শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাট হাতে মাঠে

আবদুল কাদের

ব্যাট  হাতে মাঠে

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক রুমানা আহমেদ, ছবি তুলেছেন— এনাম রেদোয়ান

বাইশ গজের পিচ, হাতে ব্যাট। স্বপ্ন তার আকাশছোঁয়া। আর হবেই বা না কেন! ক্রিকেটে মেয়েদের নেতৃত্বের ভারটা যে তার কাঁধেই। ব্যাটে-বলে মাঠ মাতালেও ব্যক্তিজীবনে ক্যাপ্টেন রুমানা একেবারেই সাদামাটা। তাকে নিয়েই আজকের ফিচার।

 

প্রতিভা, অধ্যবসায় আর উত্সাহ; এই তিনে মিলে রুমানা আহমেদ। ৯ বছর আগে স্বপ্নে বীজ বুনেছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব দেওয়ার। উত্সাহ আর উদ্দীপনার শুরুটা ছিল বাড়ির পাশের মাঠ থেকেই। খুলনার খালিশপুরের মেয়ে রুমানা ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমী। কিন্তু তখনো ব্যাট-বলের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠেনি তার। বাড়ির উঠোন আর মাঠে বড় ভাইদের ক্রিকেট খেলা দেখেই দিন কাটত। নিজের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে রুমানা স্মিত হেসে বলেন, ‘আসলে আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম। ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে শিখতে শুরু করেছি। ভাইয়াদের ক্রিকেট খেলা বেশ উপভোগ করতাম। আর এসব দেখতে দেখতে কখন যে ক্রিকেটের প্রেমে পড়ে যাই বুঝতেই পারিনি। এই ক্রিকেটকে ঘিরেই আমার ভালো লাগা ভালোবাসা।’

রুমানা এসএসসি শেষ করেন খুলনার রোটারি স্কুল থেকে। এরপর এইচএসসি ইসলামিয়া কলেজে। বর্তমানে নর্দান ইউনিভার্সিটিতে অনার্স পড়ছেন তিনি। খুব বেশি দিন আগে শুরু হয়নি তার ক্রিকেট চর্চা। ‘জাতীয় দলে চান্স পাওয়ার আগে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। মেয়ে হয়ে কেন ক্রিকেট খেলছি? ঘরে বসে থাকি না কেন? এমন হাজারটা প্রশ্ন। কিন্তু সব বাধা পেরোতে পেরেছি আমার পরিবারের জন্য। ভাবলেও অবাক হবেন স্বপ্ন অনেক আগের হলেও এসএসসির পর ক্রিকেট খেলা শুরু করি। আমার ভাইবোনেরা আমায় নিয়মিত মাঠে নিয়ে যেত।’

ব্যাটিং-বোলিংয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া রুমানা অত্যন্ত পরিশ্রমী। আরলি টু বেড অ্যান্ড আরলি টু রাইজ; কথাটির পুরোপুরি স্বার্থকতা যেন তার কাছেই। খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন আর কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস রুমানার। ‘মাঠে এত পরিশ্রম, জিমে ওয়ার্কআউট; সব মিলিয়ে আমি বেশ ক্লান্ত থাকি। আর ছেলেবেলা থেকেই নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস। এ নিয়ে যদিও আমার অনেক বন্ধুই বিরক্ত। যত যাই হোক, আমি নিয়মটাকে নিয়ম হিসেবেই মানার চেষ্টা করি।’

রুমানা ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেট সম্পর্কে ধারণা রাখতেন। ৩০ ওয়ানডেতে ৬৪৯ রান, ৩৪ উইকেট বাংলাদেশে মেয়েদের ক্রিকেটে দুটিতেই তিনি সবার ওপরে। গেল বারের আয়ারল্যান্ড সফরে দেখান কারিশমা। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে প্রথম হ্যাটট্রিক করে জেতান দলকে। তার জীবনের ছোট ছোট অর্জনে ঠাসা থাকলেও বড় কোনো অর্জন কেবল একটিই, তা হলো বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব। মেয়েদের নেতৃত্বের ভারটা দেওয়া হয়েছে তার কাঁধে। এতে একটি স্বপ্নই পূরণ হয়েছে তার, ‘অধিনায়কত্ব পাওয়াটা আমার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু এটি আমার স্বপ্ন। হঠাৎ পেয়ে যাব তা কখনো ভাবিনি! নারীর চ্যালেঞ্জিং হিসেবে শুধু এতটুকুই বলব, ক্রিকেট খেলা নারী-পুরুষে বিভক্ত নয়। আমরাও বাইশ গজের পিচে খেলি আর ছেলেরাও বাইশ গজের পিচে খেলে। মাঠে আমি নিজেকে একজন ক্রিকেটার হিসেবেই উপস্থাপন করি। ছেলে বা মেয়ে হিসেবে নয়। আর চ্যালেঞ্জিং-এর ব্যাপারটি তো থাকবেই। চ্যালেঞ্জ আছে বলেই তো অর্জনগুলো মূলবান।’

মাঠে যেই রুমানা ব্যাটে-বলে গ্যালারি মাতান, প্রাত্যহিক সেই রুমানা একেবারেই সাদামাটা। সাধারণত ক্যাজুয়ালি থাকতেই পছন্দ তার। ‘সবাই চায় সুন্দর করে সাজতে। কিন্তু আমি ব্যতিক্রম। সাদামাটাই আমার বেশি পছন্দ। কিন্তু সময় এবং উপলক্ষে তো সাজতেই হয়। শাড়ির প্রতি সব নারীর আলাদা দুর্বলতা থাকলেও আমি সালোয়ার-কামিজে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গয়না পরলেও সবসময় হালকা সাজেই থাকতে ভালো লাগে।’

 

রুমানা রান্না করতে বেশ ভালোবাসেন। যদিও সবসময় রান্না করা হয়ে ওঠে না। তবে যখনই সময় মেলে তখনই পছন্দের রেসিপি তৈরি করতে দ্বিধা করেন না। ‘আমি ঢাকা থাকলে মাঝে মাঝে রান্না করা হয়। কিন্তু বাড়ি থাকলে মায়ের হাতের রান্না মিস করতে চাই না। কেননা, মায়ের হাতের পিঠাপুলি আর ভুনা খিচুড়ি ও গরুর মাংসের স্বাদই আলাদা।’ অবসর সময়টা রুমানা রবীন্দ্রপ্রেমে মজে থাকেন। রবীন্দ্র সংগীত, রবীন্দ্রনাথের বই— সব মিলিয়ে রবীন্দ্রভক্ত বলাই যায়। ‘গান আমার অনেক পছন্দ। আমি নিজেও মাঝে মাঝে গান করি। আগে অবসর সময় পেলেই সিনেমা দেখতাম। কিন্তু এখন আর সেই সময় হয়ে ওঠে না। ক্রিকেট প্র্যাকটিস করার পর গানই আমাকে রিফ্রেশ করে।’ রুমানার জীবনের শখের তালিকা খুব বেশি বড় নয়, গার্ডেনিং আর দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো। খেলোয়াড় হওয়ার সুবাদে দ্বিতীয় শখটি পূরণ হলেও সময়ের অভাবে প্রথম শখটি কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে বাড়ি গেলে ভাইয়ের সঙ্গে গার্ডেনিং-এ মজে ওঠেন এই ক্রিকেটার। নতুনদের নিয়ে রুমানার ভাবনাও অনেক, ‘তাদের ক্ষেত্রে শুধু এতটুকুই বলব, আগে নতুনদের আনা-গোনা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কেন যেন কমে গেছে। মেয়েদের এখন আর ঘরে বসে থাকার দিন নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে সামনে এগোতে হবে। মেয়েদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে ক্রিকেট একটি বড় মাধ্যম হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর