শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

কর্মব্যস্ততায়ও সৌন্দর্য

রচি জামান

কর্মব্যস্ততায়ও সৌন্দর্য

ছবি : শওকত মোল্লা

অনেকের ধারণা, কর্মব্যস্ত থাকলে সৌন্দর্য সচেতন হওয়া একদম সম্ভব না। অভিনয় বা মডেলিং পেশায় জড়িতরা শুধু নিজেকে সুন্দর রাখার ব্যাপারে পারদর্শী হন। ফিটনেস, ত্বক, পোশাক কোনো দিকে সমান গুরুত্ব দেওয়া যায় না। অথচ সামান্তা আনাম সৃষ্টিকে দেখলে আপনার সে ধারণা পাল্টাতে বাধ্য। অফিস, বাসা, বাচ্চা সবকিছু সামলে সবার আদুরে সৃষ্টি থাকেন সর্বদা উত্ফুল্ল। তাকে দেখতেও যথেষ্ট ট্রেন্ডি মনে হবে। তার মেদহীন গড়ন, চুল-ত্বকে আধুনিকতার ছোঁয়া সর্বোপরি উপযুক্ত পোশাক বাছাইয়ে নিজেকে উপস্থাপন করার ভঙ্গি যে কারও তাক লাগিয়ে দেবে। সৃষ্টি দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডে কাজ করছেন কাস্টমার সার্ভিস ম্যানেজার হিসেবে। সপ্তাহজুড়ে অফিস কাজের কঠিন সিডিউলের ফাঁকে দম ফেলার সুযোগ খুবই কম। দিনভর কর্মব্যস্ত থাকার পরও অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত থাকেন তিনি। ফ্যাশন বলতে সৃষ্টি মনে করেন, ‘যেটা আমি বহন করতে পারব তাই-ই ফ্যাশন। বর্তমানে কি চলছে সেটা কখনো মুখ্য নয়। তবে ট্রেন্ডকেও একদম উড়িয়ে দিই না। কখনো তো সেটাও গ্রহণ করতে হয়। এক কথায় নিজে যেটায় স্বস্তি পাই, সেটাই আমার কাছে ফ্যাশন।’

পড়াশোনা শেষ হতে না হতেই চাকরিতে ঢুকে যান অনেক মেয়ে। দীর্ঘ সময় চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করা, নতুন বিয়ে করা তারপর বাচ্চা ধারণ—সবই যেন তাদের মুটিয়ে যাওয়ার জন্য ডজনখানি কারণের জোগানদাতা। অথচ সৃষ্টি এর সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটা নারী। সারা দিন চকলেট খেতে পছন্দ করেন। মেটারনিটির পর ২৫ কেজি ওজন বেড়ে গেলেও বর্তমানে আবার চলে এসেছেন আগের জায়গায়। আলাদাভাবে ব্যায়াম করার সুযোগ নেই। অফিস বাদে বাকি সময় দুই বছরের মেয়ে অ্যাসলিনকে দেন। এ অবস্থায় তার মেদহীন সৌন্দর্যের জন্য বিশেষ কোনো কারণ উল্লেখ করতে পারেননি। তবে তিনি জানিয়েছেন দিনের বেশির ভাগ সময় ছোটাছুটি করেন। অর্থাৎ এক জায়গায় বসে থাকেন না। তার এই কাঙ্ক্ষিত ওজনে থাকার জন্য চঞ্চল স্বভাবকে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিতে চান। তাকে দেখে বোঝা যায়, আলাদাভাবে চেষ্টা না চালিয়েও সারা দিন কাজের মধ্যে থাকলে স্লিম ও সুঠাম হওয়া সম্ভব। একটি মেয়ে যখন চাকরি, বাচ্চা, সংসার সামলাচ্ছেন তখন তার পরিবারের সাপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সৃষ্টি। পরিবার মেয়েটিকে সাহায্য না করলে কোনোভাবেই তার পক্ষে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই বিয়ের আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে, স্বামী হিসেবে যাকে পেতে যাচ্ছেন সে আপনার ক্যারিয়ারের ব্যাপারে কতটা সচেতন। সৃষ্টির দাবি, শ্বশুরবাড়ির পরিবার তাকে সাহায্য করছে বলেই হয়তো সব কাজ ঠিকঠাকমতো করতে পারছেন।

সৃষ্টি বললেন, আমি প্রফেশনালি স্বাস্থ্য সচেতন না আবার ফ্যাশন সচেতনও না। তবে আমার মনে হয় সুন্দর থাকাটা খুব জরুরি। আপন মানুষদের এতে ভালোলাগা তৈরি হয়। নিজের কাছেও ভালো লাগে। এ ছাড়াও তার মতে সব সময় প্রফুল্ল মনে থাকাটা আসল। তাতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। শ্বশুরবাড়িতেও মেয়েদের ভালো একটি ইমেজ থাকে।

অফিসে যাওয়ার জন্য ইউনিফর্মের সঙ্গে হালকা সাজই পছন্দ তার। চোখে কাজল দিতে খুব বেশি পছন্দ করেন। তাই অফিসে যাওয়ার সময় শুধু কাজল, হালকা লিপস্টিক তার সাজের অনুষঙ্গ। জাঁকজমক কোনো পার্টিতে গেলে সামান্য গহনা পরেন। তিনি বললেন, শ্বশুরবাড়ির পক্ষের অনুষ্ঠান হলে ভারি গহনাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কারণ, আমি ওখানকার ছেলের বউ। তাই সাজটা একটু ভিন্ন থাকে। তবে বন্ধুদের সঙ্গে বা আমার আত্মীয় বাড়িতে হলে সিম্পল থাকার চেষ্টা করি।

সৃষ্টি ২০১২ সালে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করেন। এরপর চাকরিতে ডুবে যাওয়ায় নিয়মিত বন্ধুদের খোঁজ নেওয়া বা যোগাযোগ করার সুযোগ হয় না। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, আত্মিক সম্পর্ক থাকলে সব সময় যোগাযোগ রাখার প্রয়োজন পড়ে না। অনেক দিন পর দেখা হলেও তারা আপনই থাকে। সৃষ্টির ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু পড়াশোনা চলা অবস্থাতেই। বিবিএ করার সময় গ্রেতে কাজ করেছেন। এরপর এবি ব্যাংকে কিছুদিন কাজ করার পর সিটি ব্যাংকে যোগ দেন। মন দিয়ে কাজ করতে খুব ভালোবাসেন।

সর্বশেষ খবর