শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

সাজে পরিপূর্ণ

সাজে পরিপূর্ণ

মডেল : তাসনুভা নোভা ছবি : নেওয়াজ রাহুল - মেকওভার : স্টাইল লাউঞ্জ বিউটি সেলুন

নারীমাত্রই রূপসচেতন। আয়নায় নিজেকে দেখতে পছন্দ করেন না এমন নারী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ফলে নারীজীবনের সঙ্গে অনিবার্যভাবে জড়িত থাকে সাজ-সজ্জা। নিজের ত্বক, চুল, নখ থেকে শুরু করে সবকিছুকেই নিয়ে আসা যায় সাজের আওতায়। তবে কেবল সাজলেই হয় না, জানতে হয় এর পেছনের কৌশল। যদি উপায় জানা থাকে তাহলে কোনো প্রকার ঝক্কি ছাড়াই সাজে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠা যায়। আরও জানাচ্ছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

প্রত্যেক রূপ-সচেতন নারীর চাওয়া নিজেকে সুন্দর দেখাক। আর বিশেষ কারও প্রশংসা পাওয়ার সুযোগ থাকলে তো কথাই নেই। প্রতিদিন চেষ্টা থাকে নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপনের। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও এই চাওয়ার কমতি থাকে না। শপিং করার সময় সাজগোজের উদ্দেশ্যে খরচও করেন যথেষ্ট। কিন্তু ঠিক যেমনটি নিজেকে দেখানোর আশা করেন তা অনেক সময়ই পূর্ণ হয় না। কোথাও যেন একটু কমতি থেকে যায়। না, আপনার প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই। কমতি আছে কিছু বিষয়ে সচেতনতার।  

 

চলছে এই রোদ-বৃষ্টির আবহাওয়া। মাঝে মাঝে দুই-তিন দিন মেঘলা আবহাওয়া। তাই মেকআপ করার সময় অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এ ধরনের আবহাওয়ায় মেকআপের ব্যাপারে খুব যত্নবান হতে হয়। মুখের বেজ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে ত্বকের ধরন। জমকালো পার্টিতে যোগদানের জন্য সাজতে চাইলে ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পাউডার ফাউন্ডেশন বা মিনারেল ফাউন্ডেশন এড়িয়ে যেতে হবে। শুরুতে ত্বকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে প্যানস্টিক মুখে ও গলায় লাগিয়ে নিন। এরপর ভালোভাবে ব্লেন্ড করে ত্বকের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী মেকআপের জন্য এর ওপরে ডাস্ট পাউডার লাগিয়ে নিন। তারপর ব্রাশ দিয়ে বাড়তি পাউডার ঝেড়ে ফেলতে হবে। এবার শেষ পর্যায়ে প্যানকেক ব্যবহার করলে বৃষ্টিতে বা ঘামে তা নষ্ট হবে না। এ ছাড়া ত্বক চকচকে দেখাতে চাইলে তরল ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। এতে বৃষ্টির পানি মুখে লেগে থাকবে না। বৃষ্টিতে ভিজলেও টিস্যু দিয়ে চেপে পানি মুছতে হবে।

অপরদিকে হুটহাট হালকা সাজের জন্য এত ঝামেলা না পোহালেও চলবে। শুধু কাজল লিপস্টিকেই আপনি হতে পারবেন সুন্দর। তবে অবশ্যই মুখের উপযোগী কোনো ক্রিম লাগাতে ভুলবেন না। আর রোদে বের হতে হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। নইলে ত্বকে কালো আভা তৈরি হবে খুব সহজে। তখন যতই সাজগোজ করুন না কেন চেহারার ডার্কনেস যেতে চাইবে না। তাই বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি।

 

এই আবহাওয়াতে ঘামে ভিজে যাক আর বৃষ্টিতে ভিজে যাক, মেকআপ ভেজার আশঙ্কা সবসময়। অনেক সময় দেখা যায় আপনি খুব সুন্দর করে সেজে বের হলেন। একটু পরেই আপনার চোখের কোণে কাজল লেপ্টে গেল। তাতে সাজগোজের জন্য ব্যয় করা পুরো কষ্টটাই বৃথা যাবে। তাই কাজল, মাশকারা ও আইলাইনার অবশ্যই পানিরোধক হতে হবে। এ সময়ের জন্য জেল কাজল বেশি ভালো। চোখের নিচের অংশে কাজল আর ওপরের অংশে আইলাইনার ভালো দেখাবে। আইশ্যাডোর ব্যবহারের আগে মনে রাখতে হবে সেটি যেন ক্রিম আইশ্যাডো হয়। পাউডার বা তরল আইশ্যাডো ব্যবহার করা উচিত নয়। তাতে বৃষ্টিতে ভিজে সব সাজই নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। বর্ষার সময় পাউডার ব্লাশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গোলাপি, বাদামি বা পিচের মতো হালকা রংগুলো মানানসই এ সময়ের সাজে।

 

শুধু মুখেই মেকআপ নিলে হবে না, আপনাকে পরিপূর্ণ লুক দিতে হাত, গলা এবং পিঠের খোলা অংশটুকুও মেকআপ করতে হবে। নইলে কেমন যেন খাপছাড়া লাগবে। অপরের কাছে তো বটেই, আপনার নিজের কাছেও বিষয়টি ভালো লাগবে না। তাই মেকআপ নেওয়ার সময় অবশ্যই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। 

ঠোঁটকে আজকাল উজ্জ্বলভাবে রাঙানো অধিকাংশ নারীর পছন্দ। পুরো সাজকে ফোকাস করতে একটি লিপস্টিকই যথেষ্ট। এই সময় ম্যাট লিপস্টিক প্রথম ভরসা। আজকাল হাজারো রঙের লিপস্টিক পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এর ভিতর থেকে আপনার ত্বকের রং আর পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে বেছে নিতে পারেন। এখনকার দিনে গ্লসি লিপস্টিক বা লিপগ্লস এড়িয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। রাতের জন্য গাঢ় উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট রাঙাতে পারেন।

আসল কথা হলো, একটু বাড়তি যত্ন ও সতর্কতা নিয়ে এ সময়ের মেকআপ করতে হবে। সাজের সৌন্দর্য বেশির ভাগই নির্ভর করে আপনার চুলের ওপর। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল, মানানসই কাট এবং কিছু ক্ষেত্রে এর ভিন্নতর রং সাজকে এনে দেয় অন্যমাত্রা। অপরদিকে এলোমেলো ও রুক্ষ চুল আপনার সাজের সব আয়োজনকে বরবাদ করতে যথেষ্ট। এই মৌসুমে ধুলাবালি, ঘাম আর যখন তখন বৃষ্টিতে চুল হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ ও ভঙ্গুর। তাই যতই ব্যস্ত থাকুন তার মাঝে চুলের যত্নও রাখতে হবে। সাজের সময় চুলকে কীভাবে সেট করলে আপনার সঙ্গে মানায় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। বাসায় অবসর সময়ে চুলের নানান সাজের ট্রায়াল দিতে পারেন। যাতে বের হওয়ার সময় ঝটপট চুলকে সেট করে নেওয়া যায়। মনে রাখা প্রয়োজন, করপোরেট দুনিয়ায় আপনাকে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয়। আর এই প্রস্তুতিতে আপনার সুন্দর চুলের সেট সবসময় যোগ করবে বাড়তি নির্ভরশীলতা।

 

মুখের সাজ, চুলের সাজ সবই পারফেক্ট কিন্তু তখনো আপনি পরিপূর্ণ নন। কিন্তু কেন? কারণ হলো আপনার নখ। এত সাজগোজ করার পরও যদি নেইলপলিশ লাগাতে ভুলে যান, তাহলে অপূর্ণতা আপনাকে ছেয়ে ধরবেই। দেখাবেও বাজে। তাই ভালোমানের কিছু নেইলপলিশ রাখতে পারেন আপনার সংগ্রহে। আগের দিনে শুধু গাঢ় রঙের কয়েকটি নেইলপলিশকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। কিন্তু আজকাল তরুণীরা বেছে নিচ্ছেন রং-বেরঙের নেইলপলিশ। সবসময় যে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নেইলপলিশ পরতে হবে তার কোনো ধরাবাধা নিয়ম নেই। পোশাকের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন রঙের নেইলপলিশও এখনকার দিনে মানানসই। তবে নখে নেইলপলিশ থাকতে হবে অটুট। ট্রেন্ড হিসেবে একই হাতে দুই থেকে তিনটি ভিন্ন রং এর ব্যবহারও চোখে পড়ছে। অনেকে তো রীতিমতো নেইল আর্ট করিয়ে নিচ্ছেন। তবে এত ঝামেলায় যারা যেতে চান  না তারা এক রঙের প্লেইন নেইলপলিশ লাগিয়ে নিতে পারেন।

 

নখের সাজের কথা যখন আসে তখন তার যত্নের কথাও উঠে আসে। বর্ষার এই মৌসুমে নখ রুক্ষ হয় বেশি। তাই বর্ষায় নখের যত্ন নিশ্চিত করতে হবে। নখে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য যত্ন ও খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখতে হবে। এই সময় বিশেষত পায়ের নখের প্রতি যত্ন বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ যখন তখন পায়ে ময়লা নোংরা কাদাপানি লাগে। নিয়মিত পেডিকিউর মেনিকিউর করে নখকে সুন্দর শেপ করে কাটতে হবে।

 

সাজের সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো পোশাক। পরিপূর্ণ সাজ পেতে আপনার সঙ্গে মানানসই একটি পোশাকের আবেদনই বেশি। আজকের দিনে সব পোশাকের চল রয়েছে। তাই দেশি, ওয়েস্টার্ন বা ফিউশন যাই হোক আপনাকে বাছাই করতে হবে কোনটি আপনার জন্য মানানসই। তবে বর্ষার দিনে সাজে পরিপূর্ণতা আনতে ওয়েস্টার্ন কালেকশন বেশ উপযোগী। এই সময় এসব পোশাক সামলানো সহজ, দেখতেও ভালো লাগে।

 

আজকাল অনুষঙ্গ হিসেবে কানের দুলের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় গলার মালা। কেউ তো লকেট সর্বস্ব মালা বা পাথরের সেট বেছে নিচ্ছেন। অ্যান্টিকের চাহিদাও আছে অনেক। একই সঙ্গে হাতে দিতে পারেন পছন্দের কোনো ঘড়ি অথবা ব্রেসলেট। ছোট্ট একটি পায়েলও দিতে পারে অন্যরকম লুক। 

 

আপনার সাজের আর একটি অপরিহার্য উপকরণ হলো জুতা। স্টাইলিশ একটি জুতার কারণে আপনার একটি আলাদা ইমেজ তৈরি হতে পারে। আর পরিপূর্ণতা দেয় সাজে।

 

 

টি প স

* গায়ের রং ফর্সা হলে গাঢ় বা ডার্ক রঙের পরিবর্তে হালকা এবং প্যাস্টেল শেড ফাউন্ডেশন বেছে নিতে হবে। আই মেকআপের জন্য নীল বা বেগুনি শ্যাডো মানানসই হবে। গোলাপি বেজের নানা শেডের ব্লাশন এমন ত্বকে ভালো লাগে।

* শ্যামবর্ণে যতটা সম্ভব গায়ের রঙের কাছাকাছি শেড ফাউন্ডেশন পছন্দ করতে হবে। কমপ্যাক্ট পাউডারের চেয়ে ট্যালকম পাউডার ব্যবহারে গ্লামারাস লুক হবে। পার্টির জন্য বাদামি, গাঢ়    তামাটে আইশ্যাডো ও লিপস্টিক হবে গাঢ় রঙের।

* ত্বকের রং একদমই চাপা হলে একটু হলুদঘেঁষা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। আইশ্যাডো হবে গাঢ় অর্থাৎ বাদামি, তামাটে বা বেগুনি।

* সাজের আগে প্রথমে মুখ ধুয়ে শুকনো করে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।

* ঠোঁটে বেশিক্ষণ লিপস্টিক ধরে রাখতে একবার লিপস্টিক লাগিয়ে তার ওপর পাউডার লাগান। তার ওপর আবার লিপস্টিক লাগান।

* নখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে নেইলপলিশ। কিন্তু সবসময় লাগিয়ে রাখলে নখ ভঙ্গুর হবে। তাই ঘরে থাকার সময় নেইলপলিশ তুলে ফেলুন। প্রতিবার গোসলের পর নখে পেট্রোলিয়াম জেলি     লাগালে নখের স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।

* মাসে অন্তত একবার চুলের প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করানো উচিত। এতে চুল থাকবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।

* মেকআপটি যত যত্ন নিয়ে করা হয়, তোলার ব্যাপারেও ঠিক ততটাই যত্নবান হতে হবে।

* তুলোয় ক্লিনজার লাগিয়ে প্রথমে চোখের মেকআপ তুলে ফেলতে হবে।

* মুখের মেকআপ তুলতে হবে ক্লিনজার দিয়ে সার্কুলার মুভমেন্টের সাহায্যে। খেয়াল রাখতে হবে যেন ত্বকে অতিরিক্ত চাপ না লাগে।

* হালকা কুসুম গরম পানিতে মাইল্ড ফেসওয়াস দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এরপর বার বার ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর