শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্কুটি কাহিনী

স্কুটি কাহিনী

♦ মডেল : আনিসা ও মারিয়া মীম ♦ ছবি : মঞ্জুরুল আলম ♦ মেকওভার : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড

কেউ শখে আবার কেউ প্রয়োজনে ব্যবহার করেন পছন্দসই স্কুটি। দীর্ঘ যানজটের পথ পেরিয়ে আপনি হয়তো দিনে একটি কাজ করেই হাঁপিয়ে উঠছেন। সেখানে একটি স্কুটি আপনাকে এক দিনে নিয়ে যেতে সক্ষম একাধিক গন্তব্যে। তোয়াক্কা করতে হবে না কোনো যানজটের বৃদ্ধাঙ্গুলিকে। তাই আপনার গতিময় এমন জীবনে কিছুটা অবদান রাখতে একটি স্কুটি যুক্ত হতেই পারে। বিস্তারিত লিখছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

তরুণ প্রজন্ম সব সময়ই নিজেকে ট্রেন্ডি দেখতে পছন্দ করে। সাজ-পোশাকের সঙ্গে ব্যবহূত অনুষঙ্গ এমনকি বাহনও হতে হবে ট্রেন্ডি। নিজেকে ফ্যাশনেবল করে তুলতে আজকাল তরুণীরা বেছে নিচ্ছেন পছন্দের একটি স্কুটি। সময় ও টাকা বাঁচানোর সুবিধা থাকায় ছাত্রী, অফিসগামী নারী বা গৃহিণী সবার কাছে গুরুত্ব পেয়েছে এই বাহনটি। বলতে গেলে সাধ্যের মধ্যেই স্কুটি কিনতে পাওয়া যায়। আবার রঙের ক্ষেত্রেও লেডিস স্কুটিগুলো হয় নজরকাড়া। তাই শখ বা প্রয়োজন যাই বলুন- মেয়েদের চাওয়া, তাদের একটা স্কুটি থাকুক। প্রথমদিকে অনেকেই ভাবতেন, মূলত আধুনিক বা সেলিব্রিটি মেয়েরাই কেবল স্কুটি ব্যবহার করেন। কিন্তু সে ধারণা গত হয়েছে অনেক আগেই। বর্তমানে সব বয়সী মেয়েরা ব্যবহার করছেন সহজলভ্য এই বাহনটি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, স্কুটি এখন শুধু ফ্যাশন নয়, প্রয়োজনও বটে। একটা সময় ছিল, কেবল এনজিওতে কর্মরত নারী বা মেয়েরা স্কুটি চালাতেন। তাও আবার নেহাত হাতেগোনা কয়েকজন। কিন্তু এখন! একটু আশপাশে তাকালেই দেখবেন রাজধানীসহ সারা দেশে যানজটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছতে মেয়েদের সঙ্গী এখন স্কুটি।

 

ঘর থেকে বের হলেই রিকশা ভাড়া ৫০-১০০ টাকা খরচ হয়তো মামুলি ব্যাপার। আবার দেখা যায় যাত্রাপথে কয়েকবার বাস, রিকশা, সিএনজি বদল করে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে। অথচ একটি স্কুটি থাকলে তা হয়তো ১০ টাকার তেলে মিটে যাচ্ছে প্রয়োজন। কোথাও যেতে দীর্ঘক্ষণ যানজটে বসে থাকতে হয় না। সময়ের কাজ সময়ে করা সম্ভব হয়।

অনেক সময় দেখা যায় যানজটে বসে থাকার ভয়ে প্রয়োজনেও কিছু জায়গায় যাওয়া হয় না। তখনো কেমন যেন অলসতা ভর করে। আপনাকে যদি ভাবতে হয়, বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে রিকশা, তারপর গাড়ি, তারপর আবার রিকশা, তারপর হাঁটা। ফেরার পথে আবার একই ঝামেলা। আর যেতে পথে অসহ্য যানজট তো থাকছেই। এমন অবস্থায় হাতে একটি স্কুটি থাকলে দূরত্ব বা যানবাহন জটিলতা কোনো ব্যাপারই নয়।

যারা খুব টাইট সিডিউলে চলাফেরা করেন, তাদের ক্ষেত্রে মাসের পর মাস আপন লোকদের সঙ্গে দেখা করা হয়ে ওঠে না। কারণ হাতে থাকা দিনের দুয়েক ঘণ্টায় তাদের কাছে পৌঁছনো আবার ফিরে আসা কঠিন। আপনার হাতে কম সময় থাকলেও স্কুটিতে চেপে চলে যেতে পারেন প্রয়োজনীয় গন্তব্যে। ফলে আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যাবে কয়েক ধাপ।

বাহন হিসেবে যে মেয়ের হাতে একটি স্কুটি আছে তার জীবনযাত্রায়ও পড়তে পারে ভিন্নরকম প্রভাব। এই যেমন ধরুন, কাজ শেষে হুট করেই বেরিয়ে পড়লেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায়। অথচ রাস্তায় যানজটের ভয় থাকলে আপনাকে রাজি করানোর সাধ্য কার? আজকাল তরুণদের কাছে সেলফ ডেট খুবই পছন্দের হয়ে উঠেছে। মনের মতো সাজগোজ করে হাতের স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন যে কেউ। পছন্দের জায়গাগুলোতে একটু ঘোরাঘুরি, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি-ফুচকা খাওয়া, দুয়েকটি সেলফি তোলা, আবার সময়মতো বাসায় ফিরে আসা নিশ্চিত করতে পারে ছোট্ট এই বাহনটি।

সবকিছু মিলিয়ে যাপিত জীবনকে আরও বেশি সহজ করা ও ভিন্নতার জোগান দিতে তরুণীদের কাছে দিন দিন স্কুটিই পরম ভরসা হয়ে উঠছে।

 

কেমন স্কুটি চাই?

লেডিস স্কুটি তৈরিতে ব্যবহার হয় হালকা মেটাল। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে কম। মোটরসাইকেলের চেয়ে স্কুটি চালানো বেশ সহজ। কিছুটা কম গতির ও পার্কের সুবিধার্থে রয়েছে ইজি সেন্টার স্ট্যান্ড। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য আছে ৯০ মিলিমিটার চওড়া অ্যান্টি স্টিড টায়ার। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার জন্য এতে আলাদা চেম্বার যুক্ত আছে। তাই শুধু জিন্স প্যান্ট আর ফতুয়া পরেই নয়, স্কুটি চালানো যেতে পারে সালোয়ার-কামিজ এমনকি শাড়ি পরেও। বাজারে লাল, নীল, সাদা, হলুদ, পিংক ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের স্কুটি পাওয়া যায়। বেছে নিতে পারেন এর ভিতর থেকে পছন্দের একটি।

 

ফ্যাশন হিসেবে স্কুটি

প্রয়োজনের পাশাপাশি ফ্যাশনেও স্কুটির জুড়ি নেই। টিনএজারদের কথা মাথায় রেখেই এটি বানানো বলে রং ও ডিজাইনে রয়েছে এর যথেষ্ট বৈচিত্র্য। প্রায় ৫০টির বেশি রঙের স্কুটি এখন বাজারে চোখে পড়ছে। তবে পিংক রংটিই নারীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে। স্কুুটি মেয়েদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও কর্মক্ষম করে তোলে। তাই সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মেয়েদের কাছে স্কুটিই এখন সেরা।

 

রকমফের

আমাদের বাজারে হিরো হোন্ডা, টিভিএস, ইয়ামাহা, মাহেন্দ্র, সুজুকিসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্কুটি পাওয়া যায়। ব্র্যান্ডের সঙ্গে সঙ্গে মডেলের রয়েছে ভিন্নতা। যেমন প্লেজার, উই গো, স্কুটি পেপ, স্কুটি টিনজ, ভেসপা, স্ট্রিক ইত্যাদি। নারীদের উপযোগী অধিকাংশ মোটরবাইকেরই ডিজাইন প্রায় কাছাকাছি ধরনের হয়ে থাকে। তবে গতানুগতিক ধারায় রঙের দিক দিয়ে পরিবর্তনটা বেশি চোখে পড়ছে। চালকের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনায় রেখে স্কুটিগুলোতে ১২০ সিসির ইঞ্জিন থাকে। তাই বাইকটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়াও টিউবলেস টায়ার থাকায় চাকা ফুটো হলেও আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার চলা যায়। এছাড়া স্কুটির রয়েছে সুবিধাজনক গিয়ার-ব্যবস্থা, যেমনটি আপনি চান।

 

সাবধানতা

স্কুটির সুবিধা পুরোপুরি ভোগ করার ক্ষেত্রে কিছু সাবধানতা মানা বাঞ্ছনীয়। ট্রাফিক আইন অনুযায়ী তো বটেই নিরাপত্তার জন্য বাইকে চালক ও আরোহী দুজনকেই মাথায় হেলমেট পরতে হবে। মাপ অনুযায়ী হেলমেট কেনা উচিত। বেশি আঁটসাঁট হেলমেট যেমন অস্বস্তির কারণ হতে পারে, আবার তেমনি মাথার চেয়ে বড় হলে এটি কপালে নেমে আসতে পারে। তাই কেনার সময়ই পরে দেখতে হবে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন কিনা। স্কুটিতে আরোহীর সংখ্যা কখনোই দুজনের বেশি হবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গেই রাখতে হবে। স্কুটি চালানোর সময় সহজে সামলানো যায় এমন পোশাক পরাই উত্তম। স্কার্ফ কিংবা ওড়না সাবধানে রাখতে হবে। লেন পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে রিয়ারভিউ মিরর ব্যবহার ভোলা যাবে না। স্কুটির গতি ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকলে স্কুটি নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে হেডফোনে গান শোনা বা কথা বলা এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।

 

স্কুটির যত্ন

যে বাহনটি আপনাকে শহরময় দুর্দান্ত গতিতে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, তারও কিছু ক্লান্তি আছে। ত্রুটি সৃষ্টি হতে পারে অথবা অযত্নে বিগড়ে যেতে পারে। তাই নিয়মিত সার্ভিসিং করাতে হবে। স্কুটিতে পর্যাপ্ত তেল বা চার্জ আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ইঞ্জিন কিংবা অন্য যে কোনো অংশ পরিষ্কার আছে কিনা সে ব্যাপারেও সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। নইলে যে কোনো সময় বিকল হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া যে কোনো সমস্যা দেখা গেলে দ্রুত সারিয়ে নিন। ব্যবহার শেষে ধুলাবালি থেকে রক্ষা করতে স্কুটির ওপর পর্দা দিয়ে রাখতে ভুলবেন না।

 

দরদাম

আমাদের দেশে স্কুটির দরদাম নির্ভর করে ব্র্যান্ডের ওপর। প্লেসারের দুটি মডেলের দাম পড়বে ১ লাখ ৩০ থেকে ৩৫ হাজারের মতো। এছাড়া টিভিএস, সুজুকি, মাহেন্দ্র ব্র্যান্ডের স্কুটি পাবেন ৯০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে। বাংলামোটর, বংশাল, তেজগাঁও, গুলশান, মিরপুরে রয়েছে বাইকের বিভিন্ন শোরুম। এখান থেকেই আপনি বেছে নিতে পারেন পছন্দের স্কুটি। এছাড়াও অনলাইনে কেনার সুবিধা তো রয়েছেই।

 

স্কুটিতে যেমন সুবিধা আছে তেমনি কিছু বিড়ম্বনাও আছে। যেমন ধরুন যাত্রাপথের মাঝে বিকল হয়ে যেতে পারে। আবার ভালোভাবে তালা লাগিয়ে কোথাও পার্ক করে কাজে গেলেন, মাথায় কাজ করতে পারে স্কুটিটি চুরি হয়ে যাবে না তো? অনেকে আবার স্কুটি রাখার গ্যারেজের সমস্যায়ও ভোগেন। আর তাই এসব বিষয় মাথায় রেখেই স্কুটি কেনা উচিত। 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর