শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় আলু

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় আলু

শর্করার পরিমাণ ভাতে আলুর চেয়ে বেশি। কীভাবে খাবার সরবরাহ করা হয় তার ওপরও ওই খাদ্যের ক্যালরির মাত্রা নির্ভর করে। রকমারি পরিবেশনার জন্য আলুর ক্যালরির তারতম্য হয়।

 

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আলু অন্যতম প্রধান খাদ্য। আলু সবজি জাতীয় খাদ্য হলেও মূলত শর্করা জাতীয় খাবারের জন্যই খাদ্য হিসেবে আলু ও ভাত আমাদের কাছে সমাদৃত। ছোলাহসহ ১০০ গ্রাম আলুতে থাকে ৮০ ক্যালরি। শর্করা ১৯ গ্রাম, পানির পরিমাণ ৭৫ গ্রাম, আমিষ ২ গ্রাম, চর্বি ১০ মি. গ্রাম, ফাইবার ২.২ গ্রাম। আলুতে ভিটামিন সি বেশি ২০ মি. গ্রাম/ ১০০ গ্রাম, থায়ামিন, রিবফ্লেভিন, নায়াসিন, বি-৬, যথাক্রমে-০.০৮, ০৩, ১.১ ও ২৫ মি. গ্রাম। ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস যথাক্রমে ১২, ১.৮, ২৩, ৫৭ মি. গ্রাম। পটাসিয়াম বেশি ৪২১ মি. গ্রাম, সোডিয়াম ৬ মি. গ্রাম। আলুর চোচায় খাদ্যের প্রয়োজনীয় আঁশের প্রায় অর্ধেক থাকে। ৫০%-এর বেশি খাদ্য উপাদান মূল আলুতে থাকে। আলুর খাবার সাধারণত গরম পরিবেশিত হয়, যা অধিকতর স্বাস্থ্যসম্মত।

 

বিভিন্ন খাবারের তুলনামূলক ক্যালরি হিসাব :

১০০ গ্রাম ভাতে আছে ১১৬ ক্যালরি, ১০০ গ্রাম আলুতে (ভাপে সিদ্ধ) আছে ৭৩ ক্যালরি, ১০০ গ্রাম আলুতে (পানিতে সিদ্ধ) আছে ৭৩ ক্যালরি, ১০টা আলুর চিপসে আছে ১১০ ক্যালরি, ১০টা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইতে আছে ১০ ক্যালরি, ১০০ গ্রাম আপেলে ৫৩ ক্যালরি, ১ কাপ লো ফ্যাট মিল্কে ১৫০ ক্যালরি, ১ কাপ নুডলসে ২০০ ক্যালরি, ১ পিস রুটিতে ৭০ ক্যালরি, ১ কাপ টকদইতে ১০০ ক্যালরি। সার্বিক বিবেচনায় (ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন খাদ্য হিসেবে আলু ও ভাত কাছাকাছি। খরচ হিসেবে আলু অনেক সস্তা ও কম মূল্যে এক উপকারী (সাশ্রয়ী) ভেজিটেবল প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সোর্স। আমাদের প্রতিদিনের খাবারে আলু তাই একটা সাশ্রয়ী সংযোজন হতে পারে। আলু জন্মানো সহজ, ফলন অনেক বেশি। সবকিছু বিবেচনা করেই সম্ভবত ২০০৮ সালকে জাতিসংঘ বিশ্ব আলু বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

 

মাঝারি (১৫০ গ্রাম) একটি আলু থেকে আমেরিকানদের দৈনিক খাবারের প্রোটিনের ৬%, ভিটামিন সির ৫০%, থায়ামিনের ৮%, রিবফ্লাভিন এর ২%, নিয়াসিনের ১০%, আয়রনের ৮%, ভিটামিন বি-৬ এর ১৫%, ফলিক অ্যাসিডের ৮%, ফসফরাসের ৮%, ম্যাগনেসিয়ামের ৮%, জিংকের ২%, কপারের ৮%, প্যান্টথেনিক অ্যাসিডের ৮% এবং আয়োডিনের ১৫% আসে। একটি মাঝারি আকারের আলু (১৫০ গ্রাম) প্রতিদিনের ক্যালরির ৪-৫% পেলেও আলু থেকে আমরা অনেক বেশি পরিমাণ অন্যান্য উপাদেয় ভিটামিন, ভেজিটেবল প্রোটিন, মিনারেল পাই। আলু ভক্ত কেউ যদি ২টা বা বেশি খায় তাহলে তো কথাই নেই।

 

ডায়াবেটিস ও আলু :

ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। ভাত, আলু ইত্যাদি কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট বেশি পরিমাণে খাওয়া যায়। চর্বি জাতীয় খাবার চিনি ও গ্লুুকোজ না খাওয়া ভালো। দুধ, মাংস, মাংস জাতীয় খাবার যত কম তত ভালো। কোন খাবার খেলে রক্তে কতটুকু গ্লুুকোজ বাড়ে ওই খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স দিয়ে তা বোঝা যায়। সে খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যত বেশি সেই খাবার তত বেশি গ্লুকোজ বাড়ায়। ভাত ও আলু দুটোই হাই ইনডেক্স খাবার। লাল চালের ভাত, মধু, আলু, পাকা কলা, পাকা আম, পাকা পেপের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৮০ থেকে ৯০। সাদা চালের (পোলিশড) ভাত, কর্ন, ফ্লেকস, আইসক্রিমের ইনডেক্স ১০০। আলু, গাজর, অ্যাপিকটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৮০-৯০, গম, শিমের বিচির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭০-৯০, কমলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৪০-৪৯, আপেল, ফ্যাট ফ্রি দুধের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৩০-৩৯। রক্তে গ্লুুকোজ বাড়ানোর ক্ষমতা অনুসারে আগে খাদ্যদ্রব্যকে কমপ্লেক্স ও সিম্পল এ দুই ভাগে ভাগ করা হতো, এখন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোড দিয়ে খাদ্যের গ্লুকোজ বাড়ানোর ক্যাপাসিটি নির্ণয় করা হয়। কোনো একটা খাবারের যে পরিমাণে ৫০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং সেই পরিমাণ খাবার খেলে ওই খাবার রক্তে যতটুকু গ্লুকোজ বাড়ায় তার সঙ্গে ৫০ গ্রাম পিওর গ্লুকোজ খেলে রক্তে যে পরিমাণ গ্লুকোজ বাড়ে সেটার তুলনাই হলো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স। বলার অপেক্ষা রাখে না কোন খাবার থেকে কতটুকু ক্যালরি পাওয়া যাবে তা নির্ভর করে খাবারের শর্করা ও অন্যান্য জিনিস যেমন- ফ্যাট, প্রোটিন ইত্যাদির পরিমাণের ওপর। আলু লো ক্যালরি, লো ফ্যাট ও ভেজিটেবল প্রোটিন, মিনারেল ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার। তাই সার্বিক বিবেচনায় খাদ্য হিসেবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আলু খারাপ নয়। তবে আলু কীভাবে পরিবেশন হচ্ছে সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

 

আলু ও হাইপারটেনশন :

আলুতে কুকোঅ্যামিন ও কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা ব্লাডপ্রেসার কমায়। ফোটানো (বয়েলড) আলুতে ভাজা (ফ্রাইড) আলুর চেয়ে এই কেমিক্যালস বেশি থাকে। আলুতে প্রায় শূন্য পরিমাণ ফ্যাট, পানি বেশি, আলু খেলে মোটা হয়ে যাবো এ ধারণা ঠিক নয়। আলু সাশ্রয়ী, স্বাস্থ্য-উপযোগী। তাই আলু খাবার অভ্যাস করতে হবে। বেশি করে আলু খেতে হবে। মধ্যাহ্নভোজে অর্ধেক ভাত ও অর্ধেক আলু খাওয়া যেতে পারে। হাইব্রিড শবরি কলার যুগে আমরা সাগর কলাতেই স্বাদ মেটাই, আসল শবরি কলা আর খুঁজি না। প্রয়োজন এবং বাস্তবতা সময়ের তাগিদে আমাদের অভ্যাস বদলাতে হয়েছে, হবে।

লেখক—

ডা. শাহজাদা সেলিম

সহকারী অধ্যাপক, অ্যান্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর