শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পুজোর বাদ্যি বাজে

পুজোর বাদ্যি বাজে

♦ মডেল : মৌসুমী নাগ ও শোয়েব ♦ পোশাক : রঙ বাংলাদেশ ♦ ছবি : সামির খান ♦ মেকওভার : ওমেন্স ওয়ার্ল্ড

শারদীয় দুর্গোৎসব; মনের মাঝে খেলে যাওয়া এক অকৃত্রিম দ্যোতনার নাম। এরই মাঝে শরতের মৃদুমন্দ হাওয়া, আকাশে ভেসে চলা মেঘমালা, চঞ্চলমতি সাদা কাশফুল আর শিশিরভেজা শিউলিতে সেজেছে মায়ের বরণডালা। মনের মাঝে মাকে ধারণ করে অধম পূজারীরাও সেজে নিয়েছে এ বেলায়। সে সাজে যেন একটুও কমতি থাকা চলে না। তাই তো সময় যত গড়াচ্ছে মন তত আকুল হচ্ছে মায়ের মুখ দর্শনে। লিখেছেন— তানিয়া তুষ্টি

মা আসছে ধরাধামে। আর কোনো বাধা কি মন মানে? ওই শোনা যায় পুজোর বাদ্যি। মায়ের আগমনী সে বাদ্যের তালে শারদ মেঘের দল আর কাশফুলেরাও নাচছে। মন মন্দিরে পেতেছি মায়ের আসন। এখন শুধুই প্রহর গোনা আর একটাই চাওয়া— সব কাজ ফেলে, সব নেশা ভুলে শারদ প্রাতঃ, সন্ধ্যা কিংবা রাত, দেবী দর্শনেই নয়ন জুড়াক...

 

মন্দিরে পড়েছে উলুধ্বনি আর ঢাকে নাচছে কাঠি। এমন সময় মনকে নিশ্চয় বেঁধে রাখা যায় না। পরিপাটি সাজগোজে মাকে অঞ্জলি দানেই আসবে পরিতৃপ্তি। মায়ের সামনে কীভাবে যাব, সাজ কেমন হবে তা নিয়ে থাকে হাজারটা প্রশ্ন। আর তাই তো এ নিয়ে অস্থিরতাও কম থাকে না কারও মাঝে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মাঝে এমন ভাবনার জল একটু বেশিই গড়ায়। হাজার হোক ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত নিশ্চয় একই ভাবে উপস্থিত হওয়া চলে না। দেবী-দর্শন, অঞ্জলি দান, সন্ধ্যা আরতি আর আত্মীয় বাড়ি বেড়ানো নিয়ে পরিকল্পনা পায় রংধনুর সাত রং। তাই পূজার ভিন্ন ভিন্ন দিনে নিজেকে রাঙাতে চাই সবকিছু।

 

পূজার প্রথম দিন ধরা হয় ষষ্ঠীতে। দেবীর বোধনে পূজা শুরু হয়। তবে পূজা পুরোপুরি জমে উঠে সপ্তমী থেকে। এ জন্য সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর রাতে আরতি, ঘুরতে যাওয়া বা বাসায় আগত অতিথিদের ভিড় থাকে। আর তাই তো একেক দিন আপনার সাজপোশাকে থাকতে পারে ভিন্নতা। সপ্তমীতে মেয়েরা পোশাক হিসেবে বেছে নিতে পারেন চওড়া পাড়ের কাতান শাড়ি। সঙ্গে সোনা, রুপা বা ইমিটেশনের ভারী গহনা। হাত ভর্তি চুড়ি। পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবিই সেরা। সঙ্গে থাকতে পারে প্যান্ট, পায়জামা অথবা ধুতি। তবে একটু ক্যাজুয়াল ভাব থাকলেও খুব বেশি মন্দ লাগবে না। এ সময় স্বস্তির খোঁজে টিশার্টও পরতে পারেন। 

 

একটি করে দিন গড়ায় আর পূজার আড়ম্বর বাড়তে থাকে। অষ্টমীতে থাকে কুমারী পূজা। বিশেষ করে অষ্টমীতে মেয়েরা বেছে নেন লাল সাদা শাড়ি। সাজেও থাকে লালের আধিক্য। হাত ভর্তি চুড়ি, আলতা লিপস্টিকে মেয়েরা হয়ে উঠে পুরোদস্তুর রমণী। চুলের বেণিতে ঝুলতে পারে একগোছা তাজা ফুল।

 

নবমীর দিন ভরপুর খাওয়া-দাওয়া আর ঘুরে বেড়ানো। দিনের বেলা কিংবা সন্ধ্যা আরতি সব সময়ই থাকবে জাঁকজমক সাজ। আর তাই তো মেয়েদের জন্য ভারি কাজের শাড়ি, লেহেঙ্গা অথবা থ্রিপিস হবে পোশাক বাছাইয়ে উপযুক্ত। জর্জেট, কাতান বা সিল্কের শাড়িতে পুঁতি, জার্দসি, ডলার বসানো থাকলে অন্যরকম গ্ল্যামার আনবে। আজকাল সুতা ও জরির নজরকাড়া নানা কাজ থাকছে শাড়িতে। এগুলো হতে পারে যে কোনো রমণীর পূজার পোশাক। গহনা হিসেবে গলায়, কানে ও হাতে থাকবে ভারি গহনা। তবে সব সময় মনে রাখতে হবে, সাজের আধিক্যে আপনি যেন জবড়জং হয়ে না পড়েন। পায়ে থাকতে পারে মানানসই জুতা আর হাতে থাকবে ট্রেন্ডি একটি ব্যাগ। বাহ, সুন্দরী ললনার কমতি থাকল না। শাড়ির পরিবর্তে আজকাল লেহেঙ্গাও বেছে নিচ্ছে মেয়েরা। তাছাড়া ভারি কাজের থ্রিপিসে মন্দ লাগবে না। এই সময় একটু ভারি মেকআপই প্রযোজ্য। নবমীতে শেষ আরতি বলে কথা। তাই পুরুষরাও সাজগোজে কমতি যান না। পাঞ্জাবি আর ধুতিই প্রথম পছন্দ হতে পারে। পাঞ্জাবির সঙ্গে পায়জামাও খারাপ লাগবে না। তবে সঙ্গে একটি দোপাট্টা থাকলে আর কোনো কথাই থাকে না। তবে সাজের ষোলোকলা পূর্ণ করতে পুরুষের পায়ে নাগরা থাকা চাই-ই। 

শারদীয় দুর্গাপূজার প্রধান আকর্ষণ এই দশমী। এইদিনের সাজ মানে শাড়ি বা থ্রিপিসে লালের ছটা। সেখানে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি, একদম লালরঙা শাড়ি বা সাদা জামদানি আর লাল ব্লাউজে হাতের কাজের নকশা থাকলে মন্দ হয় না। সব বয়সের নারীরাই এ রংগুলো বেছে নিতে পারেন। অনেকে আবার প্রতিমার মতো করে নিজেকে সাজাতে পছন্দ করেন। জরি, পুঁতির নকশাদার জর্জেট শাড়ি হলে সাজের সঙ্গে আবহাওয়াটা মানিয়ে যায়। গোল্ডেন বা সিলভার রঙের শাড়িও মানাবে। তবে যে ধরনের শাড়িই পরুন না কেন মিলিয়ে ব্লাউজ আর ব্যবহূত অর্নামেন্টস অবশ্যই গর্জিয়াস হওয়া চাই— সঙ্গে সাজটাও। শুধু শাড়ি নয়, মাঝে মাঝে থ্রিপিস, লেহেঙ্গা বা আনারকলি স্টাইলের ড্রেসও পরা যেতে পারে। কেউ যদি একান্তই শাড়ি না পরতে চান তাহলে সাদা আর লালের মিশ্রণে কোনো সালোয়ার-কামিজও পরে যেতে পারেন। সাদা কুর্তির সঙ্গে লাল পায়জামা আর লাল ওড়নাও বেশ ফ্যাশনেবল লাগবে। সাদা শাড়ির সঙ্গে লাল নেটের ফুলহাতা ব্লাউজ খুব ভালো মানাবে। ছেলেদের সাজে ধুতি-পাঞ্জাবি অথবা পায়জামা-পাঞ্জাবিই সবচেয়ে মানানসই।

 

পূজার দিনগুলোতে সাজবে শিশুরাও। ফ্রক, লেহেঙ্গা বা থ্রিপিসে মেয়ে বাচ্চা এবং পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট-প্যান্ট অথবা টিশার্টে মানিয়ে যাবে ছেলে বাচ্চারা। তাছাড়া ম্যাচিং ফ্যামিলি ড্রেসও পাওয়া যাচ্ছে শোরুমগুলোতে। চাইলে সেগুলোও বেছে নিতে পারেন। আজকাল অবশ্য ছেলে বাচ্চাদের জন্য তৈরি পাওয়া যাচ্ছে আকর্ষণীয় ডিজাইনে পাঞ্জাবি ও ধুতি। মা-বাবার পোশাকের সঙ্গে আদরের সোনামণির পোশাকটিও মিলে যাবে রং আর ডিজাইনে।

 

 

টিপস

— দিনভর ঘোরার পরিকল্পনা থাকলে অবশ্যই সঙ্গে ছাতা রাখতে হবে। রোদ কিংবা  বৃষ্টিতে আপনাকে রক্ষা করতে ছাতা হতে পারে একমাত্র ভরসা।

— ঘোরাঘুরির সময় অবশ্যই পানির বোতল সঙ্গে রাখতে হবে। মাঝে মাঝে স্যালাইন পানি খেলে বেশি উপকার পাবেন, শরীরে সহজে ক্লান্তি ভর

    করবে না।

— হাতব্যাগে ওয়েট টিস্যু, লিপস্টিক ও কাজল রাখতে পারেন। ঘোরাঘুরির মাঝে সাজগোজ নষ্ট হয়ে গেলে তাত্ক্ষণিক ঠিক করে নেওয়া যাবে।

— স্বাভাবিকভাবে চলাচলের জন্য জুতাটি যেন আরামদায়ক হয়। নইলে জুতায় পা কেটে গেলে পুরো ঘোরাঘুরিই অস্বস্তির হয়ে যাবে।

— ব্যাগে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে একটি হাতপাখাও রাখতে পারেন। গরমে রেহাই পেতে হাতপাখার তুলনা হয় না।

— বাইরে ঘোরাঘুরির সময় খাবার-দাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। খুব বেশি ফাস্টফুড বা ভাজাপোড়া খেলে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

— পূজায় দীর্ঘ ঘোরাঘুরির সময় বাচ্চাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে।

— একটু পর পর তাদের ন্যাপি পরিবর্তন, ঘেমে গেলে মুছে দেওয়া অথবা পরিহিত পোশাকটি বদলে দিলে বাচ্চা অনেকটা স্বস্তিতে থাকবে। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর