শুক্রবার, ২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রিন্টেড ক্যানভাস...

প্রিন্টেড ক্যানভাস...

♦ মডেল : সাদমান সামীর ও জুয়েল ♦ পোশাক : ইজি ♦ ছবি : শওকত মোল্লা

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে গেছে ঈদের ফ্যাশনও। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এখন বেশ ফ্যাশন-সচেতন। শীত কিংবা গ্রীষ্ম; ঋতু-বৈচিত্র্যে আবহাওয়া যেমন তেমনি ফ্যাশনেবল অনুষঙ্গতে তরুণ-তরুণীদের মাঝে চলে নানা এক্সপেরিমেন্ট। আর ঈদ কিংবা পূজা-পার্বণ এলে তো কথাই নেই! উৎসবের দিন কী পরবেন, তা হয়তো অনেকেই ঠিক করে ফেলেছেন; সেই মোতাবেক চলছে কেনাকাটা। আবার অনেকেই শপিংমল ঘুরে ঘুরে বাছাই করছেন পছন্দের অনুষঙ্গ। তেমনি একটি অনুষঙ্গ শার্ট। ফ্যাশনে এর বিকল্প অন্য পোশাক কখনোই দখল করতে পারেনি। এক সময় একরঙা শার্টের জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। আবাল-বৃদ্ধ সবাই রাজপথ দাবড়ে বেড়াত একরঙা কাপড়ের শার্টে। সেই সময়টা বদলেছে। এখন একরঙের পরিবর্তে প্রিন্টেড, চেক, স্ট্রাইপের শার্টের কদর কিছুটা বেশি। তবে আজ বলব প্রিন্টেড ট্রেন্ডের কথা। সেই ষাট-সত্তর দশকের সিনেমাতে নায়করা যেমনটি পরে পর্দা কাঁপিয়েছেন। সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত শার্টের একচেটিয়া আধিপত্য সবখানেই আছে। তখনকার শার্টগুলো ছিল একটু ঢোলা আর কলারগুলোও ছিল বেশ চওড়া। সেই আমলকেই আমলে নিয়ে শার্টের বিভিন্ন ডিজাইনে মনোনিবেশ করেন ডিজাইনাররা। প্রিন্টেড ক্যানভাসের বিস্তারিত জানাচ্ছেন— এ কে রাসেল

 

শার্টের ধরন আর রকমারি সব ফ্যাশন হাউস নিয়মিত বাজারে নিয়ে আসছে তাদের সর্বোচ্চটুকু। চেক শার্ট লম্বা সময় ধরে ফ্যাশনে বেশ ভালোভাবে ছিল এবং আছে। সেই সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে প্রিন্টেড শার্টগুলো। এসব শার্টে বৈচিত্র্যময় প্রিন্টের ব্যবহার লুকে আনে ভিন্নতা।

 

শহর ও শহরতলির বিভিন্ন দোকানে ঢুঁ মেরে জানা গেল, এখন নতুন প্রজন্মের অনেকেরই পছন্দ প্রিন্টেড শার্ট। উৎসব বলেই উজ্জ্বল রঙের প্রতি ঝোঁকই বেশি। কলেজপড়ুয়া ছেলেরা ন্যারো জিন্স কিংবা বাহারি রঙের গ্যাবার্ডিনের সঙ্গে প্রিন্টেড শার্ট পরে এক্সপেরিমেন্ট করছেন। পুরনো দিনের আদতে লম্বা কলারের দিকেই ঝুঁকছে সবাই। এ প্রসঙ্গে তারুণ্যের পছন্দ ইজি ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনার তৌহিদ চৌধুরী বলেন, ‘এবার প্রিন্টেড শার্টই বেশি বিক্রি হচ্ছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও চলতে হয়। তাই আমরাও চাহিদা বুঝে প্রিন্টেড শার্ট বেশি রাখছি। আসলে গত কয়েক বছরে পোশাকে প্রচুর পরিবর্তন এসেছে। রুচি বদলাচ্ছে।’

 

বর্তমান ফ্যাশন ট্রেন্ডে স্ট্রাইপ, চেক এবং একরঙা শার্টের পাশাপাশি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে রঙবেরঙের জমকালো প্রিন্টের শার্ট। আধুনিক রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষ আবার ঝুঁকে প্রিন্টের শার্টের দিকে। তারুণ্যের পছন্দের দিকটি মাথায় রেখেই ফ্যাশন ডিজাইনাররা শার্টে এনেছেন নানা ফিউশন। নকশা এবং ডিজাইনে এনেছেন নানা পরিবর্তন। এসব মার্টে বৈচিত্র্যময় প্রিন্টের ব্যবহার আপনার লুকে আনবে ভিন্নতা। কিছু কিছু শার্ট ডিজাইন করা হচ্ছে দুধরনের প্রিন্ট ব্যবহার করে। যেমন বডির কাপড়ে যে প্রিন্ট থাকছে। হাতা দুটোয় থাকছে আলাদা প্রিন্টের কাপড়। বডির কাপড়ে যদি ফ্লোরাল বা জ্যামিতিক নকশা থাকছে, তাহলে হাতায় থাকছে ছোট ছোট বল। একইভাবে হাতা ও বডিতে কালার কন্ট্রাস করেও নতুন নতুন শার্টের ডিজাইন করা হচ্ছে।

 

ফ্যাশন হাউস ইজির কর্ণধার তৌহিদ চৌধুরী বলেন, ‘এক সময় হালকা ডিজাইনের এবং সিম্পল শার্ট গায়ে জড়ালেও তরুণদের রুচিতে এসেছে পরিবর্তন। তাই তাদের কথা মাথায় রেখে ঈদ সামনে রেখে আমরা কটন ফেব্রিক্সের ওপর অনেক ধরনের প্রিন্টের শার্ট ক্রেতাদের জন্য এনেছি। বর্তমানে প্রিন্টের শার্টগুলো বিভিন্ন পার্টিতে পরে যেতে পারবেন এবং তার ওপর ব্লেজার পরতে পারবেন। শার্টগুলোতে নানা ধরনের জ্যামিতিক নকশার প্রিন্ট করা হয়েছে। সর্বোপরি সবার কথা মাথায় রেখে এবারের কালেকশন শুধু রঙিন বললে ভুল হবে। লাল নীল হলুদ সবুজ বাদামি বিভিন্ন রঙের পাশাপাশি বাজারে পাবেন একরঙার ওপর বিভিন্ন প্রিন্ট।

প্রিন্টের কাপড়ের মধ্যে সময় উপযোগী লুকের জন্য বাজারে পাবেন অনেক মোটিফের শার্ট। সেখানে স্থান পাবে বড় প্রিন্টের শার্ট। অর্থাৎ প্রিন্টগুলো একটু রঙচঙা আর ডিজাইন বেশি। সেটা হতে পারে বড় পাতা, ফুল-পাখিসহ বিভিন্ন ডিজাইনের। তবে শার্ট দেখলেই বোঝা যাবে, কোনটা ক্যাজুয়াল আর কোনটা ফরমাল। ক্যাজুয়াল শার্টগুলো শুধু ছেলেদের জন্য নয়, হালের ফ্যাশন সচেতন মেয়েরাও ক্যাজুয়াল শার্টগুলো গায়ে জড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আর এই ক্যাজুয়াল শার্টগুলো বেশির ভাগই ফুলহাতা। কেউ চাইলে পচ্ছন্দমতো হাফ শার্টও খুঁজে পাবেন। আর এই ক্যাজুয়াল শার্টের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ফোল্ডিং হাতা। কেউ চাইলে হাতা ফোল্ড করে পরতে পারবেন। আর হাতা ফোল্ড করাও হাল আমলের ট্রেন্ড। হাতা ফোল্ড করে বাহুর সঙ্গে বোতাম দিয়ে আটকে রাখলেও বেশ মানিয়ে যাবে। ফরমাল প্রিন্টেড শার্টের ডিজাইনে পাবেন বৈচিত্র্য। সেখানে হালকা রঙের শার্টের ওপর পাবেন ডট ডিজাইনের বিভিন্ন মোটিফ। বিভিন্ন রঙের সুতির শার্টের ওপর পাবেন বিভিন্ন ডট প্রিন্টের শার্ট। এ ছাড়া ডট প্রিন্টের পাশাপাশি পাবেন ছোট বল প্রিন্ট। ফরমাল লুকের শার্টগুলো ইচ্ছা করলে ক্যাজুয়াল হিসেবেও চালিয়ে নেওয়া যায়।

 

কালার প্যাটার্ন ও ম্যাটেরিয়ালের বৈচিত্র্যের কারণে শার্টে ফ্যাশনে যোগ হচ্ছে বৈচিত্র্য। দেশি-বিদেশি উভয় ধরনের কাপড়ের শার্ট রয়েছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে। রঙের বৈচিত্র্য, একসেসরিজের ব্যবহারও কাটিং আর্টিস্টির আধুনিক শার্টের প্রধান বৈশিষ্ট্য। শার্টের ডিজাইন ও স্টিচের বৈচিত্র্যের জন্য মেনজ ক্লাব সব সময়ই স্বতন্ত্র। শার্টের মধ্যে রয়েছে ক্যাজুয়াল শার্ট, ফরমাল শার্ট, শর্ট শার্ট ইত্যাদি।

 

ছেলেদের পছন্দের ব্র্যান্ডগুলো যেমন প্লাস পয়েন্ট, ক্যাটস আই, মেনজ ক্লাব, ওয়েসটেক্স, এক্সট্যাসি, ট্রেন্ডস, রিচম্যান, ইজি, জেন্টেলপার্ক, ট্রেন্ডস, আর্টিস্টি, ব্যাঙ, সিলভার রেইন, সিল ইত্যাদি হাউস ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে বাজারে বেশ কিছু নতুন ডিজাইনের শার্ট এসেছে। এ ছাড়াও তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সীর শার্টের জন্য আলাদা সুনাম রয়েছে রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের। অন্যদিকে রাজধানীর মেট্রো শপিংমল, বসুন্ধরা সিটি  শপিংমল, যমুনা ফিউচার পার্ক, পলওয়েল সুপার মার্কেট, ফরচুন প্লাজা, গুলশান পুলিশ প্লাজা, প্লাজা এআর, গুলিস্তান, ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, বঙ্গবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ছোট-বড় ফ্যাশন হাউস থেকে কিনতে পারেন আপনার পছন্দের শার্টটি। ক্যাজুয়াল ও ফরমাল প্রিন্টের শার্টের দাম ফেব্রিক, ডিজাইন ও ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করে। এছাড়া বাজার থেকে শার্ট পিস কিনেও বানিয়ে নিতে পারেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর