শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিশুর বৃদ্ধিজনিত সমস্যা

শিশুর বৃদ্ধিজনিত সমস্যা

ছবি : ইন্টারনেট

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ ছেলে-মেয়ে দৈহিক বৃদ্ধির ঘাটতিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা হলে প্রকৃত অবস্থা জানা যেতে পারে। পৃথিবীব্যাপী বাড়ন্ত শিশুর বৃদ্ধিজনিত সমস্যা দৃশ্যমান। বিশ্বব্যাপী এ সংখ্যা প্রায় ২.৫ শতাংশ।

 

শিশুর বৃদ্ধিজনিত সমস্যাগুলোকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। তবে শিশুর বিশেষ বয়সের সঙ্গে তার বৃদ্ধি যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম হয় (-2 SD) তাহলে তার বৃদ্ধিজনিত ঘাটতি রয়েছে ধরে নেওয়া হয়।

 

কারণগুলোর মধ্যে—

* দীর্ঘস্থায়ী রোগ (জেনেটিক ত্রুটিসহ)

* বংশগত বৃদ্ধি ঘাটতি

* হরমোনজনিত সমস্যার কারণে বৃদ্ধি ঘাটতি

 

দীর্ঘস্থায়ী রোগজনিত বৃদ্ধি সমস্যা : যে সব শিশু খুব ছোটবেলা থেকে দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হয় যেমন— যক্ষ্যা, হাঁপানি, ম্যাল অ্যাবজরসন সিনড্রোম, দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে তাদের বৃদ্ধি নিশ্চিতভাবে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে হয় না। আবার যাদের ছোটবেলা থেকে রোগের কারণে পুষ্টির ঘাটতি হয় তাদেরও বৃদ্ধি সঠিক হবে না। জিন ও ক্রোমোজোম ত্রুটিজনিত সমস্যাসমূহের মধ্যে ডাউন সিনড্রোম, টার্নার সিনড্রোম প্রধানত চোখে পড়ে। তবে আরও কিছু সমস্যা আছে। সিস্টিক ফাইব্রোসিস নামক জিনগত ত্রুটি শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে, যা বৃদ্ধি ব্যাহত করার জন্য খুব খ্যাত।

 

বংশগত বৃদ্ধি ঘাটতি : পরিবারের শিশুর বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত হারে হচ্ছে না। এমন অভিযোগ নিয়ে যে সব অভিভাবক আসেন সে সব শিশুর সবারই যে বৃদ্ধি সঠিকভাবে হচ্ছে না তা নাও হতে পারে। কারণ একেকজনের দৈহিক বৃদ্ধির হার বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন রকম থাকে। তবে তা অবশ্যই তার পিতা-মাতা বা বড় ভাই-বোনের সঙ্গে মিলে যায়। অর্থাৎ আজকে যার বৃদ্ধি কম মনে হচ্ছে, কোনো এক সময় সেটা সঠিক হতে পারে এবং তা পূর্বপুরুষদের দৈহিক বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। আমাদের কাছে যখন শিশুর অভিভাবকরা তার ছেলে-মেয়ের অসন্তুষ্টজনক বৃদ্ধির সমস্যা নিয়ে আসেন তখন আমরা তার পরিবারে অন্য সদস্যদের বৃদ্ধির হার দেখার সঙ্গে সঙ্গে তার সমবয়সীদের সাপেক্ষে বৃদ্ধি বেশি-কম সেটাও দেখার চেষ্টা করি। যেমন দেখা হয়, সাম্প্রতিককালে বৃদ্ধির হার কি কমেছে না বরাবরই কম ছিল? তারপর শিশুর বৃদ্ধির ঘাটতিজনিত সমস্যা মূল্যায়ন করতে গিয়ে তার শারীরিক গঠন, খাদ্যাভ্যাস, পারিবারিক বৃদ্ধি-সংক্রান্ত ইতিহাস, দীর্ঘসূত্র রোগের ইতিহাস নেওয়া হয়। কারও কারও পরিবারের সদস্যদের প্রায় সবারই বৃদ্ধির ধীরগতি থাকে, আবার কারও সাময়িক বামনত্ব মনে হলেও তা শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দৈহিক বৃদ্ধি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। যাদের কোনো রোগ আছে তাদের সেগুলো নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যাদের জেনেটিক ত্রুটি আছে তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসাটা বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল হয়।

 

হরমোনজনিত সমস্যা : আবার হরমোনজনিত বেশকিছু কারণ বৃদ্ধি ঘাটতির জন্য দায়ী। গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি স্পষ্টতই বৃদ্ধি ঘাটতির কারণ হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে যে কোনো সময় ঘাটতি শুরু হওয়ার পরপরই বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। কমবয়সীদের ক্ষেত্রে যদি গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি থাকে তা শনাক্ত করে চিকিৎসা করতে পারলে ফলাফল খুবই আশাব্যঞ্জক। গ্রোথ হরমোন ঘাটতিজনিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি, চিকিৎসা ও ফলোআপ বাংলাদেশে হরমোন বিশেষজ্ঞ (অ্যান্ডেক্রাইনোলজিস্ট) দক্ষতার সঙ্গে করে আসছেন। কিন্তু গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি থাকলে চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল হয়। আবার টার্নার সিনড্রোম রোগীদেরও গ্রোথ হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়। গ্রোথ হরমোন ঘাটতি থাকলে প্রাপ্ত বয়সেও তার গ্রোথ হরমোন ইনজেকশন নিতে হতে পারে।

এ রকম একজন বিখ্যাত লোক হলেন- লিওলেন মেসি।

যাদের পুষ্টিহীনতার কারণে বৃদ্ধি ঠিকমতো হচ্ছে না তাদের অল্প বয়সে পুষ্টির সংশোধন হলে বৃদ্ধির উন্নতি হতে পারে। কিন্তু প্রাপ্ত বয়সে সংশোধন হলেও লাভ নেই। অল্প বয়সে শনাক্ত হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়।

কিন্তু বাংলাদেশের মতো আয়োডিন ঘাটতি এলাকার মানুষের জনবসতিতে ছেলে-মেয়েদের বৃদ্ধি ঘাটতি অন্যতম কারণ হলো- থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতা (হাইপোথাইরয়েডিজম)।

 

হাইপোথাইরয়েডিজমে শারীরিক বৃদ্ধির সঙ্গে মানসিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়। পৃথিবীর সব উন্নত দেশ তাদের সন্তানদের জন্মের পরবর্তী কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা জেনে নেয়। কেননা, মেধাবী জাতি পেতে হলে অতি অল্প বয়স থেকেই শরীরে থাইরয়েড হরমোনের আদর্শ মাত্রা থাকা উচিত। দুঃখের বিষয় বাংলাদেশে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। নিশ্চিতভাবে এ দেশের খাটো মানুষদের অনেকেই ছোটবেলা থেকে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিতে আক্রান্ত ছিল। আর দ্রুত শনাক্ত করে চিকিৎসা করলে এদের স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত করা যেত। একই সঙ্গে মেধারও বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারত।

 

তাই অভিভাবক বা আত্মীয়স্বজন পরিবারের নতুন সদস্যদের বৃদ্ধির প্রতি সচেতন দৃষ্টি রাখবেন। সন্দেহ হওয়া মাত্র শিশু বিশেষজ্ঞ/অনেক ক্ষেত্রে হরমোন বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হবেন। তাতে অনেক সংশোধনযোগ্য বৃদ্ধির ঘাটতির সমস্যা ত্বরিত সমাধান করে ছেলে-মেয়েদের দৈহিক স্বাভাবিক বৃদ্ধির সুযোগ অর্জন করা যেতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর