ্ন করেন, শ্যাম্পুর মতো তেলও রোজ ব্যবহার করতে হবে? না, প্রতিদিন চুলে তেল লাগানো প্রয়োজন নেই। তবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও ঝলমলে চুলের জন্য সপ্তাহে অন্তত একদিন চুলের গোড়ায় এবং পুরো চুলে তেল লাগাতেই হবে।

 

মাত্র এক ঘণ্টা। গোসলের আগে এটুকু সময় মাথায় তেল রাখতে পারলেই হবে। তবে মাথায় শুধু তেল লাগালেই হবে না, ম্যাসাজও প্রয়োজন। এতে স্ক্যাল্পের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। নারিকেল তেলকে যতই সাধারণ মনে করা হোন না কেন, নারিকেল তেলে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন ই ও ফ্যাটি অ্যাসিড- ঘন কালো রেশমি চুলের গোপন রহস্য। জোজোবা অয়েলের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ই, আয়োডিন, তিন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বক তো বটেই চুলের জন্যও বেশ কার্যকরী। বর্তমানে বিভিন্ন বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে আমন্ডের গুণকথা তুলে ধরা হয়। আমন্ডের তেলে রয়েছে মোনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ই যা চুলকে করে মজবুত ও প্রাণবন্ত। চুলের রূপরুটিনে এই তেল দারুণ চমক আনতে পারে। যারা পাতলা চুলের সমস্যায় ভুগছেন তারা এই তেল ব্যবহারে অবশ্যই ভালো ফল পাবেন। আর্গান অয়েল আজকাল বিভিন্ন হেয়ার কেয়ার প্রটেক্টের নতুন সংযোজন। এই তেলে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট তো রয়েছেই, এ ছাড়াও এমোলিয়েন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল চুলের আর্দ্রতা ঠিক রেখে রুক্ষতা দূর করতে সাহায্য করে। বিউটি এক্সপার্টদের নতুন সংযোজন টি ট্রি অয়েল। এই তেল খুশকি দূর করতে বেশ কার্যকরী। ল্যাভেন্ডার অয়েল সুগন্ধি, সুন্দর ও বৈচিত্র্যময়। চুলের জন্য উপকারীও বটে। আর চুলের যত্নে চন্দনের তেলের গুণাগুণ কম-বেশি সবারই জানা। সেই আদিকাল থেকেই মা-খালাদের চুলের যত্নের অন্যতম সঙ্গী চন্দনের তেল। রইল পরামর্শ।

 

শ্যাম্পু করার কয়েক ঘণ্টা আগে চুলে তেল ম্যাসাজ করুন। আমন্ড, জোজোবা, আর্গান এবং অলিভ অয়েল ২ চা চামচ করে নিয়ে হালকা গরম করে সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করুন। চুলের পরিবর্তন নিজেই লক্ষ্য করবেন।

রোদ ও ধুলাবালি থেকে চুলকে বাঁচাতে দুটো ডিমের কুসুম এবং ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পুরো চুলে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।

চুল পড়া রোধে পিয়াজের রস ও নারিকেল তেল বা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন।

একটি পাকা কলা চটকে সঙ্গে ৭-৮ ফোঁটা আমন্ড অয়েল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন।

পাতলা চুলের জন্য কমলালেবুর রসের সঙ্গে চন্দনের তেল, ১ চা চামচ মধু ও সামান্য পানি মিশিয়ে চুলে লাগান। শ্যাম্পু করার পর এই মিশ্রণটি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। ১০ মিনিট বাদে আবারও চুল ধুয়ে নিন।

চুলের কোঁকড়ানো কমাতে অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল, মধু এবং একটি ডিমের কুসুম মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। চুলের কোঁকড়ানো ভাব কমে আসবে।

 

চুল যেমনই হোক, সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার তেল লাগাতে পারলে চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। না হলে খুশকি, চুল পড়ে যাওয়ার মতো বিপত্তি ঘটতে থাকবে। তাই তো চুলের যত্নে একগাদা কেমিক্যাল ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক তেল ঢালুন। সুন্দর চুলের জন্য তেলের দোসর আর কী আছে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর