শুক্রবার, ১৯ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

গরমে স্বস্তি

গরমে স্বস্তি

► মডেল : জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া ► ছবি : নেওয়াজ রাহুল

পোশাক ভাবনা সব ঋতুতেই ভাবায় ফ্যাশনসচেতনদের। তবে গরমের দিনে সে ভাবনা থাকে একটু জোরতর। কোন পোশাকে আপনি স্টাইলিশ, কোনটি স্বস্তিদায়ক, কেমন সাজ মানাবে অথবা কী রং হবে— সবই থাকে জিজ্ঞাসার বিষয়। এসব জানতে...

পোশাক ভাবনায় গরমের প্রভাব যথাযথই। ক্রেতারা যেমন সচেতনতা অবলম্বন করেন তেমনি বিক্রেতা বা পোশাক প্রস্তুতকারকদেরও মাথায় থাকে পোশাক হতে হবে আবহাওয়া উপযোগী। সাজগোজ আর পোশাকের গরমের ভয়ে তো আর নিত্যদিনের কাজ, পার্টি, অনুষ্ঠান, বেড়াতে যাওয়া, গেট টুগেদার থেমে থাকবে না। তাই সবখানেই প্রয়োজন স্বস্তিদায়ক পোশাক। লিখেছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

সময় বলছে এখন গ্রীষ্মকাল। শুরু হয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচুসহ দেশীয় সব ফলের মৌসুম। বছরের ঠিক এ সময়টি যেন তীব্র গরমের জন্য বরাদ্দ। কাঠফাটা রোদ্দুরে তাপিত হাওয়া অল্পতেই আপনার স্বস্তিকে উড়িয়ে নিয়ে যায় সেই কোথায়। ঘরে থাকলে তবু একটু নিস্তার, কিন্তু কাজের প্রয়োজনে আপনাকে বাইরে বের হতেই হয় আর সমস্যাটাও বাধে তখন। বিশেষ করে এমন বিরূপ আচরণ করা প্রকৃতি আপনার ওপর আরও বেশি রুষ্ঠ হয় পোশাক নির্বাচনে ভুল হলে। হয়তো খুব গরমের মধ্যে আপনি খুব মোটা বা গাঢ় কটকটে রঙের পোশাক পরে বের হলেন, তাতে গরম ধরবে অনেক বেশি। আবার খুব বেশি টাইট ফিট পোশাকও আপনাকে দম ফাটানো গরমের কষ্টে ফেলে দিতে পারে। ঢিলেঢালা হলেও কাপড়ের উপাদান বা পুরুত্ব একই কষ্টের কারণ হবে। এ সময় প্রকৃতি মাঝেমধ্যে বৃষ্টির ছোঁয়া দিচ্ছে। তারপরও কাটছে না গরমের প্রভাব। আর তাই এ সময় পোশাকটা কেমন হবে? সাজটা কেমন হলে আরাম পাবেন? কোথায় কখন কী ধরনের পোশাক পরবেন? প্রশ্নগুলো বড় হয়ে দাঁড়ায় প্রতিদিন ঘর থেকে বের হওয়ার আগে।

দেশীয় কিংবা পাশ্চাত্য-পোশাকের কাটছাঁট যে দেশেরই হোক না কেন, কাপড় হতে হবে পাতলা। ফ্যাশনের সঙ্গে যেন আরামটাও পুরোপুরি পাওয়া যায়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। শিফন, সুতি, ক্রেপ, জর্জেট, সিল্ক, লিনেন, ভালো মানের নেটের তৈরি পোশাকগুলোতে আরাম পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ। সুতির কাপড় সব থেকে আরামের হলেও সেটি অনেক সময় সব জায়গার জন্য মানানসই নয়। শিফনের কাপড় এ ক্ষেত্রে হতে পরে আদর্শ পরিবর্তক। গরমে হালকা রং, যেমন আকাশি, হালকা সবুজ, লেমন, অফ-হোয়াইট, সাদা ইত্যাদি রঙের কাপড় বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এসব রঙের তাপ শোষণ করার ক্ষমতা অনেক কম। তাই গাঢ় রঙের কাপড়ের মতো সহজে তেঁতে ওঠে না। সর্বোপরি গরমের পোশাক হবে হালকা রঙের উপযুক্ত মাপে তৈরি ঢিলেঢালা। বাইরে বের হওয়ার সময় সঙ্গে সুতির রুমাল থাকলে প্রয়োজনে ঘাড়, গলা ও মুখের ঘাম মুছে গরমের যন্ত্রণা অনেকটা কমানো যায়। তবে গরমকালে সাদা রঙের পোশাকের জয়জয়কার আগাগোড়ায়। আবার পোশাকে খুব বেশি টাইট ফিটিংস হলেও কিন্তু সেটা খুব একটা স্বস্তিদায়ক হবে না। একটু ঢিলেঢালা হলেই বরং ভালো হয়। যারা হাইনেক পরেন তারা এ গরমে একটু কলার ছাড়া বড় গলা পরতে পারেন, আরাম পাবেন। আর হাতাও অবশ্যই ছোট দিতে হবে। গরমে ফুল স্লিভ কিংবা থ্রি-কোয়ার্টার খুব বেশি আরামদায়ক নয়। গরমে খুব উজ্জ্বল আর গাঢ় রং মোটেও শোভন নয়। হালকা রঙের পোশাক পরলে আপনাকে যেমন দেখতে স্নিগ্ধ লাগবে তেমনি আপনি স্বস্তিতে চলাফেরা ও প্রয়োজনীয় কাজটাও করতে পারবেন।

 

সুতি কাপড়ের সঙ্গে লিনেন, ধুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, চিকেন ও তাঁতের কাপড় গরমের জন্য বেশ উপযোগী। উৎসবে পরতে পারেন কৃত্রিম মসলিন বা পাতলা চোষা কাতান। দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বেশির ভাগই সুতি কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করে থাকে। কাজেই পছন্দসই পোশাক কিনে নিতে পারেন যে কোনো ফ্যাশন হাউস থেকে। আবার চাইলে আপনি নিজেই হতে পারেন আপনার পোশাকের ডিজাইনার। বাজারে এরই মধ্যে এসে গেছে গরমের উপযোগী রং ও ডিজাইনের থান কাপড়।

এই আবহাওয়ায় সুতির পাশাপাশি জর্জেটের শাড়ি ভালো। ভেজার আশঙ্কা থাকলে জর্জেট পরেই বের হন, ভিজলে শুকিয়ে যাবে দ্রুত। আবার কুঁচকে যাবে না। ক্রেপ কাপড়ের তৈরি কামিজ পরতে পারেন। ঠাণ্ডা অনুভূতি দেবে। এ ছাড়া পাতলা সার্টিনের শাড়িও গরমের জন্য আরামদায়ক। অ্যাপ্লিকের কাজ বসাতে চাইলে নেটের ওপর করতে পারেন, তাতে ভালো লাগবে। শিফন, ক্রেপ, সিল্ক, লিনেন সব ধরনের কাপড়ের ওপরই ফুল, জ্যামিতিক ছাপা নকশাসহ অনেক ধরনের নকশা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। কাটটা একটু ভিন্ন ধরনের করতে পারেন। লম্বা ম্যাক্সি ধাঁচের পোশাক, জাম্পস্যুট, লম্বা শার্টগুলোও বৈচিত্র্য আনবে। কুর্তা পরলে সেখানে বেল্ট রাখতে পারেন। নকশা ও রং হালকা হলেও কাটের কারণে দেখতে ভালো লাগবে। খুব বেশি চলাফেরা করতে হলে সুতির তৈরি পোশাক না পরাই ভালো। তাড়াতাড়ি কুঁচকে যাবে। এ ক্ষেত্রে লিনেন কাপড় বেছে নিতে পারেন। দিনের বেলায় হালকা হলুদ, হালকা গোলাপি, বিভিন্ন শেডের প্যাস্টেল রংগুলো দেখতে ভালো লাগবে। এমন দিনে স্বস্তি ধরে রাখতে সাজগোজ ও অনুষঙ্গের দিকেও নজর রাখতে হবে। ব্যবহূত রোদ চশমাটি যেন আপনার চোখকে সুরক্ষা দিতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর তাই রোদচশমা কেনার আগে অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ড দেখে নিতে হবে। আর সাজগোজ হালকা হলেই ভালো। তবে কোথায় যাচ্ছেন তার ওপর ভিত্তি করে মেকআপ নিন। ইনডোর প্রোগ্রাম হলে গরমের ভয় থাকবে না তবে আউটডোর হলে অবশ্যই হালকা সাজই উপযুক্ত।

 

স্বস্তিতে থাকার টিপস...

সাজগোজ ঠিক রেখে সারা দিন স্বস্তির সঙ্গে চলাফেরা করাটাও একটি আর্ট। আর যেকোনো আর্টই যথেষ্ট ভাবনা চিন্তার ফল। তাই গরমের এ সময়টাতে আপনাকে স্বস্তি ও আরামে চলতে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

 

♦ স্বস্তির জন্য যে পোশাকটিই পরুন না কেন তা যেন আপনার রেগুলার স্টাইল ধরে রাখে, নইলে আপনার গন্তব্যে যাওয়ার পর সবার মাঝে নিজেকে ঠিক সেভাবে মানানসই লাগবে না। তখন পুরো সময়টি আপনার জন্য অস্বস্তির হয়ে উঠবে।

♦ গরমের দিনে পোশাকের পাশাপাশি আপনাকে স্বস্তি দেবে মোলায়েম গন্ধের পারফিউম। তাই এ সময় ব্যবহার করার জন্য আপনার নাকে যে পারফিউমটি স্বস্তি দেবে সেটিই বিউটি বক্সের সংগ্রহে রাখতে পারেন নিশ্চিন্তে।

♦ মেয়েদের সাজের সবচেয়ে ব্যবহূত দুটি অনুষঙ্গ, লিপস্টিক আর কাজল। এ দুটি অনুষঙ্গই হতে হবে গরমে নির্ভাবনায় ব্যবহার উপযোগী। যেন ব্যবহারের পর মুখ ঘেমে গেলে তা চারদিকে লেপ্টে না যায়। দিনভর থাকবে শুষ্ক।

♦ শুধু পোশাকই নয়, গরমে স্বস্তি দেবে আপনার খাদ্যাভাস। এমন দিনে ফুরফুরে থাকতে বেশি পরিমাণ তরল খাবার, সালাদ ও ফলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারেন। এতে নিজের ভিতর থেকেই একটি ভালো লাগা তৈরি হবে।

♦ রোদে কোথাও বের হতে উপযোগী একটি ছাতাও রাখুন আপনার সঙ্গে। ছাতা একদিকে যেমন রোদে পোড়া থেকে বাঁচায়, অপরদিকে ঘেমে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। তা ছাড়া সুন্দর ডিজাইনের একটি ছাতা আপনার ব্যক্তিত্বকেও ফুটিয়ে তোলে।

সর্বশেষ খবর