চলছে চৈত্র মাস। এ সময় অপেক্ষাকৃত একটু বেশি তেজ নিয়েই ঘটে রোদের আবির্ভাব। আপনার ত্বক যতই সুন্দর হোক এমন বৈরী হাওয়াতে হয়ে যাবে নিষ্প্রভ। রোদের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি ও ধুলাবালি তো আছেই ত্বকের সঙ্গে শত্রুতা করতে। নানা প্রয়োজনে যারা দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকেন তাদের ত্বকে ক্ষতির প্রভাবটি পড়ে বেশি। ত্বকের প্রতি উদাসীনতাও ত্বকের ক্ষতির কারণ হয়। তাই সব সমস্যাকে তুড়ি মেরে বৈশাখে ত্বকের ম্যাজিক দেখাতে নিন আগাম প্রস্তুতি। আপনার প্রসাধনীর তালিকায় রাখুন এসব জিনিস।

গরমের দিনে ত্বকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বেছে নিতে হবে গ্লিসারিনসমৃদ্ধ সাবান, ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ। তবে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ময়েশ্চারাইজিং ক্লিনজার। গরমের দিনে তৈলাক্ত ত্বকে তেল গ্রন্থিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে বেশি তেল বের হয়। সেসব ত্বকের জন্য মেডিকেটেড ফেসওয়াশ ব্যবহার উপযোগী হবে।

সানস্ক্রিন

গরমের দিনে ত্বকের কালচে ভাব দূর করা এবং ত্বক পুড়ে যাওয়া ঠেকাতে প্রয়োজন সানস্ক্রিন। বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে চোখের নিচের নমনীয় ত্বকের জন্য মেডিকেটেড সানস্ক্রিন এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তেলবিহীন সানস্ক্রিনই ব্যবহার করতে হবে। আমাদের আবহাওয়াতে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা এসপিএফ অন্তত ৩০ থাকা জরুরি।

ক্রিম

শুষ্ক ত্বকের খসখসে ভাব দূর করার জন্য এবং বলিরেখা পড়ার হাত থেকে রেহাই পেতে সব সময় ত্বক উপযোগী ক্রিম ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। কারও কারও ত্বকের জন্য বেবি লোশন বেশি উপযোগী ভূমিকা পালন করে।

এ তো গেল নিয়মিত ত্বকে ব্যবহৃত প্রসাধনী বৃত্তান্ত। এ ছাড়াও ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে দু-একদিন পরপর এক্সট্রা কিছু যত্ন নিতে হয়। এ ছাড়া হঠাৎ ত্বকে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিতে পারেন কার্যকরী কিছু ব্যবস্থা। জেনে নেওয়া যাক সে সম্পর্কে—

♦ হঠাৎ গরমে ত্বকে র‌্যাশ বা ঘামাচি হলে নিমপাতার রস লাগালে উপকার পাবেন। তেতো জাতীয় খাবার খেলেও উপকার পাবেন। দইয়ের সঙ্গে হলুদ বা নিমপাতা বাটা মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। মুখের ত্বকে ঘাম বেশি হলে ট্যালকম পাউডারের সঙ্গে এক চিমটি খাবার সোডা মিশিয়ে ব্যবহার করুন। দেখবেন ত্বক আর ঘামছে না।

♦ গরমে ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে যায়। আবার তৈলাক্ত ত্বকে সব সময় তেলতেলে ভাব থাকে। বারবার মুখে পানির ঝাপটা ত্বকে আর্দ্রতা ফিরে পায়। তবে এই সমস্যার দারুণ সমাধান হতে পারে শসা ও মসুর ডালের পেস্ট। মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।

♦ গোলাপের পাপড়ি ও দুটি খেজুর দুধে ভিজিয়ে রাখুন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। তারপর পেস্ট করে চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। হালকা শুকিয়ে এলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

♦ তরমুজের জুস আইস স্কুপ করে মুখে ঘষুন। এতে রোদে পোড়া ভাব দূর হবে সহজেই। ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল মোলায়েম।

♦ গরমে তৈলাক্ত ত্বক দ্রুত ঘেমে যায় ও ময়লা দ্রুত শুষে নেয়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি শসার রস পরিমাণ মতো, আধা চা-চামচ লেবুর রস, আধা চামচ গোলাপজলে মিশিয়ে লোশনের মতো মুখে লাগিয়ে আধা ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত চার-পাঁচ দিন করলে অভাবনীয় উপকার পাবেন।

♦ গরমে ব্রণের মাত্রা এড়াতে সপ্তাহে তিন-চারবার চিরতার পানি এবং দু-তিনটি কাঁচা হলুদ ও আখের গুড় খেতে পারেন। নিমপাতা, হলুদ, চিরতা ও মুলতানি মাটি একসঙ্গে মিলিয়ে পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার করলেও উপকার পাবেন।

♦ এ সময় ত্বকের ছোপ দাগ দূর করার জন্য টমেটোর রস, কাঁচা হলুদের রস, ব্রাউন আটা মিশিয়ে মুখ, গলা ও ঘাড়ে লাগান। আধা ঘণ্টা পর গোলাপজল দিয়ে মুছে ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়াও কাঁচা দুধ, লেবুর রস, পাকা পেঁপে, চন্দন, গোলাপের পাপড়ি একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে নিয়ে পুরো ত্বকে লাগান। পাঁচ মিনিট পর হালকা ম্যাসাজ করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পাবেন।