গরম বাড়ছে। গ্রীষ্ম মানেই গরম, বৈশাখ আর আম। তবেই হয়তো গরমে ঝরে ঘাম। আগামী তিন মাস গরমের এই প্রকোপ থাকবে আর সঙ্গে এসে জুড়বে সানট্যান, রোদে পোড়া ভাবসহ নানা উপসর্গ। তাই বলে তো ঘরে বসে থাকা চলে না। নিত্যদিনের কাজকর্ম, অফিস সব সামাল দিয়ে বিয়ে বাড়ি, টুগেদার পার্টি আরও কত কী! কিন্তু কাঠফাটা রোদ আর বাইরের অসহ্য গরমে রফাদফা অবস্থা। গ্রীষ্মের এই গরম থেকে বাঁচতে প্রয়োজন সতর্কতা। জানাচ্ছেন— আবদুল কাদের
কথায় আছে, বার মাসে তের পার্বণ। গ্রীষ্মের দাবদাহে হয়তো এমনই সংকেত দিচ্ছে। বাতাসে আর্দ্রতা না থাকায় গরম উঠেছে চরমে। আর গরমে সমস্যাও কম নয়। বাইরের অসহ্য তাপ, হাঁপিয়ে উঠি আমরা। বাইরে বেরোলেই মনে হয় গলা ভেজাই কোল্ড ড্রিংকস কিংবা আইসক্রিম। আর রোদ থেকে ফিরেই গোসলে মেতে উঠি। আসলে গরমের আরামের সমাধান এসব নয়। ঘরে-বাইরে খাওয়া-দাওয়া, পোশাক পরিচ্ছেদ, শরীর ও ত্বকের যত্ন সব মিলিয়ে প্রয়োজন সময়োপযোগী সতর্কতা। সঠিক নিয়ম মেনে চললেই কেবল গরমকে উপভোগ করা যায়। রোজকার রুটিন আর লাইফস্টাইল মেইনটেন করতে পারলেই গরমেও থাকা যাবে সুস্থ ও সুন্দর।
গরমে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ডিহাইড্রেশনের সমস্যা। সারা দিন রোদে পুড়ে কাজ করে শরীর হয়ে যায় ফ্লুইড ব্যালেন্সহীন। বাইরে যত রোদ পড়ুক না কেন কাজ তো থেমে নেই! গরমে ত্বকে রোদ পড়লে স্যানটানের সমস্যা দেখা দেয়। ত্বকে ছোপ ছোপ কালো দাগ পড়ে। রোদের দাপটে ত্বক হয়ে যায় নিষ্প্রাণ। চেহারায় রোদেপোড়া ভাব চলে আসে। এ ছাড়াও রোদের কারণে আমাদের ত্বকে নানা ধরনের চর্ম রোগ দেখা দিতে পারে। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি স্কিন ক্যান্সারের জন্যও দায়ী। তাই রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজন ক্লেনজিং, টোনিং, ময়াশ্চারাইজিংয়ের মতো ট্রিটমেন্ট। বাইরে বেরোনোর আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাবেন। বাইরে বেরোনোর অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন লাগান। আপনার ত্বকের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী উচ্চ এসপিএফ-যুক্ত সানস্ক্রিন লাগান। এটি সূর্যের ইউভিএ ও ইউভিবি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। মুখের সঙ্গে গলা, ঘাড় এবং অন্যান্য অংশে সানস্ক্রিন লাগান।
সপ্তাহে দুই দিন ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন। গ্রাউন্ড আমন্ড আর দই একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটিও মুখে লাগাবেন। ১৫ মিনিট পরে হালকা করে ঘষে নিয়ে ধুয়ে ফেলুন। স্যানটানের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে টক দই, চালের গুঁড়া ও কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। এ ছাড়া রোদের প্রতাপ সহ্য করে দিন শেষে ঘরে ফিরে প্রতিদিন ঠাণ্ডা দুধে তুলা ভিজিয়ে সানবার্নের ওপর লাগান। ত্বকের কালোভাব দূর হবে এবং ত্বক নরম হবে। এ ছাড়া রোদে বেশিক্ষণ থাকার ফলে চুলেও সানবার্নের সমস্যা দেখা দেয়। তাই বাড়িতে রোজ অয়েল ম্যাসাজ, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে বেসনের সঙ্গে টক দই ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
গরমের এই দাবদাহে শরীর ও ত্বক শীতল রাখা খুব প্রয়োজন। তাছাড়া স্যানটানের সমস্যা তো আছেই! সঙ্গে ধুলাময়লা লেগে হয়ে পড়ে বেশামাল অবস্থা। তাই গোসলের আগে হাত ও পায়ে মোটা দানার চিনি, লেবুর রস ও দুই চামচ সানফ্লাওয়ার অয়েল মিশিয়ে ঘষুন। এ ছাড়াও গোসলের সময় বডি শ্যাম্পু, স্ক্রাবার কিংবা শাওয়ার জেল ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া পুষ্টিকর খাবার, বেশি বেশি পানি পান, ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম ত্বক ভালো রাখার জন্য খুবই জরুরি।
গরমে পোশাকের রঙের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিন কাপড়ের ওপর। বেশিরভাগ সময় বাইরে কাটালে আরামদায়ক ফেব্রিকের কথা মাথায় রাখা উচিত। সেক্ষেত্রে সুতির চেয়ে আরামদায়ক আর কিছুই হতে পারে না। সুতি বা তাঁতে তৈরি কাপড়ের পোশাক হতে পারে আপনার গরমের স্বস্তিদায়ক সঙ্গী। মেয়েদের পোশাকের রং হবে হালকা। যেমন- সাদা, অফ হোয়াইট, সবুজ, বেগুনি, হালকা নীল ইত্যাদি। রংটাও অনেক সময় দেহের গরম কমায়। এ সময় স্লিভলেস পোশাক পরুন। সুন্দর একটা পোশাক পরেছেন, সঙ্গে ফ্রেশ মেকআপ। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মনটা খুঁতখুঁত করে উঠল। কী যেন একটা মিসিং, দরকার শুধু একটা সানগ্লাসের বা আপনার গ্ল্যামার কোশটা বাড়িয়ে দেবে অনেকটাই। তাছাড়া চোখে রঙিন চশমা থাকলে নাকি পুরো দুনিয়াটাই রঙিন লাগে। রঙিন দুনিয়া তো খালি চোখে দেখা যায় না। সেজন্য দরকার সুস্থ দুটি চোখ। কিন্তু গরমের সূর্যের তাপে চোখেরও তো বেহাল অবস্থা। এমনকি মেঘলা দিনেও সূর্যের ইউভি রশ্মি চোখের পক্ষে ক্ষতিকর। এমন সানগ্লাস কিনুন বা অন্তত ৯৯% থেকে ১০০% সূর্যের ইউভিএ এবং ইউভিবি রশ্মি থেকে আপনার চোখকে বাঁচাতে পারে। উইভি ৪০০--এর লেবেলযুক্ত সানগ্লাস চোখকে সুরক্ষিত রাখে সুতরাং কেনার সময় এটা দেখে নেওয়া খুবই জরুরি।
এ সময় সাধারণত হালকা রঙের ছাতা কেনা ভালো। নীল, বেগুনি, গোলাপি বা হলুদ রঙের ছাতা কিনতে পারেন। একরঙা ছাতার ওপর পড়া উজ্জ্বল রঙের রোদের ছটা আপনার চেহারাকে আরও উজ্জ্বল দেখাবে। যারা ফ্যাশনেবল লুককে বেশি প্রাধান্য দেন তারা পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে ছাতা কিনতে পারেন।
সামার কেয়ার :
০. বাইরে যত রোদ পড়ুক না কেন কাজ তো থেমে নেই! তবে, এ সময় সরাসরি রোদের তাপ না নেওয়াই ভালো।
০. গরমে দুপুর ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কড়া রোদ এড়িয়ে চলুন। একান্ত প্রয়োজনে বের হওয়ার ২০ মিনিট আগে এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
০. রোদে বেশিক্ষণ বাইরে বেরোবেন না। প্রয়োজনে বেরোলে অবশ্যই ছাতা ও সানগ্লাস ব্যবহার করবেন।
০. প্রচণ্ড দাবদাহে চোখকে বাঁচাতে ‘আল্ট্রা ভায়োলেট রে-প্রুভ’ সানগ্লাস পরতে পারেন। নরমাল চশমার ক্ষেত্রে এন্টি রিফ্লেকশন গ্লাস ব্যবহার করুন।
০. রোদে বাইরে বেরোলে ক্যাপ, হ্যাট, স্কার্ফ ব্যবহার করুন। এ ছাড়া ছাতা ও সানগ্লাস তো এখন সব সময়ের সঙ্গী।
০. যেখানেই থাকুন না কেন সময় বুঝে সারা দিনই মুখে পানির ঝাঁপটা দিন। ত্বক পরিষ্কার থাকে।
০. ব্যাগে ওয়েট টিসু রাখুন। একটু পর পর মুখ ও ঘাড় ভালো করে মুছে নিন। ধুলাময়লা পরিষ্কার হবে।
তবে কেন আর রোদের তাপ দেখে ভয়। ক্লাস, অফিস, বেড়ানো, পার্টি সবই হবে। নিয়ম মেনে চলুন, প্রচণ্ড তাপের এই গরমেও ভালো থাকবেন আপনিও।