শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

কিশোরীর প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায়...

কিশোরীর প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষায়...

সাধারণত ১০ থেকে ১৬ বছর বয়সে মেয়েদের মাসিক শুরু হয় এবং তা ৪৬-৫১ বছর বয়স পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় ২৮ দিন পরপর মাসিক শুরু হয় এবং ৩ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। এর মাধ্যমে একটি মেয়ে সন্তান ধারণের সক্ষমতা অর্জন করে। এ বিষয়ে কিশোরীদের জ্ঞান থাকলে শারীরিক এ পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে ভয়-ভীতি ছাড়াই মানিয়ে নিতে পারবে। এ সময় স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে। কেননা, খালি পেটে থাকলে মেয়েটি দুর্বল হয়ে পড়বে এবং সে সময় রক্তপাতটা খুব বেশি মনে হবে।

 

একটি মেয়ে যখন শৈশব থেকে কৈশোরে উত্তীর্ণ হয় তখন হরমোনের পরিবর্তনে তার শরীরে নানাবিধ পরিবর্তন ঘটে। Menstruation বা মাসিক এর মধ্যে অন্যতম। বয়োসন্ধির পর থেকে নারীদের জরায়ুর দুপাশে অবস্থিত দুটি ডিম্বাশয় থেকে প্রতি মাসে ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়। একে Ovulation বলা হয়। এই ডিম্বাণু Fallopian Tube পার হয়ে জরায়ুতে আসে। জরায়ুর ভিতরের আবরণের নাম  Endometrium। যদি ডিম্বাণুর সঙ্গে পুরুষের শুক্রাণুর মিলনে ভ্রূণ তৈরি না হয়, তবে Endometrium এর ওই মাসের জন্য এর আর কাজ থাকে না। তখন তা অকেজো হয়ে জরায়ু থেকে খসে পড়ে, এ কারণে রক্তপাত হয়। একেই Menstruation বা মাসিক বলে।

 

মাসিকের রক্ত প্রথম দিকে বাদামি রঙের, পরবর্তীতে লাল এবং শেষ দিকে গিয়ে আবার বাদামি বর্ণ ধারণ করে। গড়ে ৫ থেকে ৮০ মিলি লিটার পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার পর থেকে রক্ত বিরতি পর্যন্ত একজন মহিলা গড়ে প্রায় ২১০০ দিন বা ৬ বছর Menstrual Phase-এর মধ্য দিয়ে পার করেন। কিন্তু দুঃজনক হলেও সত্য মেয়েদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা ও সন্তান ধারণের ক্ষমতা লাভের লক্ষণ এই মাসিক বিষয়ে সমাজে এমনকি পরিবারেও কোনো খোলামেলা আলোচনা হয় না। যদি পরিবার কিংবা সমাজ থেকে আগে থেকেই কিশোরীটি বিষয়টি অবগত থাকে তবে তার জন্য শরীরের এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারে। অন্যথায় তারা অজ্ঞই থেকে যায় তাদের শরীর বৃত্তীয় এসব প্রক্রিয়া ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে।

 

মাসিক সাধারণত চক্রাকারে চলে। বয়োসন্ধির পর চক্রটি নিয়মিত হতে দুই-তিন বছর লেগে যায়। মাসিকের আগে এবং চলাকালীন সময়ে শতকরা ৮০ ভাগ মেয়েই কোনো না কোনো শারীরিক অসুবিধা বোধ করে। যেমন—অবসন্নতা, দুর্বলতা, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, মনোযোগের অভাব, অল্পতে রেগে যাওয়া, তলপেটে ও স্তন ভারী বোধ করা, সাদা স্রাব যাওয়া, ব্লাড সুগার এবং ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাওয়া, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, শরীরে বিপাক ক্রিয়া বেড়ে যাওয়া, শরীরে হালকা পানি ও লবণ জমে ওজন দুই কেজি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, বমি বমি ভাব হতে পারে। এর সবই স্বাভাবিক। মাসিকের আগে হয়তো কোষ্টকাঠিন্য ছিল। মাসিকের সময় বারবার  টয়লেটে যেতে হচ্ছে এমনও হতে পারে।

 

মাসিকের রক্ত পা গড়িয়ে যেন নিচে না পড়ে বা কাপড়ে না লেগে যায় তার ব্যবস্থা হিসেবে স্যানেটারি ন্যাপকিন, তুলা, কাপড়ের তৈরি ন্যাপকিন ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি স্যানেটারি ন্যাপকিন সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাড়িতে বসেই পরিষ্কার পুরনো কাপড় বা শাড়ি কেটে ন্যাপকিন বানিয়ে নেওয়া যায়। যা ব্যবহারের পর স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে, সূর্যের আলোতে শুকিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। সূর্যের আলো প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক। শুকানো ন্যাপকিনগুলো অবশ্যই পরিষ্কার, শুকনো জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। একান্ত ব্যক্তিগত ব্যবহারের এসব ন্যাপকিন কখনোই অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়। প্রতি ৩-৪ ঘণ্টা পর পর এ ধরনের ন্যাপকিন বদলে নতুন ন্যাপকিন নেওয়া উচিত। এতে ইনফেকশনের আশঙ্কা কম থাকে।

 

কিশোরীদের জন্য উপদেশ

স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি কিংবা বাইরে চলতি পথে হঠাৎ মাসিক শুরু হলে প্যাড বা ন্যাপকিন সংগ্রহ করে সোজা বাথরুমে গিয়ে পরে নিন। এ অবস্থা এড়াতে গত মাসের যেদিন মাসিক শুরু হয়েছিল এ মাসের ওই সময়ের কাছাকাছি সময় থেকেই অতিরিক্ত একটি স্যানেটারি প্যাড ব্যাগে রেখে দেওয়া ভালো। আর এ সময়ে গাঢ় রঙের কাপড় পরিধান করুন। এ সময়ে স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করা উচিত। কেননা খালি পেটে থাকলে দুর্বলতা চেপে বসবে এবং তখন রক্তপাতটা বেশি মনে হবে। রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ভালো। টক ফল ও সবুজ শাকসবজি খাবে। চা, কফি থেকে বিরত থাকা ভালো। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। এ সময় খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করুন। এ সময়ে পেটে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে, জরায়ুর ভিতরের দিকের আবরণটি খসে বেরিয়ে আসার সময় জরায়ুতে সংকোচন ও প্রসারণ হয়। এ কারণে হালকা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। হালকা ব্যায়াম, কুসুম গরম পানিতে দিনে অন্তত একবার গোসল, গরম পানির সেক নেওয়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা ব্যথা নাশক ওষুধ খেলে এ ধরনের ব্যথা চলে যায়।

সর্বশেষ খবর