শুক্রবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হালকা সাজ

♦ লেখা : তানিয়া তুষ্টি ♦ মডেল : নিঝুম রুবিনা ♦ ছবি : মঞ্জুরুল আলম

হালকা সাজ

শরতের নীলচে আকাশে বিরামহীন খেলা চলে সাদা মেঘমালার। তার ফাঁকে ফাঁকেই চঞ্চলমতি রোদের ঝিলিক দুষ্টু বালিকার খেয়ালি আবেশ ছড়ায়। এ সময় প্রকৃতিতে ভর করে আছে মৃদুমন্দ হাওয়া। এর প্রভাব মনেও যেমন পড়ে তেমনি সাজ-পোশাকেও পড়ে তার ছোঁয়া। সব কিছুই যেন শান্ত আর সাবলীল হওয়া চাই। কোথাও তেমন উত্তেজনার ঝাপটা থাকতে নেই। তাই রোজকার সাজ-সজ্জায়ও রমণীদের পছন্দ সেই আবেশটিই ফুটিয়ে তোলা।

 

এ সময় হালকা সাজ-পোশাকের উদ্দেশ্য স্নিগ্ধ থাকা। নিজেকেও প্রকৃতির মতো সাবলীল করে তোলা। তবে হ্যাঁ, শরৎ মানেই প্রতিদিন মেঘ-বায়ুর মেজাজ খুশ থাকবে তা নয়, মাঝে মাঝে তর্জন-গর্জন আর প্রখর রোদের দাপট তো থাকবেই। তাই যে কোনো অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নিতে হালকা সাজের বিকল্প নেই। এ সময়ে ত্বকের ট্যান অনুযায়ী প্রসাধন ব্যবহার জরুরি। পাশাপাশি সচেতন হতে হবে সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রতিও। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের জন্য ওয়াটারবেইজ সানস্ক্রিন ভালো হবে। সেই সঙ্গে বাইরের ধুলাবালি থেকে ঘরে ফিরে ভালো স্ক্রাবার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করাও খুব জরুরি।

 

নানা কাজে প্রতিদিনই ঘরের বাইরে যেতে হয়। এ সময় বাইরে বের হলে হালকা সাজ-পোশাকই সবচেয়ে আরামের। সাজের ক্ষেত্রে প্রথমেই ফেসওয়াশ দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করে নিন। এবার দুয়েক টুকরো বরফ ঘষে নিলে আরও ভালো হবে। তারপর আলতো করে মুখ মুছে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম লাগিয়ে চার থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন। এতে সানস্ক্রিন ত্বকে ভালোমতো মিশে যাবে। এবার কম্প্যাক্ট পাউডার বা মিনারেল পাউডার লাগিয়ে নিন। খেয়াল রাখতে হবে, ত্বকে যেন মেকআপটি ভালোভাবে বসে। চোখের জন্য ওয়াটার প্রুফ কাজল ও আইলাইনার উপযোগী হবে। হঠাৎ রোদ-গরমে মাশকারা ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

তাই গরমে এটি এড়িয়ে চলা ভালো। এমন দিনে চোখের সাজে শ্যাডো কিংবা গালে ব্লাশন ব্যবহার না করলেই ভালো লাগবে। চেহারার মাঝে একটি ন্যাচারাল ভাব থাকবে। ঠোঁটে এই সময় পছন্দমতো কোনো রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে নিতে পারেন। তবে ম্যাট লিপস্টিকের পরিবর্তে কিছুটা অয়েলি বা লিপগ্লস ব্যবহার করলে ভালো হবে। কারণ শরতের আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত শুষ্ক হয়ে আসে। তাই ঠোঁটে যেন টান না ধরে সেদিকটিও খেয়াল রাখা জরুরি। অনেকে ভাবেন সাজ শুধু মেকআপেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বিষয়টি ঠিক তেমন নয়। কারণ আপনি যে সাজ নিতে চাচ্ছেন তা অবশ্যই পোশাকের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়। আর সে কারণেই শরতের হালকা সাজ যদি নিতেই হয়, পোশাকের বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে। এই সময় পোশাক খুব বেশি জমকালো বা জরিবুটির কাজ না হওয়াই ভালো হবে। সেক্ষেত্রে সুতি, মোলায়েম জর্জেট, সিল্ক বা খাদির থ্রিপিস, শাড়ি, গাউন অথবা টপস বেছে নিতে পারেন। কেউ কেউ আরামদায়ক প্যান্টের সঙ্গে টপস, টি-শার্ট, ফতুয়া, শার্ট ইত্যাদিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আর এগুলোর সঙ্গে মেকআপটিও হবে খুবই হালকা। এসব পোশাকে ভারি সাজ বেমানান লাগতে পারে।

 

এ তো গেল দিনের সাজকাহন। কিন্তু রাতের পার্টি? তখন একটু ভারি মেকআপ না হলেই নয়। সেখানে আপনি পোশাকটা উজ্জ্বল রঙের বেছে নিতেই পারেন। সাজে চমক আনতে মনের মতো করে সাজাতে পারেন চোখ আর ঠোঁট। সাজের বেইজ দিনের মতো হালকাই রাখুন। তবে পার্টি লুক আনতে ব্যবহার করতে পারেন বিবি ক্রিম। মুখের অযাচিত দাগ ঢাকতে কনসিলার ব্যবহার উত্তম হবে। এরপর লাগিয়ে নিন ফেসপাউডার। পিংক, ব্রাউন টোনের ব্লাশন দিয়ে চোখে লাগিয়ে নিন মানানসই শ্যাডো। গরমে শ্যাডো গলে যাওয়া প্রতিরোধে প্রথমেই প্রাইমার লাগিয়ে নিন। উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক খুব চলছে এখন। ব্যবহার করতে পারেন ম্যাজেন্টা, লাল, চড়া গোলাপি কিংবা বেগুনি রঙের ম্যাট লিপস্টিক।

 

পার্টি লুক আনতে পোশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরাম আর স্টাইলের জন্য এ সময় বেছে নিতে পারেন সুতি কাপড়। এর পাশাপাশি চায়না কটন, কটন জামদানি, শিপন, তাঁত, খাদি কাপড়েরও কামিজ, কুর্তি, টপস পরতে পারেন। সালোয়ারের জন্য ফাইন কটন, বেক্সি পপলিন কাপড় আরামদায়ক হবে। এছাড়া জর্জেট, তাঁত, খাদি, জামদানি কাপড়গুলোও এ সময় উপযোগী হতে পারে। পোশাক শুধু আরামদায়ক হলেই হবে না, সেটা হতে হবে উপযোগী ডিজাইনেরও। এ সময় আঁটসাঁট পোশাক না পরে একটু ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। এখনকার দিনে ফুলস্লিভ, বন্ধগলা অস্বস্তিকর হতে পারে। আবার চুড়িদারের চেয়ে পালাজ্জ পরলে আরাম পাওয়া যাবে এবং ট্রেন্ডিও হবে। পোশাকের নকশাটাও বেছে নিন হালকা কাজের। সালোয়ার-কামিজে স্লিভলেস, ঘটি হাতা, ছোট হাতা এ সময়ের জন্য আরামদায়ক। তবে রোদ এড়াতে থ্রি কোয়ার্টার, ক্যাপস্লিভ, বেলস্লিভ হাতার পোশাকও পরতে পারেন। তবে ইনডোর প্রোগ্রাম হলে জমকালো পোশাকে জমকালো সাজে কোনো মানা নেই। তখন সাজ- পোশাক হতে পারে ইচ্ছামতো।

শরতের এইদিনে শাড়ির প্রতি নারীদের একটি বিশেষ আকর্ষণ কাজ করে। তাই তো সাজের সঙ্গী হতে পারে পছন্দসই রঙের শাড়ি। স্টাইল ধরে রাখতে একরঙা সুতি, কোটা কিংবা তাঁতের শাড়ির সঙ্গে পরুন চেক, কুশিকাঁটা লেস বসানো অথবা প্রিন্টের ব্লাউজ। একদম সাদামাটা শাড়িতে মূল আকর্ষণ গিয়ে ঠেকে ব্লাউজে। তাই ব্লাউজের প্রিন্ট, হাতার ডিজাইন, গলা, লেন্থ, লেস, কুচি, রঙের কম্বিনেশন সবকিছুর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আর যদি গরমে হালকা শাড়িটাকে পার্টি উপযোগী করতে চান তবে জরির কাজের চিকন অথবা চওড়া পাড় বসিয়ে নিতে পারেন। কেউ কেউ সুতির ঢিলেঢালা থ্রি-পিস, কুর্তি বা ফতুয়াতেও স্বস্তি বোধ করছেন।

সাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে অর্নামেন্টস। এক্ষেত্রে হালকা গহনা বেছে নিতে পারেন। গলায় ছোট্ট লকেটের চেইন, কানে এক পাথর বা ছোট ফুল থাকতে পারে। কেউ কেউ কাঠ, পুঁতি বা মাটির গহনা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।

 

হালকা সাজে এসব গহনা মানিয়েও যায় ভালো। হাতে ব্রেসলেট পরতে পছন্দ করেন অনেকে। সেক্ষেত্রে আপনার হাতেও শোভা পেতে পারে হালকা গড়নের একটি ব্রেসলেট। চিকন গড়নের চুড়ি পরলেও খারাপ লাগবে না। নিতান্তই এসব ঝামেলায় না যেতে চাইলে হাতের সঙ্গে মানানসই একটি ঘড়ি থাকাই যথেষ্ট। কিন্তু রাতের পার্টিতে বাছাইয়ে পরিবর্তন চলে আসবে। আপনার পছন্দের পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গহনা বাছাই করা হবে উত্তম সিদ্ধান্ত। সেক্ষেত্রে গলার মালা, কানের দুল, হাতের চুড়ি অথবা ব্রেসলেট— সবই হতে পারে ভারি এবং জমকালো।

 

প্রয়োজনীয় টিপস

— আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পোশাকের রং হালকা হওয়ায় ভালো।

 

— এ সময়কার সাজে প্রধান সহায়ক শুধু লিপস্টিক আর কাজল হতে পারে। সেজন্য ব্যাগে এ দুটি  রাখলেই অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।

 

— ত্বকের প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা ধরে রাখতে পর্যাপ্ত  পানি খেতে হবে।

 

— ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে ভিটামিন  সি এর বিকল্প নেই। তাই যতদূর সম্ভব দেশি ফল খাওয়ার অভ্যাস রাখতে হবে।

 

— শরতের শুষ্কতায় এরই মধ্যে ত্বকে টান ধরেছে। তাই ব্যবহূত প্রসাধনে এখনই পরিবর্তন আনা জরুরি।  সামান্য অবহেলায় ত্বকে দেখা দিতে পারে র‌্যাশ।

 

— রোদে বের হতে হলে অবশ্যই সান-কন্ট্রোল ব্যবহার করতে হবে। এটি ত্বকের স্থায়ী ক্ষতির হাত  থেকে বাঁচাতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর