শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

আভিজাত্যে বৈচিত্র্য

আভিজাত্যে বৈচিত্র্য

♦ মডেল : ফারহানা রেইন ♦ পোশাক : ভ্যালেন্টিনো ♦ ছবি : আহসান রাশেদ ♦ মেকওভার : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড

কথায় বলে, আগে রূপের বিচার পরে গুণের কদর। মানুষের রূপই সবার সামনে আগে প্রদর্শিত হয়। আর তা ফুটিয়ে তুলতে একটি পোশাকের রয়েছে সবচেয়ে বড় ভূমিকা। মার্জিত ও আভিজাত্যের পরিচয়ও বহন করে পরিহিত একটি পোশাক। এমনকি তার ব্যক্তিত্বের পরিচয় ঘটে রুচিশীল পোশাকে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

পার্টিওয়্যারে বা বিয়েতে ঘেরযুক্ত গাউন পরে কোনো তরুণীর ধীর পায়ে এগিয়ে আসা যে কারও মনোযোগের কারণ হতে পারে। এ বুঝি সাম্রাজ্যের রানী স্ববেশে উপস্থিত হচ্ছেন সভাস্থলে। সাজগোজের কথা না হয় বাদই দিলাম, ভিন্নধর্মী এই পোশাক চেহারায় এনে দেয় এমনই এক ঐতিহ্য। তাতে আভিজাত্যের অভাব থাকে না এতটুকু। এসব গাউন উপস্থিত হয় একেকভাবে। বলরুম গাউন, ম্যারমেইড গাউন, ইভনিং গাউন ও ওয়েডিং গাউন ছাড়াও কত রূপে তার উপস্থিতি। নজরকাড়া ডিজাইনের এসব গাউন যে কোনো রঙে হয় উচ্ছ্বসিত। ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলেও বর্তমানে ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। কাটিং প্যাটার্ন ফেব্রিকস ও লেন্থে সে ভিন্নতা চোখে পড়বে। কোনোটার ডিজাইন একেবারে সাদামাটা, কোনোটা বেশ গর্জিয়াস, কোনোটায় ব্যবহার করা হয়েছে কনট্রাস্ট। একেবারে সাদামাটা ধরনের কিছু গাউনের উপরের টপসে একটি বো লাগিয়ে গাউনকে স্টাইলিশ করা হয়েছে। বুকে ভারি কাজ, কোমরে বড় প্লেটের বা ছোট প্লেটের কুচি ও বেল্ট দেওয়া থাকে। কিছু গাউনে ডাবল পার্ট থাকে। উপরের পার্টে বেশি ডিজাইন হলে নিচেরটা হালকা হবে। আবার নিচের পার্টে বেশি ডিজাইন থাকলে উপরের পার্ট হালকা কাজের হবে। এভাবে অল্প কিছু সংযোজনে সাধারণ গাউনকে ট্রেন্ডি করা হয়েছে।

আজকাল গাউনকে ক্যাজুয়ালি পরার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের গাউনের লেন্থ যা-ই হোক না কেন, এর ডিজাইন আর প্যাটার্নে চাই ভিন্নতা। ক্যাজুয়ালি গাউনের কোনোটা এক পার্টের কাপড় দিয়ে তৈরি, কোনোটা আবার কোমরের কাছে ইলাস্টিক লাগানো, যাতে স্কার্টের মতো মনে হয়। আবার কোনোটার সঙ্গে কটিযুক্ত। কিছু রয়েছে বোতাম ছাড়া কটি, যেগুলো গাউনের ওপরে ক্র্যাপের মতো পরতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব গাউন স্লিভলেস হয়।

 

গাউনে নিচের অংশ ঢিলেঢালা হওয়ায় উপরের অংশটি বডি ফিটিং হতে হবে। তা না হলে একদম বেমানান লাগবে। আজকাল গাউনে কোমরের নিচ থেকে কুচিই বেশি চলছে। গলায় লেইস লাগাতে পারেন। বুকের নকশা করতে পারেন প্লিট ভাঁজ ডিজাইন। হাতা স্লিভলেস। আবার চওড়া লেইস দিয়ে করতে পারেন ঘটিহাতা। কোয়ার্টার হাতার মুখে লেইস এবং লং হাতার শেষে বোতামও দেওয়া যায়। গাউনের নিচের দিকটা একটু ফোলা থাকলে ভালো দেখায়। আবার সামনে থেকে পেছনের দিক একটু বেশি লম্বা, এমন ডিজাইনও ভালো লাগে। সে ক্ষেত্রে নিচে দিতে পারেন শার্টিন কাপড়ের চিকন পাইপিন। জর্জেট কাপড় হলে নিচটা ভাঁজ করে ডাবল লেয়ার করা যায়। নিজের পছন্দমতো গাউন বানিয়ে পরতে চাইলে জর্জেট, নেট ও টিস্যু কাপড় বেছে নিতে পারেন। নিচের দিকে ফুলে থাকার জন্য দিতে হবে ক্যানক্যান নামের এক ধরনের কাপড়। আর জর্জেট কাপড় দিয়ে বানাতে চাইলে ভিতরে দিতে পারেন সুতি কাপড়। এতে গাউনটা একটু ফোলা হবে।

 

গাউনে নতুনত্ব আনতে ব্যবহার করা হচ্ছে ওড়নার স্টাইলে কুচি দেওয়া কাপড়। কোনো কোনো গাউনে আবার শাড়ির আঁচল স্টাইলে এক পাশেও থাকছে বাড়তি ভাঁজ দেওয়া কাপড়। একটু জমকালো পার্টিতে পরার জন্য ব্রোকেট, মখমল বা ভেলভেটের গাউনে আছে চুমকি, লেস, পুতি বা জার্দসির কাজ। বিশেষ করে গাউনের নিচের অংশটি এমনভাবে পিকু করা থাকে তাতে  ছড়িয়ে থাকে। বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়েদের চাওয়া ফ্লোর টাচ বা ব্রাইডাল গাউন। ঈদেও তরুণীরা ঝুঁকে থাকেন এসব গাউনের প্রতি। বেশি ঝুলের কারণে পোশাকের নিচের কিছুটা অংশ মাটিতে ছড়িয়ে থাকে। এটি হাতাসহ বা স্লিভলেস দুটোই হতে পারে। বলরুম বা ইভনিং গাউন সাধারণত কোমর পর্যন্ত ফিটিং রেখে তার নিচ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় ঘের। বেলুন হাতা এবং নানা ধরনের মোটিফ দিয়ে ডিজাইন করা থাকে। গাউনের ফেব্রিকস হিসেবে সিনথেটিক, উলেন, লিলেন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, জর্জেট ও কটন গাউনের চাহিদা বেশ। ডিজাইন ফেব্রিকস ও রঙের কারণে দামের পার্থক্য রয়েছে। হাফ সিল্ক কিংবা কটন গাউন হবে সাদামাটা।

 

সাজগোজ

পোশাকটি ঢিলেঢালা হওয়ায় ভারি গড়নের মেয়েরা অনেক সময় এটি এড়িয়ে যান। তবে আজকাল ফিটিং ছাঁটের গাউনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন যে কোনো গড়নের তরুণী। গাউনের সঙ্গে হালকা বা ভারি সব মেকআপই মানাবে। ঠোঁট আর চোখের সাজ অবশ্যই আকর্ষণীয় হতে হবে। তবে তা অবশ্যই পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে হতে হবে। গর্জিয়াস গাউনে কানের দুল পাথরের হলে বেশি ভালো লাগবে। গলায় থাকতে পারে মানানসই হালকা বা ভারি নেকলেস। চুলের কাটের ওপর নির্ভর করে ছেড়ে অথবা বেঁধেও রাখতে পারেন। তবে এ ধরনের সাজে টাইট ফেন্সি খোঁপা দারুণ মানায়। হাতে ব্রেসলেটই এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত। গাউনের সঙ্গে উঁচু জুতা বেশি মানায়। বিশেষ করে পেনসিল হিল বেশি ভালো লাগবে।

 

দরদাম

নন ব্র্যান্ডের পশমি গাউনের দাম দুই হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। মখমল ও জর্জেটের গাউনের দাম পড়বে ৪ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকার মধ্যে। কটন গাউনের দাম দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার পর্যন্ত। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস বা বুটিকসগুলোতে নানা প্যাটার্নের গাউন মিলবে।  মকমল ও জর্জেটের দাম ১৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা, সিনথেটিক গাউন মিলবে পাঁচ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর